ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিনোফার্মের টিকা আসছে কাল

এ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ টিকা দিচ্ছে কোভ্যাক্স

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১২ জুন ২০২১

এ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ টিকা দিচ্ছে কোভ্যাক্স

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি টিকার সঙ্কট মেটাতে যে টিকা এখন বাংলাদেশের জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন সেই অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ১০ লাখ ৮০০ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাক্সের আওতায় পাওয়ার সুখবর দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। একইসঙ্গে চীনের সিনোফার্মের উপহার হিসেবে পাওয়ার দ্বিতীয় চালানের ৬ লাখ ডোজ আগামীকাল রবিবার দেশে পৌঁছেছে। ঢাকায় চীনা দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান শুক্রবার সকালে তার ফেসবুক পেজে এই তথ্য জানান। শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, কোভ্যাক্স কর্মসূচীর আওতায় আমরা শীঘ্রই ১০ লাখ ৮০০ ডোজ এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাচ্ছি। কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ফাইজার-বায়োএনকেটের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা গত ১ জুন বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে। এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে, তার দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে গণটিকাদান শুরু করলেও দুই চালানের পর আর দিতে পারেনি এই টিকা উৎপাদনকারী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। ফলে সরকার নতুন করে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করে দেয়। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজও দেয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকার চীন ও রুশ টিকা আনার উদ্যোগ নিলেও যারা অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের জন্য ওই টিকার বিকল্প নেই। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬ কোটি ডোজ টিকা কিনে রাখলেও তা ব্যবহার করছিল না তাদের হাতে অন্য টিকা থাকার কারণে। যুক্তরাষ্ট্র এখনও এ টিকা জরুরী ব্যবহারের অনুমোদনও দেয়নি। ভারত রফতানির নিষেধাজ্ঞা না তোলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা থেকে কিছু পাঠাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী দেশজুড়ে গণটিকাদান কর্মসূচী শুরুর পর প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে। সে হিসাবে দুই ডোজ করে দিতে হলে টিকা প্রয়োজন ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ১৫ ডোজ। সরকারের হাতে অক্সফোর্ড-এ্যাস্টাজেনেকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। সাধারণভাবে ১ শতাংশ টিকা পরিবহন, সংরক্ষণের সময় নষ্ট হয় বলে ধরা হয়। সে হিসাবে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে ১৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫ ডোজ টিকা দরকার। কোভ্যাক্স থেকে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ পেলেও এ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও কিছু টিকা বাংলাদেশের দরকার হবে। সিনোফার্মের ২য় চালানের টিকা আসছে কাল ॥ চীনের দ্বিতীয় দফা উপহারের ছয় লাখ করোনার টিকা আগামী রবিবার ঢাকায় আসছে। হুয়ালং ইয়ান লিখেছেন, চীনের উপহারের ছয় লাখ টিকা এখন বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পথে। বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত চীনের সিনোফার্মের তৈরি ছয় লাখ টিকার চালানটি রবিবার ঢাকায় আসবে বলে জানান হুয়ালং ইয়ান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে বলেন, চীনের উপহারের ছয় লাখ ডোজ টিকা আনতে দুটি সি-১৩০ প্লেন পাঠানো হচ্ছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন ধরনের মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট দিচ্ছে। টিকা নেয়ার পর প্লেনে যত জায়গা থাকবে, সেটি পুরোটা ভরে নিয়ে আসবে। সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীনের উপহারের টিকা আনতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমান ১৩ জুন সকালে বেইজিং যাবে। উপহারের টিকা আর চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমান এদিন বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসবে। চীন গত ১২ মে সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ উপহারের টিকা বাংলাদেশে পাঠায়। তার ৯ দিনের মাথায় চীন দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশকে টিকা উপহার দেয়ার ঘোষণা দেয়। গত ২১ মে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর ফোনালাপ হয়। এই ফোনালাপের সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দফায় ছয় লাখ টিকা উপহার দেয়ার কথা জানান। মোমেন-ওয়াং ফোনালাপের পর ঢাকায় চীনের দূতাবাস থেকে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের ওপর চীনের নজর রয়েছে। বাংলাদেশে জরুরী ভিত্তিতে টিকার বিপুল চাহিদার প্রেক্ষাপটে সরবরাহের ঘাটতির বিষয়ে চীন উদ্বিগ্ন। ফলে দ্বিতীয় দফায় টিকা উপহারের ঘোষণা বাংলাদেশের প্রতি চীনের বন্ধুত্বের নিদর্শন। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে চীনের করোনাভাইরাসের টিকার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং।
×