ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শেষ

প্রকাশিত: ২২:১৫, ২১ জুন ২০২১

পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শেষ

সংবাদদাতা, মুন্সীগঞ্জ, ২০ জুন ॥ পদ্মা সেতুর রেলপথের শতভাগ স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ২০ জুন রবিবার বিকেল ৪টা ২ মিনিটের সময় পদ্মা সেতুর ২৯৫৮ ও ২৯৫৯ নম্বর দুটি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে শেষ হলো সেতুর নিচতলার সকল স্ল্যাব বসানোর কাজ। রবিবার ভোর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, উত্তাল পদ্মা কিন্তু থেমে ছিল না সেতুর কাজ। টার্গেট মাফিক সেতুর নির্মাণ অগ্রগতি এগিয়ে নিতে সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও শ্রমিক, প্রকৌশলীরা ছিল ব্যস্ত। তাই স্ল্যাব দুটি বসানোর পর তাদের চেহারায় ছিল জয়ের হাসি। রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর নিচতলার মূল কাজ শেষ হয়েছে এখন রেলওয়ে স্ল্যাবগুলোর ওপর রেললাইন বসানো হবে। স্ল্যাব বসানোর পর সেতু কর্তৃপক্ষ রেল কর্তৃপক্ষের নিকট রেললাইন স্থাপনের জন্য কাজ বুঝিয়ে দিবেন বলে জানান দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা। ইতোমধ্যে সেতুতে রেল চলাচলের জন্য লাইন নির্মাণের যন্ত্রাংশ সেতু এরিয়ায় আনা হয়েছে। নিচতলার স্ল্যাবের পাশেই গ্যাসলাইন বসানোর কাজ চলছে। এর আগে ১০ জুন রেলওয়ে স্টেনজার বা গার্ডার বসানোর কাজ শতভাগ শেষ হয়। ১২ ও ১৩নং স্প্যানের মাঝখানে ফাঁকা অংশে সর্বশেষ স্টেনজারটি বসানো হয়েছিল। প্রতিটি স্টেনজারের ওপরই ৮টি করে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়। স্প্যানের ওপর বসানো বিয়ারিংয়ের ওপর স্থাপন করা হয় স্টেনজার তার ওপরে বসে রেলওয়ে স্ল্যাব। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮নং পিয়ারের ওপর পদ্মাসেতুর ১ম স্প্যানটি বসানো হয় আর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতুর ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যান তার ওপর ১৩১২টি স্টেনজার তার ওপর স্ল্যাব বসানো হলো। তবে রেলওয়ে স্ল্যাব বসাতে বিলম্ব হয়েছে গত বর্ষা মৌসুমে ৩১ জুলাই ২০২০ প্রমত্তা পদ্মা ভাঙনে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রক্ষিত পদ্মা সেতুর ১৯২টি রেলওয়ে স্টেনজারসহ রেলওয়ে স্ল্যাব নদীর পানিতে বিলীন হয়ে বালির নিচে চাপা পরে যায়। পরে বিলীনের ৫ মাস পর নদীর পানি কমলে স্টেনজার ও স্ল্যাবসহ কিছু যন্ত্রাংশ তুলে পদ্মা তীরের ইয়ার্ডের পাশে রাখা হয়। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া স্টেনজার ও স্ল্যাব আর পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। নতুন করে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্ল্যাব নির্মাণ করে সেতুতে স্থাপন করা হলো। এর ফলে সেতুর নিচতলার রেলপথ ফাঁকা বিহীন মাওয়া টু জাজিরা যুক্ত হলো। এখন স্ল্যাবের ওপর দিয়ে হেটে এপার ওপার যাওয়া আসা যাবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চারলেনের মূল সেতুর দুই প্রান্তে ৩.১৪ কিলোমিটার সংযোগ সেতু দুই লেন উঠবে দুই লেন নামবে। মূল ও সংযোগ সেতুসহ ৯.২৯ কিলোমিটার উড়ার পথ পাড়ি দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যাওয়া যাবে। পদ্মাসেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, পদ্মা সেতুতে প্রয়োজনীয় ২৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের সবকটি বসানো হয়েছে। সেতুর ওপরের অংশে রোডওয়ে স্ল্যাব বসবে ২৯১৭টি বসানো হয়েছে ২৬৮৯টি, বাকি ২২৮টি আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ বসানো সম্পন্ন হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতুর পিয়ার, স্পেন, নিচের অংশে রেলওয়ে স্টেনজার, রেলওয়ে স্ল্যাব ধাপে ধাপে বসানোর কাজ শেষ এখন ওপর তলায় রোডওয়েতে টার্গেট মাফিক কাজ চলছে। ২২৮টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো বাকি, তবে বসানো স্ল্যাবের ওপর পিচ ঢালাইয়ের কাজ, র‌্যালিং প্যারাপেট ওয়ালসহ অন্যান্য কাজ চলছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত। সেতুর ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ আর নিচের স্তরে থাকবে রেলপথ। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি আর রেললাইন নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)।
×