ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সকল সরকারী অফিস যাবে এক জায়গায়

চট্টগ্রাম মহানগরকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

চট্টগ্রাম মহানগরকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর উদ্যোগ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সড়ক যোগাযোগ ও নাগরিক সুবিধার উন্নয়নের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। রক্ষা করা হবে পাহাড়, সাগর ও নদীবেষ্টিত এই শহরের স্থাপত্য নিদর্শন। প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম আগের রূপে ফিরিয়ে নিতে ছক অনেকটাই প্রস্তুত। নগরজুড়ে এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় সকল সরকারী দফতর নেয়া হবে একটি জায়গায়। গড়ে তোলা হবে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ মাঠে গড়িয়েছে। সার্বিক বিষয় মনিটর করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই এসেছে অনুশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আসেন। তিনদিন অবস্থান করে তিনি প্রত্যক্ষ করবেন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এলাকাগুলো। প্রথম দিন তিনি ঘুরে দেখেন মীরসরাইয়ে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ও সীতাকুÐের গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে প্রস্তাবিত পর্যটন এলাকা। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবারও তার বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে। এ সময় তিনি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ও করবেন। বিলম্বে হলেও চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি পরিকল্পিত অবয়বে নিয়ে আসতে বড় ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় কাজটি হবে সরকারী ৪৪টি দফতরকে এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এতে সেবা গ্রহীতাদের ছোটাছুটি করতে হবে না নগরীর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। একই এরিয়ার মধ্যে পাওয়া যাবে সকল সরকারী অফিস। এতে হয়রানি মুক্তির পাশাপাশি দাফতরিক কাজেও আসবে স্বাচ্ছন্দ্যভাব। আদালত ভবনখ্যাত পরীর পাহাড়কে প্রতœতাত্তি¡ক এলাকা ঘোষণা করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে, এমনই বলছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের পরীর পাহাড় এক সময় ছিল খোলামেলা পরিবেশে নিঃশ^াস গ্রহণের জায়গা। সেখান থেকে বড় বড় গাছের শেকড়ে বসে অবলোকন করা যেত কর্ণফুলী নদীর সাম্পান আর ছোটখাটো লাইটার জাহাজ। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব নয়। পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে শুধু কোর্ট বিল্ডিং রেখে বাকি সকল অফিস অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার। পরীর পাহাড়ে এখন আদালত ভবন ছাড়াও রয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বেশকিছু সরকারী অফিস। সরকারী দফতরসমূহ সরিয়ে নিয়ে পাহাড়টিকে হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। সেখানে নতুন কোন স্থাপনা নয়, বরং অনেক কিছু সরাতে হবে, যা এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন। কোর্ট বিল্ডিং হিসেবে খ্যাত পরীর পাহাড়ে থাকবে শুধুই আদালত ভবন, যেমনটি ছিল শতবর্ষ আগে। কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ের আদলে নির্মিত আদালত ভবন সংরক্ষণ করা হবে অবিকল নক্সায়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, কর্ণফুলীর তীরে কালুরঘাটের কাছাকাছি বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনির্ভাসিটি সংলগ্ন ৭৩ একর জায়গায় স্থান পেতে পারে প্রায় সকল সরকারী দফতর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যেই ‘সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণের নির্দেশনা এসেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৪৪টি সরকারী অফিস সেখানে চলে যাবে। সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পের নক্সার খসড়া হয়েছে, যা চূড়ান্তভাবে শীঘ্রই। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরীর পাহাড়কে প্রতœতত্ত¡ স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণের প্রক্রিয়ায় ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতœতত্ত¡ অধিদফতরের উপপরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান এই কমিটির আহŸায়ক। অপর দুই সদস্য হলেন আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান ও সহকারী স্থপতি মাহফুজ আলম। কমিটির সদস্যরা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পরীর পাহাড় পরিদর্শন করবেন। সেদিনই একটি মতামত পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব \ বৃহস্পতিবার তিনি পরিদর্শন করেন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রোডাক্ট লিমিটেড, জুজু জিনউয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড, এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ডিকার ইলেক্ট্রিক্যাল লিমিটেড, টেকনো ইলেক্ট্রিক্যাল লিমিটেড, বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা মাল্টিস্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, বসুন্ধরা রেডিমিক্স এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের নির্মাণাধীন কারখানাগুলো। এছাড়া তিনি আরমান হক ডেনিম লিমিটেড, বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, হেলথ কেয়ার ফার্মা এবং সামুদা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের চলমান কার্যক্রমও পরিদর্শন করেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস তিন দিনের চট্টগ্রাম সফরকালে আরও পরিদর্শন করবেন দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থান, মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন বে-টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা।
×