ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

বিএনপিকে সংস্কার বিরোধী’ বলে  অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: মির্জা ফখরুল 

স্টাফ রিপোর্টার: 

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ৬ জুলাই ২০২৫

বিএনপিকে সংস্কার বিরোধী’ বলে  অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: মির্জা ফখরুল 

‘বিএনপিকে সংস্কার বিরোধী’ বলে একটি মহল ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রোববার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘মিডিয়ার কিছু অংশ ও কিছু ব্যক্তিত্বরা তারা বিএনপির সংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম কথা বলছেন যেগুলো সঠিক নয়। বিএনপির কমিটমেন্ট টু রিফর্মস এটা কোয়েশন করবা্র কোনো সুযোগ নেই্। বিএনপি হচ্ছে সেই দল যে, ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ তিনি সংস্কারের কথা বলেছিলেন। তারপরে বিএনপি ’২২ সালে ২৭ দফা এবং অন্যান্য দলের সাথে আলোচনা করে ’২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি আমরা দিয়েছি। এটাতে আমরা আন্তরিক বলেই কিন্তু ৩১ দফা নিয়ে সারা দেশে অসংখ্য প্রোগ্রাম করেছি,জনগনের কাছে যাওয়া হয়েছে, সুধী সমাজ, সুশীল সমাজের কাছে যাওয়া হয়েছে, তাদেরকে বলা হয়েছে।”

আজকে একটা মহল, একটা চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কার বিরোধী বলে প্রচার করবার একটা অপচেষ্টা চালাচ্ছে।১৫ বছরের গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনের বিএনপির শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের কত কর্মসূচি, কত সমাবেশ, কত লাঠিপেটা আপনারা দেখেছেন, আপনারা কাভার করেছেন। এখন বিএনপিকে নিয়ে এই প্রশ্নটা কেনো করে?  এটাকে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ছাড়া আমি কী বলব?”

‘‘একটা গোষ্ঠি বিএনপিকে মেলাইন করা, তাকে ভুলভাবে চিত্রিত করার প্রচেষ্টা চালানো মাত্র। কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তি বা কয়েকটি গোষ্ঠি মিথ্যা প্রচারনা সমানে করে যাবেন আর সেটাতে তারা মনে করবেন জনগণ খুব সাড়া দিচ্ছে। জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। জনগণ বলতে গুটিকতক শহুরে লোক নয়, জনগণ বলতে সারা বাংলাদেশ।”

তিনি বলেন,‘‘ বিএনপি প্রমাণ করেছে, এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সংস্কার আমাদের দলের প্রতিষ্ঠা জিয়াউর রহমান করেছেন। বাক স্বাধীনতা, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, সংগঠন করবার স্বাধীনতা, সংসদীয় গণতন্ত্র, এমন কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়ে তিন তিনটা নির্বাচন সব কিছুই বিএনপি। মুক্ত বাজার অর্থনীতি, অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতকে নিয়ে আসা এবং ইমার্জিং টাইগার এই সমস্ত বিশেষনে ভূষিত হয়েছে, সব কিছুই সংস্কারের মাধ্যমে বিএনপির করেছে। এই যে ভিএটি(ভ্যাট) প্রথা এটা নিয়ে কত কথা আমাদেরকে শুনতে হয়েছে ওই সময়।”

‘‘এসব জিনিসগুলোকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া, তার সম্পর্কে বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা, এটাতে লাভ হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে চিনে, বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির সঙ্গে থেকেছে। যা কিছু ভালো অর্জন বিএনপি সেখানে থেকেছে এবং বিএনপি নেতৃত্বে দিয়েছে।”

‘যারা নির্বাচন বিলম্বিত চায় তারা গণতন্ত্রের শক্তি নয়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নির্বাচনকে যারা বিলম্বিত করতে চায়, তারা নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, তারা নিশ্চয়ই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষের শক্তি নয়।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংস্কার কমিশনে সংস্কার বিষয়ে বিএনপির কোন কোন বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে তার একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘জুলাই ঘোষণা: বিএনপির মতামত বুহ দেয়া হয়েছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে আমরা অনেক আগে প্রথম যে প্রস্তাব ছিলো আমরা আমাদের মতামত দিয়ে দিয়েছি,এটা বহু আগে দিয়েছি। তারপরে তো সরকার বলেছে তারা দায়িত্ব নিয়েছে তারা করবে। এখন পর্যন্ত তারা কিছু আনেনি।”

