ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশুর চামড়ার সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি

এবারও সিন্ডিকেটের কব্জায় কাঁচা চামড়ার বাজার

প্রকাশিত: ২২:১২, ২৪ জুলাই ২০২১

এবারও সিন্ডিকেটের কব্জায় কাঁচা চামড়ার বাজার

এম শাহজাহান ॥ সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে এবারও সারাদেশে কোরবানির কাঁচা চামড়ার সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি। নানা কৌশলে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা পানির দরে কিনে নিয়েছেন কোরবানির চামড়া। সিন্ডিকেটের কব্জায় থেকে বের হতে পারেনি রফতানিতে দ্বিতীয় অস্থানে থাকা দেশের চামড়া শিল্পখাত। বর্গফুটে নয়, এবার কোরবানির কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে ‘প্রতিপিস’ হিসেবে। প্রতিবর্গফুট হিসেবে যে চামড়ার দাম আসে দেড় থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, তা প্রতিপিস হিসেবে মাত্র ৩০০-৭০০ টাকায় কিনে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারসাজির কারণে ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলা শহরের কাঁচা চামড়া ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের তেমন দেখা না পেয়ে শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার ইমাম ও শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চামড়া দিয়েছেন নগরবাসী। তবে করোনা মহামারীর এই সময়ে কোরবানি কম হওয়ায় চামড়া সংগ্রহের লক্ষমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাপক প্রস্তুতি থাকার পরও শেষ মুহূর্তে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম বাড়ায় এবার কাঁচা চামড়া পাচাররোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সীমান্ত এলাকায় পাহারা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এছাড়া মহাসড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ কাঁচা চামড়াবাহী ট্রাক ও লরি রাজধানীর ঢাকার বাইরে অন্য কোথাও যেতে দিচ্ছে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চামড়া, খাদ্য ও ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানা খোলা রাখা হয়েছে। ঢাকার পোস্তার আড়ত ও সাভারের ট্যানারিগুলোতে চলছে কাঁচা চামড়া বেচাকেনা। তবে ন্যায্যদাম নিশ্চিত হওয়ায় হতাশ হয়েছেন কোরবানি দাতারা। এমনকি এ খাতের মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হা হুতাশ করতে দেখা গেছে। নির্ধারিত দাম কার্যকর হওয়ার ব্যাপারে কোরবানি ঈদের আগের দিন কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই সময় তিনি বলেন, সরকারি নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় ঘটলে সরকার কঠোর অবস্থান যেতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা থোড়াই কেয়ার করে চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার পানির দরে কিনে নিয়েছেন কোরবানির চামড়া। তবে আশার খবর- গত বছরের মতো এবার চামড়া রাস্তায় ফেলে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। সারাদেশে দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কাঁচা চামড়া আগের বারের চেয়ে এবার একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা এবং লিল্লাহ বোর্ডিংসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কোরবানির সারাদিন বাসাবাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ন্যায্যদামে বেচতে না পারলে কোরবানিদাতার সান্ত¡না-তিনি চামড়াটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান-সদকা করতে পেরেছেন। কোরবানির দিন রামপুরার জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা খিলগাঁও, শাজাহানপুর, গোড়ান, বাড্ডা ও মালিবাগ এলাকায় চামড়া সংগ্রহ করছিলেন। কারা চামড়া দিচ্ছে এবং কেমন দামে ট্যানারিগুলোতে বিক্রি করছেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আবুল বাশার জনকণ্ঠকে বলেন, এবার কাঁচা চামড়া চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা না থাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকদের দেখা মাত্র কোরবানি দাতারা বিনামূল্যে চামড়া দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ট্যানারিতে ইমামসাহেব যোগাযোগ করে বিক্রির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাজ বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে রাস্তার কোন জায়গায় চামড়াগুলো স্তূপ করে রাখা। সন্ধ্যার পর ট্যানারি বা আড়ত থেকে ট্রাক এসে চামড়াগুলো নিয়ে যাবে। রাজধানীর বিভিন্ন স্পট ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, এবার ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পক্ষ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে এনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিনামূল্যে পাওয়া এসব চামড়া কোরবানির দিন পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছে মাদ্রাসা ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি মাদ্রাসার ইমাম জনকণ্ঠকে জানান, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে রাখার মতো ব্যবস্থা আমাদের নেই। এ কারণে বিনামূল্যে পাওয়া চামড়া আমাদের পক্ষ থেকে কোরবানির দিনই অনেকটা পানির দামে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসায় রাখতে গেলে লবণের প্রয়োজন হবে, তারচেয়েও বড় সমস্যা দুর্গন্ধ ছড়ায়। ছেলেপেলেরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এই আশঙ্কা থেকে কোরবানির চামড়া বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। প্রতিপিস হিসেবে বিক্রি হয়েছে গরুর চামড়া ॥ ঢাকায় কোরবানি হওয়া বেশিরভাগ গরুর চামড়া ৩০ থেকে ৫০ বর্গফুট হয়ে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কয়েক বছর যাবত বর্গফুট হিসেবে চামড়া বেচাকেনার ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর করা হয়নি। এবার সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আড়ত ও ট্যানারিগুলোর জন্য ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। গত বছর এই দর ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা, গত বছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। এছাড়া লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর খাসির চামড়ার দর ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকায় বেঁধে দেয় সরকার। এ বছরের নির্ধারিত দাম কার্যকর হলে ঢাকার বড় আকারের একটি গরুর চামড়া ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকায় এই দামে কোথাও চামড়া বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। চামড়া সংগ্রহ মনিটরিং করা হচ্ছে ॥ ঢাকাসহ সারাদেশে নির্ধারিত দামে চামড়া সংগহ হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয়ও থেকে চামড়ার বেচাকেনা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোরবানির পশুর চামড়া যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাসহ চামড়া ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। কোরবানির পরদিন বৃহস্পতিবার সাভারে বিসিক চামড়া শিল্পনগরীতে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়, সাভারের বিসিক ও ঢাকা ট্যানারি শিল্প নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থানা প্লান্ট কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন বলে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়। ওই সময় সচিব বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সহায়তায় অস্থায়ীভাবে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধের বাইরে থাকবে চামড়া, খাদ্য ও ওষুধ খাত ॥ করোনা মহামারী মোকাবেলায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধের বাইরে থাকবে দেশের চামড়া, খাদ্য ও ওষুধ খাত। কোরবানির পশুর চামড়া সংশ্লিষ্ট খাত, খাদ্যপণ্য এবং কোভিড- ১৯ প্রতিরোধে পণ্য ও ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঈদের পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘কঠোর’ বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। মহামারীর অতি বিস্তারে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবারও শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। লবণের কৃত্রিম সঙ্কট ॥ গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও লবণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সিন্ডিকেট করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হয়েছে লবণ। ৬৮০ টাকার ৭২ কেজির এক বস্তা লবণ কিনতে হচ্ছে ১৩৫০ টাকা দিয়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বিগুণ দাম দিয়েও লবণ পাওয়া যায়নি। পোস্তার আড়তদার মেসার্স আমান উল্লাহ এ্যান্ড ব্রাদাসের প্রোপ্রাইটর হাজী মো. আমান উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানির দিন রাতে হঠাৎ চামড়ার আমদানি বেড়ে যায়। চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহে টার্গেট পূরণ হয়নি ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, করোনার কারণে কোরবানি কম হওয়া, ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধ না হওয়া এবং আড়তদারদের কারসাজিতে চট্টগ্রামে পশুর চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে। তবে গতবার যেভাবে খালে বিলে নালায় এবং নদীতে চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল এবার তা হয়নি। চামড়া ক্রেতা, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে এবারও পানির দামে চামড়া ॥ স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীতে এবারও ‘পানির দামে’ বিক্রি হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। প্রত্যাশিত দামে নিজেরা বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই সরাসরি দান করেছেন মাদ্রাসা অথবা এতিমখানায়। রাজশাহীতে সরকার নির্ধারিত দাম অনুসরণ না করে প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। আর ছাগলের চামড়ার দাম ১০ থেকে ২০ টাকা। ছোট আকারের ছাগলের চামড়া বিক্রিই করতে পারেননি অনেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আড়তদারদের বিনামূল্যে দিতে বাধ্য হন। গত বছর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পদ্মায় ফেলে দেয় বেশকিছু খাসির চামড়া। অভিযোগ রয়েছে, মূলধন বকেয়ার অজুহাত দেখিয়ে অধিক মুনাফার আশায় বড় আড়তদারদের সিন্ডিকেট বাজার নি¤œমুখী করেছে। যদিও আড়তদাররা দায়ী করছেন ট্যানারি মালিকদের। এদিকে কোরবানির ঈদের একদিন পরই আবার কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় আরোপে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন রাজশাহীর কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। লকডাউনের কারণে চামড়া সংরক্ষণ ও পরিবহন নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পাবনায় কোরবানির চামড়ার বাজারে ধস ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা থেকে জানান, কোরবানির চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। বাজারে প্রচুর পশুর চামড়া আমদানি হলেও ক্রেতার অভাবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনে বিপাকে পড়তে হয়েছে। আর বাজারে চামড়া ব্যবসায়ী কম থাকার সুযোগে কয়েকজন পাইকার নামমাত্র