ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের কোন জলাশয় অব্যবহৃত থাকবেনা ॥ মৎস্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশের কোন জলাশয় অব্যবহৃত থাকবেনা ॥ মৎস্যমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল এমপি বলেছেন, ‘ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছেন। দেশের যে প্রান্তেই ইলিশ বাড়ানো যায় কিংবা বাচ্চা দিতে পারে সকল বিষয়গুলোকে আমরা বিবেচনার ভিতরে রেখেছি। আমাদের টার্গেটটা হচ্ছে বাংলাদেশের কোন জলাশয় অব্যবহৃত থাকবেনা। যেখানে যে প্রকৃতির মাছ উৎপাদন করা যায় আমরা তার উৎপাদনে সকল সহায়তা করব। আন্ধারমানিক নদীসহ যেসব নদীতে আগে ইলিশ ছিল, এখন নেই, কেন নেই তা আমরা গবেষণা করছি। কোন কোন জায়গায় নদীর পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে, গভীরতা কমে যাওয়া, সেসব রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইলিশ যেখানে ডিম ছাড়ে সেই সময় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা, নানা প্রাকৃতিক পরিবেশের কারনে ইলিশ তার স্থান পরিবর্তন করে। যেখানে ইলিশ একসময় ছিল সেখানেই আবার যাতে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো যায় তার ব্যাপক পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। আশা করি অতীতের মতো এই অঞ্চলে আবার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অবরোধকালীন সময় ভারতীয় জেলেদেও ইলিশ ধওে নেয়ার বিষয় এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমরা ভারতের যে প্রান্তের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রান্তের সংযুক্ত রয়েছে। আমরা একই সময় যাতে মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখা যায় সেই প্রক্রিয়া কার্যকর করা শুরু করেছি। ভারতীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয় কথা হয়েছে। অদুর ভবিষ্যতে এ সমস্যা আর থাকছে না।’ সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী উপকেন্দ্র কলাপাড়ায় নবনির্মিত তিনতলা অফিস কাম গবেষণাগার ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেছেন। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএফডিসির চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব কাজী হাসান আহমেদ, সচিব মুহাম্মদ হরুন-অর-রশীদ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক জামাল হোসেন মজুমদার, বিএফডিসির পরিচালক (অর্থ) মঞ্জুর হাসান ভুইয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান, কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ উপকূলে সী উইড চাষ এবং সী উইড জাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কলাপাড়ায় ইনস্টিটিউটের নদী উপকেন্দ্রে অফিস কাম গবেষণাগার ভবন নির্মান করা হয়েছে। এরপরে মন্ত্রী কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য বন্দর মহিপুর এবং আলীপুরে বিএফডিসির নবনির্মিত মৎস্য অবতরন কেন্দ্র দু’টির উদ্বোধন করেন। মন্ত্রী সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, জেলেদের আহরিত ইলিশসহ সকল মাছের গুনগত মান রক্ষা কওে বিক্রি করতে পারবে তার জন্য অবতরন কেন্দ্রে সকল সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। মহিপুর এবং আলীপুরে মৎস্য অবতরন কেন্দ্র উদ্বোধনকে ঘিরে জেলে ও ট্রলার মালিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় মহিপুরে এক একর ৯ শতক জমির ওপর এবং ১৫ কোটি টাকা ব্যয় আলীপুরে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। দুটি অবতরন কেন্দ্রে রয়েছে ৪০ কক্ষের আড়ত ভবন। ১০ হাজার বর্গফুটের একটি করে অকশন শেড। দুই হাজার বর্গফুটের একটি করে প্যাকিং শেড। একটি করে পর্যবেক্ষণ কক্ষ। একটি করে বিদ্যুত উপকেন্দ্র। ১০টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বরফকল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন। একটি করে পাম্প হাউস। দুইটি করে নিরাপত্তা কক্ষ। একটি করে গণ সৌচাগার। সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের ট্রাক পার্কি এরিয়া। একটি করে গ্যাংওয়ে ও পন্টুন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আলীপুর অবতরণ কেন্দ্রে দুইটি অকশন শেড বেশি নির্মাণ করা হয়েছে। দু’টি অবতরন কেন্দ্রে দুইজন ব্যবস্থাপকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রয়েছে চারজন বরফকল অপারেটর। এই দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চালু হওয়ায় জেলেরা আহরিত মাছের গুনগত মান পরীক্ষা করে বাজারজাত করতে পারবেন। এছাড়া মাছ বাছাইকরণ, গ্রেডিং করা, পাইকারি বিক্রির সুবিধা, প্যাকিং সুবিধা ছাড়াও ট্রাকে তুলে মাছ দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করতে পারবেন। যানবাহন চলাচলের জন্য মহিপুরে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় ৮০০ মিটার আরসিসি সড়ক এবং আলীপুরে ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয় ৪০০ মিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৎস্য অবতরন কেন্দ্র দু’টির উদ্বোধনকে ঘিরে জেলেরা ছিল উৎফুল্ল।
×