‘‘আমরা যেকোনো সময়ে যেকোনো ব্যাপারে আলোচনা সব সময় ছিলাম, এখনো আছি।এই ব্যাপারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ জুলাই সনদের মতামত আমরা বহু আগে দিয়ে দিয়েছি। যারা করছে না, এটা তো আমাদের দায়িত্ব না। যাদের দায়িত্ব তারা যদি কোনো কারণে বিলম্ব করে দায় বিএনপি নেবে না।এই দায় বিএনপির না।”

‘বিএনপির প্রত্যাশা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন’

সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন হতে পারে না বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে  মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলেছি, আমরা মনে করি যে, জনগণ নির্বাচন চায়, যেটা আলোচনা হয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের।”

‘‘ আমরা আশা করি যে, সেই লক্ষ্যেই দেশ এগিয়ে যাবে।”

‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল(এনসিসি) প্রসঙ্গে’ স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ আমরা পরিস্কার ভাবে বলেছি, দেশে যাতে পূনর্বার কোনো স্বৈরাচারের উৎপত্তি না হয, উৎপাদন না হয়, ফ্যাসিজমের কোনো উৎপাদনের ব্যবস্থা না থাকে সেজন্য পৃথিবীর কোনো দেশে প্রধান মন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারিত থাকার কোনো নজির নাই । এতো সত্ত্বেও আমরা বলেছি, বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের কমিটি স্ট্যাডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বহাল থাকবে না।”

‘‘এটার সাথে আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নির্বাহী বিভাগকে কার্যকর ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে তার কোনো পরিধির মধ্যে অন্য কোনো অর্গান এবং অন্য কোনো বডি সৃষ্টি করে যাতে তার (প্রধানমন্ত্রীর) কর্মকান্ডকে ব্যাহত না করে সেজন্য আমরা এনসিসি জাতীয় কোনো ধারণার সাথে একমত হয়নি। এটাই ছিলো আমাদের শর্ত।”

তবে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘ আমরা আশা করি আমরা একটা ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারব। আলাপ-আলোচনা হচ্ছে তবে দীর্ঘ আলোচনা কাম্য নয়।এ বিষয়ে সবার সাথে আলোচনা করে খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো, সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে ঐক্যমত্যে আসা যাবে। আমরা আশাবাদী।”

‘সংখ্যানুপাতিক ভোট(পিআর) প্রসঙ্গে’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ যারা এই ব্যবস্থা চাচ্ছে আপনারা কি তাদের কাছে শুনেছেন তারা কেমন পিআর পদ্ধতি চায়? গণতন্ত্র যেমন একটা কনসেপ্ট। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র বিভিন্নখভাবে অনুশীলন হয়, আমেরিকায় যেভাবে হয় ইংল্যান্ডে সেইভাবে হয় না, ফ্রান্সে যেভাবে হয়, ভারতে তো সেইভাবে হয় না, শ্রীলংকায় যেভাবে হয় বাংলাদেশে তো সেইভাবে হয় না, একেক দেশে একেক রকম পদ্ধতি আছে গণতন্ত্র কার্য্কর করার।”

‘‘ তেমনি পিআর হলো একটা কনসেপ্ট একটা ধারণা, এটা বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে কার্যকর হয়। এখন যারা পিআরের কথা বলছেন তারা কিভাবে পিআর বাস্তবায়ন হবে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলছেন না। তাহলে এই সম্পর্কে একটা অসস্পষ্ট ধারণাই থেকে যাচ্ছে। এটা আলোচনার জন্য আলোচনা হচ্ছে। আমরা মনে করি যে, এই রাষ্ট্র জনগণের সিদ্ধান্ত নেবার মালিক জনগণ।”

ইভিএম পদ্ধতির কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা শুধু কিভাবে ভোটটা দেবো এজন্য একটা ইভিএম পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল সবার মনে আছে। কতবছর হল? এই ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার জন্য অনেক প্রচার-প্রচারণা হয়েছে, যারা এই পদ্ধতি কার্য্কর করবে তাদের প্রশিক্ষন হয়েছে, সেই প্রশিক্ষনে যারা গেছেন তারা যে ভাতা নিয়েছে আপনারা দেখেছেন এই নিয়ে দুর্নীতির অভিয়োগও হয়েছে। আবার তাদের মাধ্যমে সারাদেশে জনগণকেও প্রশিক্ষিত করার চেষ্টা হয়েছে।তারপরও আজ পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতি কার্য্কর হয় নাই। শুধু কিভাবে ভোটটা দেবে সেটাই।”

