ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৪ জুন ২০২১

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে ॥ কৃষিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গত ১২ বছরে দেশে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। বুধবার ভার্চুয়ালি ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি ও নানামুখী প্রণোদনার ফলে বিগত ১২ বছরে দেশে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও ভোজ্যতেলের বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় ও এর পেছনে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। তিনি বলেন, দেশে তেল উৎপাদনের মূল বাধা হলো জমির স্বল্পতা। ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল, স্বল্পকালীন উন্নত জাতের ধান ও সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর চাষ দ্রæত কৃষকের কাছে ছড়িয়ে দেয়া ও জনপ্রিয় করতে পারলে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি না কমিয়েও অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষাসহ তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। সে লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় সমন্বিত কর্মসূচী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। ২০০৯ সালে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টনে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ব্রিধান-৭১, ব্রিধান-৮১, ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-৯২সহ উন্নত জাতের ধান চাষ করে হেক্টর প্রতি এক টন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এটি করতে পারলে ১০ শতাংশ জমি উদ্বৃত্ত থাকবে, যাতে ধান চাষ না করে অন্যান্য ফসল চাষ করা যাবে। এছাড়া উন্নত জাতের ধান ও সরিষার চাষ করে শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোও সম্ভব। উল্লেখ্য, ২৭৮ কোটি টাকার ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পটি ২০২০-২০২৫ মেয়াদে ২৫০ উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে প্রচলিত শস্য বিন্যাসে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষিত স্বল্পমেয়াদী তেল ফসলের আধুনিক জাত অন্তর্ভুক্ত করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিনসহ তেল ফসলের আবাদ এলাকা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া বিএআরআই ও বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত তেল ফসলের আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং মৌ-চাষ অন্তর্ভুক্ত করে তেলজাতীয় ফসলের হেক্টর প্রতি ফলনও ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে, তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়বে ও আমদানির পরিমাণ হ্রাস পাবে। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) ড. মোঃ আব্দুর রৌফ, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোল বক্তব্য রাখেন। প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক মোঃ জসীম উদ্দিন। প্রকল্পের উপস্থাপনায় জানানো হয়, দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার ৯০ শতাংশ আসে বিদেশ থেকে। আর দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ সালে বিদেশ থেকে প্রায় ৪৭ লাখ মেট্রিক টন তেল ফসল আমদানি করতে হয়েছে, যার পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। দেশে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো জমির স্বল্পতা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় কৃষকেরা এ ফসল চাষে কম আগ্রহী। বর্তমানে দেশে ফসল আবাদের ৭৫ শতাংশ জমিতে দানাজাতীয় ফসলের চাষ হয়। অন্যদিকে ক্রমশ তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৫ সালে তেল এবং চর্বি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ২২ মিলিয়ন টন, তা বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন। মাথাপিছু তেল ও চর্বি ব্যবহারের পরিমাণ বছরে ২০১৫ সালে ছিল ১৩ দশমিক ৮০ কেজি, তা বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ কেজি।
×