ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর বই

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

বঙ্গবন্ধুর বই

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই, সোনার মানুষ হই’ শীর্ষক ধারাবাহিক পাঠ কর্মসূচীর অনন্য আয়োজন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার। আয়োজক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। তিন মাসের এই আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ই-বুক বা সোশ্যাল মিডিয়া কাগজে মুদ্রিত বইয়ের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক হতে পারে। বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান, সৃজনশীলতা, সহানুভূতি-সহমর্মিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি বই পড়াশোনা করেন, তারা দ্রুত, সুন্দর ও গোছানোভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখনই সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন। এমনকি কারাগারে অন্তরীণের দিনগুলোয় তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল বই। উল্লেখ্য, সারাদেশের ১০০টি বেসরকারী গ্রন্থাগারের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও পাঠক বঙ্গবন্ধুর রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি পাঠ করে লিখিতভাবে পাঠ-উত্তর প্রতিক্রিয়া ও অভিমত ব্যক্ত করার মাধ্যমে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। জাতির পিতাকে জানার দায় রয়েছে নতুন প্রজন্মের। জাতির পিতার জীবন সম্পর্কে জানার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান বিজয় সম্পর্কেই যে জানা সম্ভব হবে, তা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। প্রাচীনকাল থেকেই যেসব রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি, রাষ্ট্রদর্শন ও মানবিকতার আদর্শগত তাত্ত্বিকতায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন, তারা লেখক-বুদ্ধিজীবী ও চিন্তানায়ক হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছেন। প্রাচীন এথেন্সের রাষ্ট্রনায়ক পেরিক্লিস থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, আব্রাহাম লিংকন, ইংল্যান্ডের উইনস্টন চার্চিল, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, সেনেগালের লিওপল্ড সেদর সেংঘর, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা- সবাই-ই খ্যাতকীর্তি রাষ্ট্রনায়ক, স্বাধীনতাসংগ্রামী, মানবতাবাদী লেখক-দার্শনিক, সংস্কৃতিতাত্ত্বিক ও ইতিহাস-ব্যাখ্যাতা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাদের ধারায় বিন্যস্ত করেছিলেন নিজেকে। তারও একটি স্বকীয় রাষ্ট্রদর্শন ছিল, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছিল সংগ্রামের রণনীতি ও কৌশল। আর সে বিষয়ে দেশব্যাপী নিরন্তর জনসংযোগ, অগ্নিগর্ভ বক্তৃতা, সুচিন্তিত অমোঘ কর্মসূচী ঘোষণা, দীর্ঘ কারাবরণ ও নির্যাতন সহ্য করে দেশকে স্বাধীন করার গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। সেই দীর্ঘ কারাবরণ-কালকে তিনি অপচয় হতে দেননি। অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে লিখেছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২), কারাগারের রোজনামচা (২০১৭) ও আমার দেখা নয়াচীন (২০২০) শিরোনামের ভ্রমণকাহিনী ছাড়াও তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিবরণসমৃদ্ধ রচনা। এই লেখালেখির ফলে দক্ষিণ এশিয়ার মহান নেতা মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত নেহরু প্রমুখের মতো ভিন্নতর উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর বই পড়া কর্মসূচী নিশ্চিতই সফল হবে এবং তা থেকে দেশব্যাপী নবীন-তরুণ পাঠকের মধ্যে জাগ্রত হবে দেশপ্রেম। ভবিষ্যতে ডিজিটাল মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বইয়ে প্রকাশিত তথ্য, সত্য ও বক্তব্য নিয়ে ভিন্নধর্মী আকর্ষণীয় পরিবেশনার সৃজন ঘটবে। অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও মহান নায়কের অপরিমেয় অবদান সম্পর্কে জানা সহজ হবে। সেজন্য চাই বিশেষ উদ্যোগ ও প্রণোদনা। সেইসঙ্গে অভিজ্ঞ দক্ষ সৃষ্টিশীল ব্যক্তিদের দিকনির্দেশনা।
×