ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এডিবির পূর্বাভাস

জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বেশি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি এখন বলছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। তবে এর আগে তারা বলেছিল প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হারে। বুধবার প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের (এডিও) হালনাগাদ প্রতিবেদনে নতুন এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এডিবি। এডিবির এই প্রতিবেদনের সেপ্টেম্বর আপডেটে গত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে, যা আগে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছিল এই ঋণদাতা সংস্থা। এডিবি ঢাকা কার্যালয়ের বহির্সম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বর বলেন, ‘প্রতি বছর এপ্রিলে যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ করা হয়ে থাকে, পরে তার তিনটি আপডেট রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। একটি করা হয় জুলাইয়ে। পরেরটা প্রকাশ করা হয় সেপ্টেম্বরে। আর সর্বশেষটা প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বরে।’ তিনি জানান, পরের তিনটি প্রতিবেদনকে সম্পূরক প্রতিবেদন বলা হয়। সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই কমিয়েছে এডিবি। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সম্মিলিত প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ এপ্রিলের ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে। প্রক্ষেপণ কমিয়ে আনার মূল কারণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ, যা এ বছর পুরো দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দারুণভাবে ব্যাহত করেছে। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের প্রাদুর্ভাবে এ বছরও কয়েক দফা লকডাউনের বিধিনিষেধ দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি টিকাদানের ধীরগতির কারণেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কাক্সিক্ষত গতি পাচ্ছে না বলে এডিবি মনে করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব দেশে টিকাদানের গতি সবচেয়ে ধীর, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এদিক দিয়ে নেপাল, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটানের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘জীবিকা রক্ষায় সরকারের নীতি বাংলাদেশে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশ এই কঠিন সময়ে প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি। ‘বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, প্রণোদনা কর্মসূচী ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর কার্যকর বাস্তবায়ন প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা, দ্রæত টিকা দেয়া এবং দেশীয় সম্পদ আহরণ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে।’ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উদ্যোগের প্রশংসা করে মনমোহন বলেন, ‘ব্যবসার প্রতিযোগিতা, বিদেশী বিনিয়োগ, রফতানি বৈচিত্র্য, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য ধারাবাহিক সংস্কার বেসরকারী খাতের বিনিয়োগকে উদ্দীপিত করবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করবে।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারী পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল। অর্থবছর শেষে গত আগস্টে পরিসংখ্যার ব্যুরোর প্রাক্কলনে তা আরও কমে আসে। মহামারীর শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।
×