ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে সমন্বয় সভা শেষে সংস্থার কর্মকর্তাদের অভিমত

মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৬ জুন ২০২১

মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলমান জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে। এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনও খালে অস্থায়ী বাঁধ আছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তা সরাচ্ছে। তবে এবারের বর্ষায় নাগরিক দুর্ভোগ না বাড়ে তা নিয়ে সকল সংস্থার সুচিন্তিত মতামত ও সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেয়া মেগা প্রকল্পের অর্থের অপচয় হবে, যা কাম্য নয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সকল সেবা সংস্থার সমন্বয় সভায় কথাগুলো বলেন বিভিন্ন সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সেবা সংস্থার কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে সোমবার অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চসিক প্রধান কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোঃ নুরুল্লাহ নুরী, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কর্মকর্তা এসএম মোস্তাইন হোসেন, চউক জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর পঙ্কজ মল্লিক, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর প্রমুখ নিজ নিজ সংস্থার পক্ষে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। চসিক মেয়র তার বক্তব্যে নগরীর জলাবদ্ধতার জন্য কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং না হওয়া ও নদী খালে পলিথিন ফেলাকে দায়ী করেন। তিনি পলিথিন উৎপাদন বন্ধে চসিকের উদ্যোগে অভিযান শুরুরও ঘোষণা দেন। মেয়র আরএস এবং সিএস শিট অনুযায়ী নতুন খাল খননের পাশাপাশি বিলীন এবং দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেয়ার পক্ষে মত দেন। তিনি চলমান মেগা প্রকল্পের কর্মকর্তাদের স্থানীয় কাউন্সিলরদের মতামত ও তাদের সঙ্গে কাজ পরিচালনা করতে বলেন। চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমরা সব সেবা সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করতে চাই। একে অপরকে দোষারোপ করলে কাজ হবে না। খালে কাজের জন্য যে বাঁধ দেয়া হয়েছে তা চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে অপসারণ হবে। সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তার বক্তব্যে ২০১৬ সালের মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা নেয়ার ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের মতামত না নেয়া হলে এখনই তা নেয়ার আহ্বান জানান। তা না হলে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। চউক কর্তৃপক্ষের চলমান জলাবদ্ধতা নিরসর মেগা প্রকল্পের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনসট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর পঙ্কজ মল্লিক বলেন, বারবার সকল সংবাদ মাধ্যমে মেগা প্রকল্প বলা হলেও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে চউক কর্তৃপক্ষ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার। এর মধ্যে আমরা পেয়েছি ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ৩৬টি খালের মধ্যে আমরা অর্ধেক খালের কাজ করেছি। বাকি অর্ধেক খালের কাজ এখনও বাকি। ড্রেনের কাজ করেছি মাত্র ২৬ কিলোমিটার। কাজেই এখনি বেশি কিছু আশা করলে ভুল হবে। চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ২০১৬ এর ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হয়নি বলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর সচিত্র প্রতিবেদনে কর্পোরেশনের করা জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্পন্ন হওয়া ড্রেনের কাজ ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এতে কর্পোরেশন ১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছে বলে উঠে আসে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার কাজ করেছে বলে জানা যায়। তিনি নগরীতে ১৩ খালের সঙ্গে সমুদ্রের সংযোগ ও ১০টি খালের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ রয়েছে বলে জানান। কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খাল খননের পাশাপাশি খালের দু’পাড়ে ২০ ফুটের রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেন, যাতে খাল খননের পর খালের মাটি সহজে অপসারণ করা যায়। তিনি নগরীতে নতুন সড়ক সৃষ্টির প্রস্তাবও করেন। চউক প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জলবদ্ধতা নিরসনে নির্মাণাধীন জলকপাটের রক্ষণাবেক্ষণে চসিককে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শও নেয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, জলকপাট নির্মাণে আমরা এখনও ৬০ কোটি টাকার মধ্যে ৪০ কোটি টাকা পেয়েছি। আর জলকপাট নির্মাণের পর যেহেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চসিকের তাই আমরা যাবতীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে পারি। এ ব্যাপারে সিডিএ, কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা যায়। সভায় নির্বিঘেœ খাল খননের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও জমি অধিগ্রহণে সব সেবাসংস্থা একমত পোষণ করেন।
×