‘‘আর পিআর পদ্ধতি হলো গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বদলে দেওয়া। এ নিয়ে জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে আপনাদের কারো, এই সম্পর্কে জনগণকে কেউ অবহিত করেছে এবং কি এই নিয়ে আপনাদের সাথে কিংবা সুশীল সমাজ বলেন কিংবা প্রতিনিধিনিত্বশীল যেসব প্রতিষ্ঠান বলেন এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের যেসব সংগঠন আছে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয় নাই। এটা(পিআর) অত্যন্ত একটা প্রাথমিক পর্যায় আছে। ফরমালি এ নিয়ে আলোচনা জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে শুরুই হয় নাই। অথচ এ নিয়ে আমাদের কিছু কিছু সহকর্মী বলছেন, এটা হতেই হবে না করলে ইলেকশনই করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মানেটা কি?”

নজরুল বলেন, ‘‘ আমাদের মহাসচিব বলেছেন, আমরাই সংস্কার বেশি চাই। আমরাই বেশি সংস্কার করেছি।যুগান্তকারী যেসব সংস্কার বাংলাদেশে এটা আমরা করেছি। উনার কেউ যখন সংস্কারের ‘স’ উচ্চারণ করেনি তখন আমরা পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সেই বিএনপিকে অভিযুক্ত করে এটা খুবই অন্যায়।”

‘‘এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটা ভালো না। আমরা রাজনীতি করি, সমালোচনার মুখোমুখি হতে রাজি আছি। কিন্ত ‍রাষ্ট্র এবং এই যে লাখো শহীদ মুক্তিযুদ্ধে এবং হাজারো শহীদ বিভিন্ন আন্দোলনে বিশেষ করে ’২৪ এর অভ্যুত্থানে তাদের আকাংখার সঙ্গে সংহতিপূর্ণ হতে হবে রাজনৈতিক দলের কার্য্ক্রম। যেকোনো একটা সিষ্টেম চালু করতে হলে জনগণের সম্মতি নিতে হবে। আমরা যেটা মনে করি, খুব চিন্তাভাবনা করে বড় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়, এটা কোনো বিশেষ দলের সুবিধা হবে এই রকম সিষ্টেমে সেকারণে করতে হবে…এটা হয় না। চেষ্টা করতে হবে যেটা জনগণের সুবিধা হবে সেটা ।”

‘পিআর ভোট: তারা জানবে না তার প্রতিনিধি কে”

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ পিআর একটা সিষ্পেল কথা। যারা ভোট দেবে তারা কেউ জানতে যে, তার প্রতিনিধি কে হবে? হয় এটা।কিন্তু তারপরও বিষয় যখন আসবে আমরা আলোচনা করব। আমাদের আলোচনা করতে কোনো বাধা নয়। আমাদের প্রতিনিধিরা সারাদিন আলোচনা করছেন। অন্যান্য দলের প্রতিনিধিদের বক্তব্য তারা শুনছেনও।”

‘বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘কোনো উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে এটা বুঝা দরকার। আমরা আগেই বলেছি, বিএনপি পরীক্ষিত রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক দল।আজকে আবার জোর  দিয়ে বলতে চাই বিএনপি একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল । এখানে কিন্তু আমাদের কোনো রাগ-ঠাগ নেই খুব সোজা কথা। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যেতে চাই । আমরা কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে বা অন্য কিছুর মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাই না।”

‘‘আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকার প্রশ্নই উঠতে পারে। আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি একটা মাত্র উদ্দেশ্যে যে আমরা গণতন্ত্রের ফিরে যেতে চাই, গণতন্ত্র ধবংস করে দিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার, আমরা গণতন্ত্র ফিরে যেতে চাই। তার প্রাথমিক কাজটা হচ্ছে আমরা আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই, বাক স্বাধীনতা চাই, বিচারের অধিকার ন্যায় বিচার চাই।”

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×