ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংসদ অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

নিঃসন্দেহে জিয়া জড়িত ॥ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা

প্রকাশিত: ২২:১৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিঃসন্দেহে জিয়া জড়িত ॥ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল পুনরুল্লেখ করে বলেছেন, ’৭৫-এর হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত, এতে তো কোন সন্দেহ নেই। মামলায় আমি তাঁকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। তখন আমাদের হোম সেক্রেটারি ছিলেন রেজাউল হায়াত, তিনি বললেন- মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। আমার মনে হয় নামটা থাকা উচিত ছিল। জিয়া যে ষড়যন্ত্রে জড়িত, সেটা ফারুক-রশিদ নিজেরা বলেছে, বিবিসিতে ইন্টারভিউতে। এ্যান্থনি মাসক্যারেনহাসের বইতে আছে, লরেন্স লিফশুলজের বইতে আছে- কীভাবে অস্বীকার করবে?’ জিয়াউর রহমানের আমলে প্রত্যেকটি কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে রেকর্ড থেকে সেগুলো খুঁজে বের করার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিডিয়াতে কি লিখল, আর টকশোতে কি বলল- ওসব নিয়ে আমি দেশ পরিচালনা করি না, আমি দেশ পরিচালনা করি অন্তর থেকে। কে কি বলল ওটা শুনে হতাশ হওয়া বা উৎসাহিত হওয়া আমার সাজে না, আমি করি না- এটা হলো বাস্তবতা। চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের লাশের নামে চট্টগ্রাম থেকে একটি বাক্স সাজিয়ে-গুজিয়ে আনা হয়েছিল। ওই বাক্সে লাশ রয়েছে কি না জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা মীর শওকত আলী ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে বলেছিলেন- লাশ কোথায় পাব? স্পীকার ড. শিরীর শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চতুর্থদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের অনুপস্থিতিতে উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের সমাপনী বক্তব্য রাখেন। এরপর স্পীকার সংসদ অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে শোনান। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাই যাতে টিকা পায় আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে টিকা দেয়া হবে। ভ্যাকসিনের কোন সমস্যা নেই। ২৪ কোটি ডোজ টিকা আমরা কিনবো। ভ্যাকসিন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। আমাদের দেশে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য চুক্তি হয়েছে। সেখানেও ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হবে। দেশ পরিচালনা করি অন্তর দিয়ে ॥ সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিডিয়াতে কি লিখল বা টকশোতে কি বলল- ওসব নিয়ে আমি দেশ পরিচালনা করি না, আমি দেশ পরিচালনা করি অন্তর থেকে। আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু) এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এই দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য বছরের পর বছর তিনি জেল খেটেছেন। নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন। সেই মানুষগুলোর জন্য কি কাজ করতে হবে, যেটা শিখেছি আমার বাবার কাছ থেকে, মায়ের কাছ থেকে- আমি সেটাই কাজে লাগাই। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে কি না সেটা যাচাই করি। কে কি বলল ওটা শুনে হতাশ হওয়া বা উৎসাহিত হওয়া আমার সাজে না, আমি করি না। এটা হলো বাস্তবতা। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের মানুষের একটা বদঅভ্যাস হয়ে গেছে কথায় কথায় হতাশ হওয়া। আর যতই কাজ করি তারপরেও বলবে এটা হলো না কেন, ওটা হলো না কেন? আমি তাদের একটু বলব; এটা না বলে আগে কি ছিল আর কি আছে, সেটা দেখলেই তো হয়ে যায়। সেটা দেখতে পারবে না? তিনি বলেন, কিছু লোক তো আছে যাদের কাছে- যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। এই অবস্থায় কিছু লোক ভোগে। আর কিছু লোক আছে তারা হতাশায় ভোগে। তিনি বলেন, দেশের এই দরিদ্র মানুষের জন্য আমার বাবা বঙ্গবন্ধু বছরের পর বছর জেল খেটেছেন, নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন। সেই মানুষগুলোর জন্য কি কাজ করতে হবে সেটা আমি মনে করি যেটা শিখেছি আমার বাবা-মায়ের কাছে সেটাই কাজে লাগাই। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে কি না সেটা যাচাই করি। আমি দেশ পরিচালনা করি আমার অন্তর থেকে। কারাগারে কত ফাঁসি হয়েছে খুঁজে বের করুন ॥ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, জিয়ার আমলে প্রত্যেকটা কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে, তার রেকর্ড তো থেকে যায়। সেগুলো একটু খুঁজে বের করে দেখেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের সংসদ সদস্যদের একটা উদ্যোগ নেয়া উচিত, জিয়ার আমলে প্রত্যেকটা কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা এবং কুমিল্লায়। একটার পর একটা ক্যু আর শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সেগুলো একটু খুঁজে বের করে দেখেন। সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর কত শত সৈনিক-কর্মকর্তা এবং মানুষকে সে সময় হত্যা করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো তো থেকে যায় (রেকর্ড) সেগুলো একটু খুঁজে বের করে দেখেন। একেক রাতে ফাঁসি দিতে দিতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল, এখনও এরকম লোক আছে। এ সময় বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। এদের কাছে জ্ঞানের কথা, আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়। অথচ আমি আমার বাবা-মা হত্যার জন্য মামলা করতে পারিনি। আমার কোন অধিকার ছিল না। তাঁর নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা তুলে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিযে নিয়ে যাব এবং বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে জনগণের কল্যাণ হয়। সেই কল্যাণই হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াই জড়িত ॥ জিয়াউর রহমান যে ’৭৫ এর জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত সেই অভিযোগ পুনরায় উত্থাপন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সে ’৭৫-এর হতাকান্ডের সঙ্গে যে জড়িত এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি তাকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। তখন আমাদের হোম সেক্রেটারি ছিল রেজাউল হায়াত, সে বলল মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। কিন্তু আমার মনে হয় নামটা থাকা উচিত ছিল। তিনি বলেন, জিয়া যে ষড়যন্ত্রে জড়িত তাতো ফারুক-রশিদ নিজেরাই বলেছে বিবিসির ইন্টারভিউতে। তিনি বলেন, এ্যান্থনি ম্যাসকারহানসের বইতে আছে, লরেন্স লিফশুলজের বইতে আছে। কিভাবে অস্বীকার করবে? আর তাই যদি না করে তাহলে স্বাধীনতার পর যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল তাদের সে (জিয়া) ছেড়ে দিল কেন? এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ৭ খুনের আসামিকেও মুক্ত করে দিল। এমন বহু ঘটনা সে ঘটিয়েছে। জিয়া সেই সব খুনীকে নিয়েই পরে দল করল। তিনি বলেন, যারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে এদেশে অগ্নিসংযোগ হত্যা, খুন ধর্ষণ করেছে তাদের এই জিয়া মন্ত্রী, উপদেষ্টা করে সংসদে বসাল। জাতির পিতার খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করল আর তার থেকে এক ধাপ উপরে গিয়ে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া কর্নেল রশিদ এবং হুদাকে এমপি বানিয়ে সংসদে বসাল। এই তো তাদের চরিত্র। যে খুনী, সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদ, যুদ্ধাপরাধী, ধর্ষণকারী এদের নিয়েই তাদের চলাফেরা। গোলাম আযম পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে চলে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান তাকে ফেরত নিয়ে এলো। জিয়াউর রহমানের নির্বাচন, ’৭৭ এর হ্যাঁ, না ভোট, ’৭৯ এর নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচিত্রা তখন সরকারী পত্রিকা সেখানে উঠল আওয়ামী লীগ ৪০টি সিট পাবে। অথচ তখন দল বলতে বাংলাদেশে একটাই ছিল আওয়ামী লীগ। মানুষের ভোট ধ্বংস করে ভোটের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্টটা জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে করেছে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে লোন শোধ না করার কালচার তার শুরু করা। মানুষকে দুর্নীতিবাজ করা। মেধাবী ছাত্রদের এক হাতে পুরস্কার দিয়েছে অন্য হাতে তাদের অস্ত্র, অর্থ তুলে দিয়ে বিপথে পাঠিয়েছে। জিয়া আসলে বহুদলীয় নয়, দেশে কার্ফু গণতন্ত্র দিয়েছে বলেন প্রধানমন্ত্রী। চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ প্রসঙ্গে ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জিয়ার কবর (সংসদের সীমানায় থাকা) নিয়ে কথা উঠেছে। জিয়ার মৃত্যু সংবাদের পর তার লাশ পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। আর কয়েকদিন পরে একটা বাক্স আনা হলো। তিনি জেনারেল এরশাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কারো পরামর্শে এটি করা হয়। সাজিয়ে-গুজিয়ে একটা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হলো। তখন এই সংসদে বারবার প্রশ্ন এসেছে। যদি লাশ পাওয়া যায় তবে লাশের ছবি থাকবে না কেন? তিনি বলেন, মীর শওকত (মীর শওকত আলী বীরউত্তম) সেই লাশ শনাক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে চেনার কারণে প্রধানমন্ত্রী একদিন তাঁকে যে প্রশ্ন করেন তার উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তিনি। মীর শওকতকে বলেছিলাম- সত্যি কথা বলেন তো, সে জবাবে বলেছিলেন লাশ কোথায় পাব? এমনকি জেনারেল এরশাদকে বারবার এবং মৃত্যুর কিছুদিন আগেও আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম- ‘আপনি যে বাক্স নিয়ে আসলেন লাশটা কোথায় পেলেন?’ জবাবে এরশাদ বলেন- ‘বোন, লাশ পাব কোথায়?’ আর কি বলব। কাজেই আজকে যে কথাটা উঠেছে তখন সেটা আমরা বারবার জানতে চেয়েছি এবং তখন যে বিএনপির নেতারা ছিল, তারা কি করে গেছে সেটা আপনারাই দেখেন। স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কে যা বললেন ॥ বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিই ইতিহাস ফিরে আসে। জাতির পিতার নাম একদিন মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হয়েছিল এমনকি ৭ মার্চের ভাষণটি পর্যন্ত এদেশে বাজাতে দেয়া হতো না। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ যখন সারাদেশে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছিল চট্টগ্রামেও ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছিল। জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তানী সেনাদের হয়ে যারা ব্যারিকেড দিয়েছিল (মুক্তিযোদ্ধা) তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। পাকিস্তানের সেনাদের পক্ষে এরপর সে গেল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। সেখানে পাবলিক ঘেরাও দিয়ে তাকে আটকাল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার যে স্বাধীনতার ঘোষণা সেটা তৎকালীন ইপিআর ওয়্যারলেস এবং পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে গেল। যে সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়েছিল সেই নেতারা সেটা সংগ্রহ করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিল। জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ছিল সেখানে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। যে কারণে সবথেকে বেশি মানুষ মারা গেছে সেখানে। এখনও ভাটিয়ারিতে সেই গণকবর রয়ে গেছে। সে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত দিত আমাদের সোলজাররা সেটার ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু সেটা সে করে নাই। যেটা অন্যেরা করেছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান করে নাই। সরকারপ্রধান বলেন, ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় জিয়াউর রহমান কেবল স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেছিল। আর এই সংসদে যখন প্রশ্ন উঠল স্বাধীনতা দিবস ২৬ তারিখ আর জিয়া ঘোষণা দিয়েছে ২৭ তারিখ- তখন ইতিহাস বিকৃতিকারীরা সেই ২৭ তারিখকে ২৬ তারিখ বানিয়ে ফেলল। অথচ ২৬ তারিখ তখন জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিল। তিনি বলেন, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এই দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার সব ব্যবস্থা করে দেশ স্বাধীন করেছেন, সেখানে একজন মেজরের কথায় সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল আর দেশ স্বাধীন করে ফেলল, তাও কখনও হয়। আর বঙ্গবন্ধুই জিয়াকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিলেন, দেশ স্বাধীন না হলে জিয়া কখনও তা হতে পারতেন না। আর জিয়ার মা-বাবা পাকিস্তানে মাইগ্রেট করে এবং জিয়া সেখানেই আর্মিতে ঢোকে। কিন্তু তার পোস্টিং হয় আমাদের বাংলাদেশে। তিনি বলেন, আমাদের দলের বেইমান তো ছিলই। খন্দকার মোশতাক-টোস্তাক তো ছিলই। এটা তো অস্বীকার করি না। আমাদের বাড়ির ভাত কার পেটে না গেছে। জিয়াউর রহমান তো খালেদা দিয়াকে নিয়ে মাসে একবার করে আমাদের বাড়ি গিয়ে বসে থাকত। আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার কর্নেল আসলাম বেগ জিয়াউর রহমানকে চিঠি লিখেছিল। ওই চিঠি আমার কাছে আছে। এই সংসদে