ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা, কুষ্টিয়ায় ৭ দিন ও শেরপুরে ১৪ দিনের বিধিনিষেধ

রাজশাহীতে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১২ জুন ২০২১

রাজশাহীতে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ও খুলনা/ নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ও কুষ্টিয়া ॥ করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন, বিধিনিষেধ আরোপের কড়াকড়ি করা হচ্ছে। রাজশাহীতে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। এছাড়া পুরো খুলনা জেলায় এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আর শেরপুরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পৌর এলাকায় ১৪ দিনের বিধিনিষেধ জারি করেছে প্রশাসন। এছাড়া কুষ্টিয়ায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়ায় ১ সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের পরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, দিনে দিনে ‘হটস্পট’ হয়ে ওঠা উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছেই। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সংখ্যা। চলমান পরিস্থিতিতে রাজশাহীর অঞ্চলের ঘরে ঘরে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শুক্রবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ট্রেনযাত্রা, বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে রাজশাহীর আটজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়জন ও নাটোরের একজন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান বলে জানান হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌস। তিনি জানান, মৃত ১৫ জনের মধ্যে সাতজন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান। বাকিরা মারা যান নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আর করোনা শনাক্ত সাতজনের মধ্যে রাজশাহীর চারজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন ও নাটোরের একজন। চলতি মাসের গত ১১ দিনে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১০৮ জন। এর মধ্যে ৬৩ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এছাড়া গত ২৪ মে থেকে সর্বশেষ শুক্রবার পর্যন্ত ১৯ দিনে শুধু রামেক হাসপাতালেই মারা গেছেন ১৫৭ জন। ক্রমাগত মৃত্যুর মিছিল আর উচ্চহারে সংক্রমণ ভাবিয়ে তুলেছে রাজশাহীর মানুষকে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪৩ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ২২, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১, নওগাঁ সাত, নাটোরের একজন, পাবনা একজন ও মেহেরপুর একজন। একই সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৫ জন। শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডের ২৭১ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৯৭ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৪২, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১০, নওগাঁর ২৪, নাটোরের ১৫, পাবনার ৩, কুষ্টিয়ার ৩ জন। আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৮ জন। শুক্রবার বেলা ১১টায় রামেক হাসপাতালের করোনা ও আইসিইউ ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে দেখা যায়, সর্বত্র বিরাজ করছে থমথমে নীরবতা। বুকফাটা কান্না আর স্বজন হারানোর আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। কারও চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরলেও বের হচ্ছে না শব্দ। কোথাও থেকে আবার ভেসে আসছে গোঙানির আওয়াজ! কেউ চোখের পানি মুছতে মুছতে আবার কেউ বুকফাটা কান্নার রোল তুলে সদ্য মৃত্য স্বজনের নিথর লাশ নিয়ে আহাজারি করতে করতে হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করছেন। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায়, বিশেষ করে গেল ঈদের পর উদ্বেগজনক হারে রোগী বেড়েছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কয়েক দিনে মৃত্যুও রেকর্ড ভেঙ্গেছে প্রতিদিনই। এ অবস্থায় হাসপাতালে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে অনেকটাই বিপর্যস্ত এই হাসপাতাল। চিকিৎসকরা বলছেন, এভাবে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। করোনা রোগীদের পাশে থাকা স্বজনরা বলছেন, হঠাৎ করে রোগীর শরীরে কমে যায় অক্সিজেন লেভেল ও রক্তচাপ। অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় হৃদস্পন্দন। ঘন ঘন শ্বাস নেয়ার চেষ্টায় রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে অন্তত ২০ জন রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রানা-উল-ইসলাম। তিনি করোনা আক্রান্ত নানা ও মামার দেখাশোনা করতে করোনা ওয়ার্ডে থাকছিলেন। রানা বলেন, অক্সিজেনের অভাবে মানুষের মৃত্যু কতটা নির্মম তা অবর্ণনীয়। অনেক রোগীকে দেখেছেন অক্সিজেনের লেভেল আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে পুরো শরীর লাফাচ্ছে। প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে অনেকেই মারা যাচ্ছে চোখের সামনে, কিছু করার উপায় নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে রহমত উল্লাহ তার বাবা শফিউল্লাহকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট তার বাবার। ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। জরুরী বিভাগের সামনে দীর্ঘলাইন। সিরিয়াল অনুযায়ী চলছে ভর্তির কাজ। অনেক কষ্টে তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করালেন। ভর্তির সময়ই অক্সিজেন লেভেল ৮০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। রহমত উল্লাহ বলেন, সকাল থেকে তার বাবার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। চার দিন আগে করোনা ধরা পড়লেও তেমন কোন সমস্যা ছিল না। হঠাৎ করে অক্সিজেন লেভেল আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন করোনা পজিটিভ বা উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই অক্সিজেন সমস্যা প্রকট বলেই হাসপাতালে আসছেন। দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মৃত্যুর বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসছেন। দেরি করে ফেলায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। ঈদের পর থেকে করোনা রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে চিকিৎসা দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মূলত যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে তারাই হাসপাতালে ভর্তি হতে আসছেন। ফলে শতভাগ রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। সেন্ট্রাল লাইনে অক্সিজেন সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। আরও একটি ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর কাজ চলছে। অক্সিজেনের জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশের অক্সিজেন ভর্তি রিজার্ভ রাখা হয়েছে। তবে রোগী বাড়তে থাকলে অক্সিজেন নিয়েও সঙ্কটে পড়তে হতে পারে। সরেজমিনে রামেকে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই দীর্ঘ লাইনে গাদাগাদি করে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে আসছেন। তাদের অনেকের মাঝেই রয়েছে উপসর্গ। করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনদের অনেকে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকছেন, বের হচ্ছেন। কেউবা ওষুধসহ জরুরী প্রয়োজনে রাজশাহী শহরেও যাচ্ছেন, মিশে যাচ্ছেন শহরের লোকজনের ভিড়ে। এদের আবার কেউ কেউ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনের ফুটপাত থেকে কিনছেন খাবার, কেউ বা দোকানেই বসে খাচ্ছেন। ফলে রামেক হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। খোদ রামেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তারাই স্বীকার করেছেন এই ঝুঁকির কথা। হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে আসা লোকজনদের অধিকাংশই এসেছেন এই অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। তারা কর্তৃপক্ষের টাঙানো কোন নির্দেশনার ধার ধারছেন না। নিরাপত্তাকর্মীদের মাইকিংয়ে কান দিচ্ছেন না অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঝুঁকির শঙ্কার কথা জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌস। তিনি জানান, তারা রোগী ও তাদের স্বজনদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাসপাতালে প্রবেশের নির্দেশনা দিচ্ছেন। সবার সুরক্ষায় হাসপাতালে আগমন ও বহির্গমন পথ আলাদা করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন নির্দেশনা টাঙ্গানো হয়েছে। মাইকিং করে লোকজনকে সচেতন করছেন হাসপাতালের কর্মীরা। কিন্তু কিছুতেই লোকজনকে এই নির্দেশনা মানানো যাচ্ছে না। রামেকে রোগী ও তাদের অসচেতনতার জন্য আমরাও বেশ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছি। প্রয়োজনের তুলনায় শয্যা না থাকায় রোগী ও স্বজনেরাও মানছে না নির্দেশনা। এই মুহূর্তে প্রয়োজন রামেকের বাইরে বিশেষায়িত হাসপাতাল। অন্যথায় ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। সংক্রমণের শঙ্কা ॥ রামেক এলাকায় করোনা রোগীর স্বজনদের অবাধ বিচরণের কারণে হাসপাতালসহ পুরো রাজশাহীজুড়ে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের ভাষ্য, করোনা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে শুরু করে যাবতীয় তত্ত্বাবধায়নে থাকছেন স্বজনরা। রোগীর খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে করে ওষুধপত্র এবং চিকিৎসার বিভিন্ন বিষয়ও দেখাশোনা করছেন। ফলে তাদের রামেক করোনা ইউনিটে চলাফেরা করতে হচ্ছে হরহামেশাই। এই পরিচর্যাকারী আবার বাইরেও ঘুরে বেড়াচ্ছে নিঃসঙ্কোচে। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। চিকিৎসাক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের মানুষের বড় ভরসার জায়গা রামেক হাসপাতাল। প্রতিদিনই প্রায় অর্ধশত রোগী করোনার উপসর্গ ও সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এসব রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে আসছেন স্বজনেরা। এ কারণে রামেকের চিকিৎসক, নার্সসহ, ওয়ার্ডবয়সহ কর্তব্যরত সবাই রয়েছেন মারাত্মক ঝুঁকিতে। আশপাশের ওষুধের দোকানদার ও খাবার হোটেলের কর্মচারীরাও এই ঝুঁকির বাইরে নন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে করোনা ছড়িয়ে পড়বে ঘরে ঘরে। মূলত অসচেতনতা ও অব্যবস্থাপনাই এই ঝুঁকির কারণ। সম্প্রতি র‌্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্টে যার প্রমাণ মিলেছে। সর্বাত্মক লকডাউন শুরু ॥ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহীতে শুক্রবার বিকেল থেকে সাতদিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জরুরী সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী বিকেল ৫টা থেকে ১৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, জেলায় পরীক্ষার তুলনায় সনাক্তের হার ও মৃত্যু হার বিশ্লেষণ করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লকডাউনের সময় গণপরিবহন ও দোকানপাটসহ বন্ধ থাকবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ থেকে কোন যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না, রাজশাহী থেকেও কোন যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না। তবে রোগী ও অন্য জরুরী সেবাদানকারীর ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। ট্রেনযাত্রা বাতিল ॥ রাজশাহী থেকে সারাদেশে চলাচলকারী সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে রাজশাহীতে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। এ সময়কালে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী সব ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগাম বিক্রি হওয়া টিকেটও ইতোমধ্যে ফেরত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ সফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনাজনিত রোগের সংক্রমণের বিস্তার রোধকল্পে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত রাজশাহী হতে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী সকল ট্রেন বন্ধ থাকবে। খুলনা ॥ করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পুরো জেলায় এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ১৩ জুন রবিবার থেকে বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে। বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে সকল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দোকান, শপিংমল, রেস্তরাঁ ইত্যাদি খোলা রাখা যাবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হয়ে অযথা ঘোরাঘুরি করতে পারবে না। ইজিবাইক চলবে অর্ধেক এবং অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে। কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকান এই বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে। অন্যদিকে করোনা রোগীর চিকিৎসায় খুলনা সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন। সভায় সিটি মেয়র বলেন, গত এক সপ্তাহ খুলনার কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করে সংক্রমণ প্রতিরোধে কোন ভাল ফল পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে সমগ্র জেলায় বিধিনিষেধ আরোপ ও তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে খুলনার করোনা সংক্রমণের উর্ধগতি ঠেকানো যাবে না। তিনি রাস্তাঘাটে অযথা জটলা করে আড্ডা দেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালনের জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় জানানো হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে সেখানে প্রতিদিন পাঁচশ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। সভায় আরও জানানো হয় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গত সাতদিনে ২২৩টি মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে তিন লাখ ৬২ হাজার পাঁচ শ ৪৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের মোবাইলকোর্ট পরিচলনা অব্যাহত থাকবে। শেরপুর ॥ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলায় পৌরসভা এলাকায় নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলা এক জরুরী বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১১ জুন শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ একেএম আনোয়ারুর রউফসহ জেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিধিনিষেধগুলো হচ্ছে, করোনায় আক্রান্তের বাড়ি পুরোপুরি লকডাউনে থাকবে। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, বিবাহ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক স্পট, পর্যটন ও পার্কসমূহ বন্ধ থাকবে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ওইসব দোকানপাট ও শপিংমলকে বন্ধ করে দেয়া হবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। হোটেল রেস্তরাঁয় কেউ বসে খেতে পারবেন না। শুধুমাত্র পার্সেল নিতে পারবেন। সিএনজি, অটোরিক্সাসহ ক্ষুদ্র যানবাহনে দুই জনের বেশি যাত্রী ওঠানো যাবে না। যাত্রীবাহী যানবাহনে অর্ধেকের বেশি যাত্রী ওঠানো যাবে না। আর সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। জানা যায়, জেলায় গত মে মাসে ৬৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আর জুন মাসের প্রথম ১০ দিনেই ৮০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এদের সবার বাড়িই শেরপুর পৌর এলাকায়। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই জেলায় দ্রুত করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কুষ্টিয়া ॥ জেলায় বিশেষ করে কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মোঃ সাইদুল ইসলাম তার সম্মেলন কক্ষে এক জরুরী সভা আহ্বান করেন। সেখানে চেম্বার নেতারা ছাড়াও করোনা সংক্রমণ বিষয়ক জেলা কমিটির কর্মকর্তা ও নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়ে সকলে একমত হন। উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ায় ১৫ দিন ধরে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়ে চলেছে। করোনা রোগী বাড়ায় হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট ও অক্সিজেনের অভাব দেখা দিচ্ছে। বিধি নিষেধ থাকলেও কেউ না মানায় তা কোন কাজে আসছিল না।
×