ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আলী আশরাফ আর নেই

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ৩১ জুলাই ২০২১

আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আলী আশরাফ আর নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঝরে গেল আরেক প্রবীণ রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানের প্রাণ। কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক ডেপুটি স্পীকার ও আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ আর নেই। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি এখন অনন্তলোকের বাসিন্দা। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রবীণ ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান অধ্যাপক আলী আশরাফ শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। ৭৪ বছর বয়সী আলী আশরাফ ৯ দিন ধরে হাসপাতালটিতে ‘লাইফ সাপোর্টে’ ছিলেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন বলে তাঁর একান্ত সচিব আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সৈয়দ আলী আশরাফের মৃত্যু সংবাদে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত এই প্রবীণ রাজনীতিকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। মৃত্যুকালে সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়েসহ আত্মীয়-পরিজন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ ছিলেন সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো তিনি জাতীয় সংসদে কুমিল্লার ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সংসদ সদস্য আলী আশরাফ। পিত্তথলির পাথর অপারেশনের জন্য গত ২ জুলাই ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসে ক্ষতসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা ছিল। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। ৯ জুলাই তাঁকে আইসিইউতে নেয়ার পর ২১ জুলাই নেয়া হয় ‘লাইফ সাপোর্টে’। সেখান থেকে তিনি আর ফিরলেন না। ২০০১ সালে সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদের মৃত্যুর পর বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পীকার থেকে স্পীকারের দায়িত্বে পান। ওই সময় ডেপুটি স্পীকারের চেয়ারে বসেন অধ্যাপক আলী আশরাফ। তিনি ১৯৭৩ সালে অত্যন্ত তরুণ বয়সে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১১ থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে কুমিল্লা-৭ আসন চান্দিনা থেকে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের ১৭ নবেম্বর কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক আলী আশরাফ। চান্দিনার গল্লাই মুন্সি বাড়ির মরহুম মোঃ ইসমাইল হোসেন মুন্সির ছেলে আলী আশরাফ ১৯৬২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যোগদান করে রাজনীতি অঙ্গনে পা রাখেন। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এক সময় অধ্যাপনা করা আলী আশরাফ ১৭৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ছিলেন। মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, শুক্রবার এশার নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে অধ্যাপক আলী আশরাফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার তাঁর মরদেহ নেয়া হবে তাঁর নির্বাচনী এলাকা চান্দিনায়। সেখানে চান্দিনা কলেজ মহিলা কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা, বাদ জোর দোল্লাই নবাবপুর হাইস্কুল মাঠে ও বাদ আছর গল্লাই ইসমাইল দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে নিজ পারিবারিক গোরস্তানে পিতা-মাতার কবরের পাশে চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হবে অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ানকে। প্রবীণ রাজনীতিক ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘অধ্যাপক আলী আশরাফের পেশাদারিত্ব এবং অভিজ্ঞতা সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চায় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সরকারী প্রতিশ্রুতি এবং সরকারী হিসাব কমিটিসহ বিভিন্ন সংসদীয় কমিটি এবং সংসদীয় কার্যক্রমে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানকে হারাল। তাঁর মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক ডেপুটি স্পীকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শোকবার্তায় বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ও জনমানুষের নেতা অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সৈনিক এবং দেশপ্রেমিক জননেতাকে হারালাম। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামান করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন- জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
×