ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে প্রায় তিন কোটি টাকার স্বর্ণের বার জব্দ

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২৭ জুলাই ২০২১

শাহজালালে প্রায় তিন কোটি টাকার স্বর্ণের বার জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে চার কেজি ২৯২ গ্রাম স্বর্ণের বারসহ সৌদিফেরত মাহিন উদ্দিন নামে এক যাত্রীকে আটক করেছে ঢাকা কাস্টম হাউস। জব্দ স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এছাড়া সোমবার বিমানবন্দরে আড়াই কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এসব মুদ্রা নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে মিসর যাচ্ছিলেন। আটক ব্যক্তি অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। এদিকে ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, সোমবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই যাত্রীকে বোর্ডিং ব্রিজ থেকে আটক করা হয়। বিমানবন্দর কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ টিম তাকে গ্রীন চ্যানেলে নিয়ে আসে। পরে তার সঙ্গে থাকা একটি হ্যান্ড ব্যাগের ভেতর থেকে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ৩৭ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। পাসপোর্ট অনুসারে যাত্রীর নাম মাহিন উদ্দিন। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কাস্টম হাউস জানায়, যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সৌদি আরবের কিং খালিদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে কুমিল্লা সদরের জাকির হোসেন নামের এক পরিচিত প্রবাসী তার কাছে ওই গোল্ডবার হস্তান্তর করে। শাহজালালে আসার পর এয়ারপোর্টের বাইরে কোন একজনকে ফোন করে এসব গোল্ডবার রিসিভ করার কথা ছিল। জব্দ স্বর্ণের বিষয়ে কাস্টম ও অন্যান্য আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আটক যাত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে তাকে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানায় ঢাকা কাস্টম হাউস। সূত্র জানায়, আড়াই কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচারের সময় এক যাত্রীকে গ্রেফতার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ। সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়। এসব মুদ্রা তিনি ঢাকা থেকে মিশর পাচারের জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। ধৃত জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন রাজধানীর গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। গত দুই বছর যাবত তিনি ওই ব্যবসা বাদ দিয়ে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি একজন পেশাদার মুদ্রা পাচারকারী। এর আগেও তিনি অসংখ্যবার একই কায়দায় টাকা পাচার করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সোমবার বাংলাদেশ থেকে ইস্তান্বুল হয়ে মিসরে পাচারের জন্য ১১ লাখ ২০ হাজার রিয়াল নিয়ে দেশ ছাড়ার সময়ে বিমানবন্দরে আটক হন তিনি। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এসব মুদ্রা দিয়ে পাচারের জন্য স্বর্ণ কেনা হয় বলে ধারণা বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)। এ বিষয়ে দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কেনপি-১-এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউল হক। তিনি জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টার্কিস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে এসব মুদ্রা পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজন হিসেবে যাত্রী জাহাঙ্গীর গাজীকে গ্রেফতার করে এপিবিএন সদস্যরা। জাহাঙ্গীরের গন্তব্য ছিল তুরস্ক। অত্যন্ত সুকৌশলে লাগেজে ১০টি শার্টের মধ্যে লুকিয়ে ১১ লাখ সৌদি রিয়ালসহ আটটি দেশের মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত এসপি মোঃ জিয়াউল হক বলেন, জাহাঙ্গীর গাজী ভোর সাড়ে ৬টার দিকে টার্কিস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে ইস্তান্ব^ুল যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে আসেন। সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ৫০ হাজার রিয়ালের কথা বলেন। পরে তার লাগেজ তল্লাশি করে ১১ লাখ ২০ হাজার সৌদি রিয়ালসহ আরও ৮টি দেশের মুদ্রা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ইউএস ডলার, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, কুয়েতি দিনারসহ বিভিন্ন মুদ্রা পাওয়া যায়। গ্রেফতার আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আগে তিনি রাজধানীর গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। গত দুই বছর ধরে তিনি ওই ব্যবসা বাদ দিয়ে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আমরা তার পাসপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, পাঁচটি দেশের ভিসা রয়েছে তার। ইমিগ্রেশনের ১২৫টি সিল লাগানো আছে। ৬৫ বারের মতো তিনি দেশের বাইরে যাতায়াত করেছেন। সাধারণত আমরা দেখি কমার্সিয়াল যাত্রীদের জন্য সরকার যে সুবিধা দেয়, তারা বিভিন্ন পোডাক্ট বিক্রি করে একটা লাভের অংশ নিয়ে নেয়। কিন্তু সেই লাগেজ ব্যবসা থেকে তিনি হুট করে পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন যোগ করেন অতিরিক্ত এসপি। অতিরিক্ত এসপি মোঃ জিয়াউল হক আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, বিভিন্ন প্রবাসীর কাছ থেকে এসব রিয়াল সংগ্রহ করে এবং তা একত্রিত করে পাচার করা হয়। এতে বাংলাদেশ সরকার কোন রাজস্ব পায় না। এই বৈদেশিক মুদ্রা ইস্তাম্বুল হয়ে মিসরে পাচারের কথা ছিল। এগুলো বহন বা পাচারের জন্য গ্রেফতার আসামিকে অন্তত চার-পাঁচ লাখ টাকা দিত চক্রের সদস্যরা। ধারণা করা হচ্ছে, এখান থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। পরে সেখানে গিয়ে বাল্ক এমাউন্টে গোল্ড কেনা হতে পারে। সেগুলো আবার বাংলাদেশে আসতে পারত। এতে দুই দিকেই বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হতো। একদিকে টাকা পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে অবৈধভাবে ট্যাক্স ছাড়া স্বর্ণ বাংলাদেশে পাচার হতো। এই দুটি কাজেই বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিগ্রস্ত।
×