ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চরম অমর্যাদাকর সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৭ জুন ২০২১

চরম অমর্যাদাকর সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর যে গার্ড অব অনার দেয়া হচ্ছে সেখানে কোন নারী কর্মকর্তা অংশ নিতে পারবেন না। চরম অমর্যাদাকর ও বৈষম্যমূলক এই সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছেই। ধারাবাহিক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বুধবার শাহবাগে মানববন্ধন করে নারী সংগঠনগুলো। মানববন্ধন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মঙ্গলবার সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে ওই সুপারিশকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যানের জোর দাবি জানানো হয়। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন, সেই নারী কর্মকর্তার গার্ড অব অনারে অংশগ্রহণ নিয়ে আপত্তি তুলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত রবিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর নারী ইউএনও’র বিকল্প খুঁজতে সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা হয়েছে। শাহবাগের মানববন্ধন থেকে বক্তারা নারীদের অবমাননা করে এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকার দাবি জানান। এ সময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম বলেন, এটি শুধু তিন-চার লাইনের সুপারিশ নয়, এটার মধ্যে অনেক বিষয় ও অনেক গভীরতা আছে, তা বুঝে আমাদের এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। এর বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং প্রশাসনকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সংবিধানের ২৮নং অনুচ্ছেদে বিধৃত নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা সমান অধিকারের পরিপন্থী কাজ করেছেন, তারা অসাংবিধানিক কাজ করেছেন, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অকেজো করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত করাটা কিন্তু এক ধরনের উস্কানির পাঁয়তারা। তিনি বলেন, এই সুপারিশের মধ্যে অবশ্যই কম করে হলেও তিনটি দিক আছে- সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, সংবিধানের বিরুদ্ধে। এগুলো করতে গেলে অবশ্যই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বাইরে যাবে। সাংসদে যারা আছেন, দায়িত্বশীল আচরণ করুন। মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গবেষণা করা। এসব বিতর্কিত কাজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। এটাকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের মূলনীতির বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন, রাষ্ট্রকে তাদের শাস্তির বিধান করতে হবে। বক্তারা বলেন, উদ্ভট সুপারিশের মধ্য দিয়ে প্রশাসনকে নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তা করার পরিবর্তে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। নারী ইউএনও বলে কোন পদ নেই। একই প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়ই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে কাজ করার অধিকার ও যোগ্যতা অর্জন করে। সংবিধানের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করার কথা বলা হয়েছে। এই অধিকার কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। বক্তারা বলেন, গার্ড অব অনার রাষ্ট্রীয় সম্মান। এখানে ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের সরিয়ে রাখার সুপারিশ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। বক্তারা সাংসদদের প্রতিও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানান। বলেন প্রশাসনের মধ্যে এখনও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি লুকিয়ে আছে। এদের প্রতিরোধ করতে প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে। সংবিধানবিরোধী সুপারিশ প্রত্যাহার করে নারীর ক্ষমতায়নের পথ নিশ্চিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান তারা। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গীর তীব্র সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে উন্নয়নের মহাসড়কে দাঁড়িয়ে এই ধরনের পিছিয়েপড়া মানসিকতা কোনভাবেই কাম্য নয়। করোনাকালে অনেক নারী আজ ঘরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। একই সময় নারীরা রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্যাতিত।
×