মূল্যে চামড়া ক্রয় করেছেন বলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন। রংপুরে চামড়ার বাজারে মন্দাভাব ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর থেকে জানান, রংপুরে কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনার বাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ঈদের দিনেও জমে উঠেনি চামড়াপট্টি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার ও ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। আর বিক্রেতাদের অভিযোগ, গুদামে গুদামে ঘুরেও মিলছে না ন্যায্য দাম। বাধ্য হয়ে কম দামেই হাত বদল হচ্ছে কাঁচা চামড়া। ঈদের দিন বুধবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চামড়া কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত রংপুর নগরের হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকা ঘুরে এমনটাই জানা গেছে। কুড়িগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে চড়া দামে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে এখন দাম কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। গত বছরের চেয়ে এবার অর্থনৈতিক সঙ্কটে কোরবানি দিয়েছেন খুব কম সংখ্যক মানুষ। সে তুলনায় পশু চামড়ার সংখ্যা এবার জেলায় কম হলেও ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দাম পাবেন কিনা তানিয়ে রয়েছে তাদের হতাশা। কারবানির চামড়া প্রক্রিয়াজাতে সিসিকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ॥ স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস জানায়, কোরবানির চামড়া ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকে লাভজনক করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। প্রতি ঈদ-উল-আজহায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতের খরচ। ফলে চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে গেল ক’বছর যাবত কোরবানির চামড়া ময়লার ভাগাড়ে যাচ্ছে। গত ঈদ-উল-আজহায় চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সিলেটের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা লক্ষাধিক চামড়া রাস্তা ও নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। বগুড়ায় এবারও খামারি ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ায় কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনা নিয়ে গত ক’বছর ধরে একই খেলা চলছে নিরন্তর। বগুড়ায় এবারের কোরাবনির ঈদে পশু (গরু মহিষ ছাগল ভেড়া গাড়ল) কোরবানি হয়ছে খুবই কম। খামারি ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। কেউ কম দামে চামড়া বিক্রি না করে বর্জ্য হিসাবে রাস্তার ধারে, করতোয়া নদী তীরে ও নদীর ভেতরে ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি ঈদের পরের দিন পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এলে ফেলে দেয়া চামড়াগুলো কয়েক দফায় সাতটি গারবেজ ট্রাকে তুলে ঠ্যাঙ্গামারা এলাকায় ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়। ট্রাক চালক আমিনুল জানালেন, শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এমন দৃশ্য দৃষ্টিতে এলে পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশাকে জানানো হলে তিনি শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে ও বায়ু দূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে গারবেজ ট্রাকগুলোকে সচল করেন। নীলফামারীতে কোরবানির চামড়ার দামে ধস ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, এক লাখ টাকা বা ৪০ হাজার টাকার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম একই। ঈদের দিন প্রধম দিকে দুই শ’ টাকা করে গড় হিসাবে গরুর চামড়া বিক্রি হলেও বিকেলে তা নেমে আসে ১০০ টাকায়। অপর দিকে ৮০ হাজার টাকা দামের খাসির চামড়া ২০ টাকা হলেও ছোট খাসির চামড়া কেউ কিনতেই চায়নি। ফলে অনেকে খাসির চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। এবারে নীলফামারীতে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নামে। অপর দিকে যারা চামড়া ক্রয় করেছে এমন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলার বাজারগুলোতে চামড়া বিক্রি করতে গেলে বড় ব্যবসায়ীরা দাম আরও কম বলছে। কোরবানির চামড়ার দরপতনে অসহায় মানুষগুলো বঞ্চিত হচ্ছে ॥ স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, গরিবের হক কোরবানির পশুর চামড়ার অস্বাভাবিক দরপতনে চামড়ার মূল্য বাবদ নগদ অর্থ থেকে অসহায় গরিব মানুষগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে চামড়ার পাইকারি বাজারে চামড়াভেদে গড়ে ৩০ টাকা ফুট দরে চামড়া বিক্রি হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে এনে পানির দরে তা বিক্রি করে লোকসান গুনে বাড়ি ফিরেছে। সিরাজগঞ্জে চামড়া পট্টিতে প্রতিটি চামড়া গড়ে তিন শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আট শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই চামড়া আগে কমপক্ষে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাগুরার চামড়া বাজারে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কম ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, ঈদ-উল-আজহার কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে পশুর চামড়ার দাম কম হওয়ায় বিক্রিত চামড়ার মূল্য পাচ্ছেন না বিক্রেতারা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিটি গরুর চামড়া প্রকার ভেদে ৪শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জেলায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার গরু ও ছাগল কোরবানি দেয়া হয়েছে।
×