ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পরীমনির ডোপ টেস্ট হতে পারে

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২১ জুন ২০২১

পরীমনির ডোপ টেস্ট হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিনেত্রী পরীমনিকান্ডে ৭ দিনের রিমান্ডে থাকা দুই আসামি নাসির উদ্দিন ও অমির কাছ থেকে তেমন কোন গুরুত্ব তথ্য পায়নি ডিবি। তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টারও কোন সাক্ষী প্রমাণ পায়নি তদন্তকারীরা। অন্যদিকে রাত বারোটার পর কেন বোট ক্লাবে গিয়েছিলেন- তারও সঠিক জবাব দিতে পারছেন না পরী। এ অবস্থায় সেই রাতের প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য পরীমনির ডোপ টেস্ট করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আলোচিত এই অভিনেত্রী ব্যক্তিগত জীবনে মদপানে অভ্যস্ত কিনা তা ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেলে সেই রাতে বোট ক্লাবে রহস্য উদঘাটন পরিষ্কার হবে বলে জানিয়েছে গুলশানের একটি ক্লাবের সভাপতি। পুলিশেরও একাধিক কর্মকর্তা জানান- বোট ক্লাবে পরীমনিকাণ্ডের তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হচ্ছে। তার ব্যাপারে জানাতে রাজধানীর একাধিক সোশ্যাল ক্লাবের কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এছাড়া ঢাকা বোট ক্লাব ও অলকমিউনিটি ছাড়া আর কোন্ কোন্ ক্লাবে পরীমনির যাতায়াত ছিল সেটারও খোঁজখরব নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বোট ক্লাবের ঘটনা তদন্তে আসামি নাসির ও অমিকে পর্যায়ক্রমে সব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের সহজে ছাড়া পাবার কোন সম্ভাবনাই নেই। ডিবির রিমান্ড শেষ হলে সিআইডি আাবেদন জানাবে। তারপর সিআইডিতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাভার থানা পুলিশ আবেদন জানাবে। এভাবেই তাদের জেরার মুখে থাকতে হতে পারে আরও কিছু দিন। তবে নাসির জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় রাজনৈতিকভাবেও বিষয়টি মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সংগঠন। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দ পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতিতে নাসিরকে নিরীহ ও নির্দোষ দাবি করে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে। তারা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে। কি ধরনের উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে জানতে চাইলে নাসিরের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, রাত বারোটার পর যখন পরীমনি বোট ক্লাবে ঢুকেন তখন সেখানে নাসির ছাড়াও পরীমনির গ্রুপসহ কমপক্ষে ১২/১৩ জন লোক ছিলেন। এত লোকের সামনে তিনি একটা মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা চালানোর অভিযোগ তো হাস্যকর ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। সেখানে পরীমনি স্বেচ্ছায় মদপান করেন। একপর্যায়ে তিনি মাতলামি শুরু করলে তাকে সেখান থেকে চলে যাবার নির্দেশ দেন নাসির। কিন্তু পরী তাতে কর্ণপাত না করে চেঁচামেচি করতে থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে তার লোকজনই জোরপূর্বক ধরাধরি করে নিজের গাড়িতে তোলে দেয়। এখন তো নাসির গ্রেফতার থাকায় এক তরফা সব অভিযোগ করা হচ্ছে। যা প্রমাণসহ খন্ডানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পরী যে নিয়মিত মদপানে অভ্যস্ত এটা তাকে ডোপ টেস্ট করানো হলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। যিনি নিজেই অভ্যস্ত মদে- তাকে কেন আরেকজন জোরপূর্বক গলার ভেতর বোতল ঢুকিয়ে দিতে যাবেন? এদিকে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনিকাণ্ডের পর বেশকিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে শুর করেছে পুলিশ। নিয়ম ভেঙ্গে কয়েকটি সোশ্যাল ক্লাবে মধ্যরাতে পরীমনির যাতায়াত এবং মদ্যপানের খোঁজখবর করছে পুলিশ। এরই মধ্যে বনানী থানা পুলিশ গুলশানের একটি অভিজাত ক্লাবের বার বয়ের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি অভিজাত ক্লাবের কর্মকর্তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, মধ্যরাতে নিয়ম ভেঙ্গে পরীমনির জন্য বার খোলা রাখতে হয়। তারা পুলিশকে বলছেন, মদের আসর বসানোর গল্পও। বোট ক্লাব-কাণ্ডের আগের রাতে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবে ঢোকেন পরীমনি। মধ্যরাতে সেখানে তিনি ভাংচুরও করেন। এটিও তদন্তে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশ পরীমনি তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিসহ কয়েকজন তরুণ-তরুণী নিয়ে প্রায় রাতেই অভিজাত ক্লাব ও তারকা হোটেলে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগও তদন্ত করছে। গুলশান পুলিশ সূত্রে জানা যায়- গত ৩ জুন রাত ১২টার পর পরীমনি তার সাবেক স্বামী তামিম হাসান ও দুটি বেসরকারী টেলিভিশনের দুজন কর্মকর্তা পরিচয়ধারীকে নিয়ে গুলশানের একটি অভিজাত ক্লাবে যান। তখন তারা মদ্যপ ছিলেন। ক্লাবে ঢুকে পরীমনি ও অন্যরা বার ব্যবহার করতে চান। বার বয় জালাল এতে অসম্মতি জানালে পরীমনি তার গালে চড় মারেন। ক্লাব কর্মকর্তারা বেসামাল আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি নিজেই পুলিশে কল করেন। গুলশান থানা পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান সেখানে যায়। পরে তারা বুঝিয়ে পরীমনিকে বাসায় পাঠান। এ খবর পুলিশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সীমানাঘেঁষা এলাকা হওয়ায় গতকাল বুধবার বনানী থানা পুলিশ ওই ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বার বয় জালালের কাছ থেকে সেই রাতের ঘটনা জানতে চায়। ক্লাবটির সদস্য (প্রশাসন) এজন্য পুলিশের কাছে সময় চেয়েছেন। এদিকে ডিবিতে রিমান্ডে থাকা আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানবপাচার মামলাটির তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। ডিবির রিমান্ড শেষ হলে তাকে সিআইডিও রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাবে। তার প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত কত লোককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে- কত জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে- আর কত সংখ্যক টাকা পরিশোধ করেও বিদেশে যেতে পারেননি- এসব তথ্য জানতে চেয়েছে সিআইডি। গতকালও আশকোনায় সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টারের সামনে বেশ কজন প্রতারিত ভিকটিম তাদের টাকা ফেরত পাবার আশায় ভিড় জমায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মূল গেট বন্ধ থাকায় তারা চলে যান বিফল মনোরথে।
×