ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১৮ জুন ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আষাঢ়ের সবে শুরু। একেবারেই নবীনা বর্ষা। এরই মাঝে তুমুল বৃষ্টি রাজধানীতে। গত কদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। আর বৃহস্পতিবার দেখা গেল রোদ-বৃষ্টির খেলা। কখনো বৃষ্টি। কখনো রোদ। এরই মাঝে বিকেলের দিকে হঠাৎ উপরে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া। রাজধানীর আকাশ গাঢ় নীল! সেই নীলে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। যেন শরতের আকাশ! ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু অট্টালিকার জন্য অদ্ভুত সুন্দর আকাশটা, না, পুরোপুরি দেখা যাচ্ছিল না। তাতে কী? ফাঁকফোকর খুঁজে নিয়ে অনেকে দেখেছেন। কাঁচ দিয়ে ঘেরা কোন কোন ভবনের রংও এদিন নীল হয়ে ধরা দিয়েছিল। প্রকৃতি আকাশ গাছপালা নিয়ে যারা থাকতে ভালবাসেন তারা পুরো বিষয়টি দারুণ উপভোগ করেছেন। মূলত ভাদ্র ও আশ্বিন এ দুই মাস শরতের কাল। তখনই আকাশ গাঢ় নীল হয়। সাদা তুলোর মতো উড়ে বেড়ায় মেঘ। অন্যদিকে, বর্ষার আকাশ বেশিরভাগ সময় মুখ গোমরা করে রাখে। উপরের দিকে তাকালে ঘোলা একটা ছবি চোখে পড়ে। সূর্য তেমন উঁকি দিতে পারে না। এখন ঠিক সে সময়টা চলছে। শরতের ঢের বাকি। বাকি তো বটেই, এক ঝলক দেখা করে ‘আসছি’ বলতে বাধা কোথায়? যেন তা-ই বলে গেল ঢাকার আকাশ। টেস্ট ট্র্যাকে মেট্রোরেল ॥ ঢাকায় মেট্রোরেল। একসময় কেউ এই মেগা প্রকল্পের কথা চিন্তাও করতে পারেনি। অথচ এখন তা বাস্তব। দৃশ্যমান। কী অবলীলায় কাজটি এগিয়ে চলেছে। একটার পর একটা ধাপ অতিক্রম করে পূর্ণ বাস্তবায়নের খুব কাছাকাছি দেশের প্রথম মেট্রোরেল। এ ধারাবাহিকতায় মেট্রো ট্রেন সেট বৃহস্পতিবার টেস্ট ট্র্যাক স্পর্শ করল। ডিপোর অভ্যন্তরের ১ হাজার ৫০ মিটার টেস্ট ট্র্যাকে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করল সাবলীলভাবেই। মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএ) এমন তথ্য নিশ্চিত করে বলছে, উড়ালপথ বা ভায়াডাক্টের উপরে যে রেলপথ হবে, ডিপোর অভ্যন্তরে তৈরি টেস্ট ট্র্যাক সেটির অনুরূপ। তাই মূল রুটে চলার আগে এটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই ট্র্যাকে সফলভাবে চলার পর বিভিন্ন সিগন্যালে ৭ দিন চলবে। এভাবে সব ধাপ পেরিয়ে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। প্রজেক্ট ম্যানেজার-সিপি-৮ (উপ-সচিব) এবিএম আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল, ওয়াশিংসহ প্রতিটি কোচের ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে লাইনে তোলা হবে কোচ। এ জন্য ইতালি থেকে প্রয়োজনীয় মেশিনও আনা হয়েছে। এদিকে এবার একসঙ্গে দুই সেট অর্থাৎ ১২টি কোচ জাপান থেকে দেশে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। চলতি বছরের ১১ থেকে ১৪ জুন জাপান থেকে দেশের পথে রওয়ানা দেবে কোচগুলো। ডিএমটিসিএল আশা করছে ১৩ থেকে ১৪ আগস্ট ১২টি কোচ একসঙ্গে দেশে এসে পৌঁছবে। সব মিলিয়ে ২৪ সেট ট্রেনের মোট ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোয় থাকবে লম্বালম্বি সিট। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দু’টি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুই পাশে থাকবে চারটি করে দরজা। আরও কী কী থাকছে? মাত্র তো কিছুদিন। অপেক্ষা করুন। ব্যবহার করতে করতেই জানতে পারবেন। অবশ্য এখানেই শেষ নয়, রাজধানীতে পাতাল রেলেরও নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। একইদিন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিমএমটিসিএল) -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছর পাতাল মেট্রোরেলের কাজ শুরু হবে। প্রথমে রেলের ডিপো নির্মাণ করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে পাতাল রেলপথ, স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হবে। এই রেললাইনের দুইটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশ থাকবে পাতালে। ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কমলাপুর রেলওয়ে পর্যন্ত পাতাল অংশ নির্মাণ করা হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। আর কমলাপুর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে উড়াল পথ, যার দৈর্ঘ্য হবে ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। পাতাল রেলপথের জন্য ২৫টি ট্রেন কেনা হবে। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ৮টি করে কোচ। ট্রেনে একসঙ্গে ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী উঠতে পারবে। পুরো লাইন দিয়ে প্রতিদিন আট লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। ২০২৬ সালে পাতালরেলে যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাই বলে মরা মুরগি! ॥ অধিক মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা কত কি-ই না করে। একইভাবে রেস্তোরাঁর মালিকরা গ্রাহকদের হরহামেশা নষ্ট পচা খাবার পরিবেশন করেন। তাই বলে মরা মুরগি রান্না করে খাওয়াবে! হ্যাঁ, আঁতকে ওঠার মতো খবর। গত শনিবার ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে ১১৯টি মরা মুরগি উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুপুরে আমদানি কার্গো ভিলেজের বিপরীত পাশে অবস্থিত রেস্তোরাঁটিতে অভিযান চালিয়ে এপিবিএনের গোয়েন্দা দল এসব মরা মুরগি খুঁজে পায়। এসময় রেস্তোরাঁ ম্যানেজার, মরা মুরগি সরবরাহকারী, বাবুর্চিসহ ৭ জনকে আটক করা হয়। জানানো হয়, এরা মরা মুরগি রান্না করে ভোক্তাদের খাওয়াতেন। এর চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর কী হতে পারে? মানুষ এত নিচে নামতে পারে? হ্যাঁ, অপরাধীদের কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। জেল পোরা হয়েছে। কিন্তু শহরজুড়ে অগণিত রেস্তোরাঁ। কোনটিতে কী হচ্ছে, কে বলবে? তাই সরকারের উচিত যে কোন মূল্যে এই চক্রটিকে খুঁজে বের করা। এদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।
×