সেটা তুলে ধরব। সংসদের প্রসিডিংসে এটা পার্ট হয়ে থাকা দরকার। কর্নেল আসলাম বেগ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জিয়াকে একটি চিঠি দেয়- সেই চিঠিতে সে জিয়াকে লিখেছিল-‘আপনি খুব ভালো কাজ করছেন। আমরা আপনার কাজে সন্তুষ্ট। আপনার স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনাকে ভবিষ্যতে আরো কাজ দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, খালেদ মোশাররফ যখন আহত হয়ে যান, তখন মেজর হায়দার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে তো একটা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর জিয়াউর রহমান যেখানে দায়িত্বে ছিল সেখানে সবথেকে বেশি মানুষ মারা গেছে। পাকিস্তানীদের পক্ষে যাতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুবরণ করেন সেই ব্যবস্থা করছেন কি না, সেটাই আমার প্রশ্ন? জিয়া তখন কি করেছে? এখানে প্রশ্ন আসে একটা সেক্টরের অধিনায়ক হয়ে সেখানে ক্যাজুয়ালিটি বাড়িয়ে দেয়ার মানে কি? সে নিজের হাতে পাকিস্তানী সেনাদের গুলি করতে যায়নি। সে আমাদের নিজেদের লোকদের ঝুঁকিতে ফেলেছে সেটা মেজর হাফিজের বইতেই আছে। দুদক কেন তদন্ত বন্ধ করেছে? মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেয়া ঘর নিয়ে দুর্নীতি বা অনিয়মের তদন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন কেন বন্ধ করেছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত বন্ধ করবে কেন? তাদের তো তদন্ত বন্ধ করার কথা না। তাদের তো তদন্ত চালু রাখতে হবে, তদন্ত করে দেখতে হবে। গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘর যারা ভাঙল, তারা কারা? তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল? তারা কেন ভাঙল? সেটা যদি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে থাকে তাহলে তাদের তদন্ত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কম করে হলেও ১০ লাখ মানুষকে আমি ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এবারের যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা নিয়ে একজন এমপি প্রশ্ন তুলেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্নীতি হয়েছে! এটা আমরা তদন্ত করেছি। দেখা গেছে, নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পাওয়া গেছে, আর ১০/১২টি জায়গায় অতিবৃষ্টির কারণে মাটি ধসে ঘর পড়ে গেছে। আর তিনশ’ জায়গায় তদন্ত করে দেখা হয়েছে, সেখানের প্রত্যেকটি ঘরের ছবি আমার কাছে আছে। তদন্ত করে দেখা গেছে, সেখানে দরজা-জানালার ওপর হাতুড়ির আঘাত। ফ্লোরগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে। ইটের গাঁথুনির পিলার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এটা তো দুর্নীতির জন্য হয়নি। এটা কারা করল? তদন্ত হচ্ছে, এর মধ্যে কিছু গ্রেফতার হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতার করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংসদ নেতা বলেন, আমার প্রশ্ন দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত বন্ধ করবে কেন? তাদের তো তদন্ত বন্ধ করার কথা না। তাদের তো তদন্ত চালু রাখতে হবে। তদন্ত করে দেখতে হবে। সেখানে যারা ভাঙল তারা কারা? তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল? তারা কেন ভাঙল? সেটা যদি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে থাকে তাহলে তাদের তদন্ত করতে হবে। যে ভেঙ্গেছে তার নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য ছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলব, যে ৩০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রত্যেকটা তদন্ত করে রিপোর্ট দিন। আমরা গরিবকে ঘর করে দেব, সেখান থেকেও টাকা মেরে খাবে? আমরা এখন কংক্রিট এবং স্টিলের দিয়ে ঘর করে দিচ্ছি। যাতে সহজে কেউ ভাঙতে না পারে। বন্ধুত্বের নিদর্শনে আম পাঠানো ॥ পাকিস্তানে আম পাঠানো নিয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, কেবল পাকিস্তান নয়, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ আশপাশের প্রতিবেশী দেশ এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সব দেশেই আম পাঠিয়েছি। আমাদের আম অত্যন্ত সুস্বাদু। আম পাঠানোর কারণ হচ্ছে বন্ধুত্বের নিদর্শন এবং দ্বিতীয়টি হলো বাজারজাতকরণ। দুইদিকই আমাকে দেখতে হবে। সেজন্য সবাইকে আম পাঠিয়েছি। তবে একাত্তরে পাকিস্তান আমাদের ওপর যে অত্যাচার করেছে, সেটা নিশ্চয়ই আমরা ভুলতে পারি না। এটা ভুলে গিয়েছিল বিএনপি।
×