ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামের মানুষও টিকার প্রস্তুতি নিচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:১০, ১ আগস্ট ২০২১

গ্রামের মানুষও টিকার প্রস্তুতি নিচ্ছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ আশা জাগানিয়া কোভিড রক্ষার টিকা প্রদানের খবর শুনে গ্রামের মানুষের মধ্যে হতাশা কেটে গিয়ে সাহস জন্মেছে। অপেক্ষায় আছে ৭ আগস্টের। যেদিন টিকা কেন্দ্রে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সঙ্গে থাকলেই স্বেচ্ছাসেবী ও নার্স তা দেখে ট্যাবে বা ল্যাপটপে এন্ট্রি দিয়ে প্রথম ডোজ টিকা দেবে। সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ দেবে। এর আগে অনেক ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবীরা ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে এনআইডি দেখে নিবন্ধন করে দিচ্ছেন। এভাবে গ্রামের মানুষও টিকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে শহরগুলোতেও টিকা নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণের হার রেড়েছে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নতুন করে নিবন্ধন শুরু হওয়ার পর ১০ জুলাই থেকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া শুরু হয়। এরপর প্রতিদিন নিবন্ধন বাড়তেই থাকে। যা অব্যাহত আছে। সরকার জুলাই মাস থেকে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা প্রথম দফায় ৩৫ বছর, দ্বিতীয় দফায় ৩০ বছর এবং তৃতীয় দফায় ২৫ বছর নির্ধারণ করেছে। শীঘ্রই বয়স সীমা ১৮ বছরে নামিয়ে আনা হবে। বর্তমানে প্রতিদিন বিপুল রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। চলতি মাসের (আগস্ট) ৭ তারিখ থেকে বগুড়ায় প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। দেখা যাচ্ছে কোভিড থেকে মানুষকে বাঁচাতে টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে যতদিন না সকল মানুষ টিকার আওতায় না আসে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই বিদেশ থেকে টিকা আসছে। বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজার রহমান তুহিন জানালেন, টিকা কার্যক্রম সচল রাখতে সব ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। বগুড়া শহরের তিনটি হাসপাতালে টিকা দেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় জানালেন প্রতিদিন টিকা প্রদানের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সকাল ন’টা থেকে বেলা দু’টা পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চলে। বাড়তি টিকা দিতে লোকবল বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ শফিক আমিন কাজল জানালেন প্রতিদিন প্রচুর নিবন্ধন হচ্ছে। প্রতিদিনের টিকা প্রদানের সাধ্যানুযায়ী প্রথম ডোজের মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকলেই টিকার আওতার আসবে। বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামির হোসেন মিশু জানান, সরকারী সিদ্ধান্তে আগস্টের ৭ তারিখ থেকে মাঠ পর্যায়ে টিকা প্রদানের কথা। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইপিআই টিকা প্রদানের জন্য যে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের কাজে লাগানোর বিষয়টি বিবেচনায় আনা হচ্ছে। তিনি আশা করেন টিকা প্রদান নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা দূর হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা জন্মেছে। আরেকদিকে গত মাস থেকে বগুড়ায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েছে। বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে বাইরের জেলার করোনা রোগী এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদেরও কেউ মারা যাচ্ছেন। একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো তা হলো- বর্তমানে গ্রামের মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়ে একেবারে শেষের বেলায় শহরের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। যে কারণে আইসিইউতে প্রচন্ড চাপ পড়েছে। সিভিয়ার করোনা রোগীর জন্য অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহে হাই ফ্লো ন্যাজাল দরকার। এই ন্যাজাল আছে তবে আইসিইউ সহজে মিলছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যতটা সম্ভব দ্রুত সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে শহরের মানুষ অনেক সচেতন হওয়ায় শহরাঞ্চলে করোনা কিছুটা কমেছে। তা ছাড়া প্রথম দফার টিকা (এ বছর ফেব্রুয়ারি) যারা দিয়েছেন তারা অনেকটা সেফ। দ্বিতীয় দফার টিকা কেবল শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গ্রামের মানুষের মধ্যে গত এক বছর ধরে তেমন সচেতনতা না থাকায় আক্রান্তের হার বেড়েছে। ‘কি হবে’ এমন ভাবনা তাদের এই পথে এনেছে। গ্রামে যখন আক্রান্তের হার বাড়ছে তাদের চোখের সামনে যখন প্রিয়জনের পাড়া পড়শীর এই অবস্থা দেখছে তখন হুঁশ হচ্ছে। মাস্ক ব্যবহার করছে। সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে।
×