ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শীত-বর্ষায় আর কষ্ট পেতে হবে না

প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুখের ঠিকানা পেয়েছে মাহমুদা

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১১ জুন ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুখের ঠিকানা পেয়েছে মাহমুদা

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ শীতকাল আর বর্ষাকালের কষ্টের কথা মনে হলে কান্না পায়। কি যে দুর্ভোগ। মানুষের জমিতে বাঁশের চাটাই আর পলিথিন দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতে হতো। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সেই পাকা ঘর পেয়েছি। এখন আর শীত ও বর্ষাকালের সেই কষ্ট পেতে হবে না। ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী গ্রামের মাহমুদা আক্তার। ভিটেমাটিহীন স্বামী শেখ ফরিদের (৩২) সামান্য দর্জির দোকানের কর্মচারীর আয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে চলত তাদের সংসার। টানাপোড়েনের সংসারে গড়তে পারেননি নিজের ঠিকানা। কোনদিন স্বপ্নেও দেখেনি পাকা বাড়িতে সংসার পেতে রাতে চিন্তা ছাড়াই ঘুমাতে পারবে। সেই কিন্তু অভাব-অনটন তার সে স্বপ্নহীন অধরায় মুজিববর্ষে মাহমুদার সেই পাকা বাড়িতে সুখের ঠিকানা পেয়েছে। সেই ঠিকানায় সংসার পেতে কথাগুলো বলছিলেন মাহমুদা। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আনন্দিত মাহমুদা। নিজের ব্যর্থতার হতাশা মুছে এখন তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, শুধু মাহমুদাই নয়, তার ন্যায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন ওই উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মধ্য পাঙ্গা গ্রামের ভূমিহীন সোহেল রানা (৫০) ও মাজেদা বেগম (৪০) দম্পতি। সোহেল রানা জীবিকা নির্বাহ করেন রিক্সা চালানোর আয়ে। দুই ছেলে এক মেয়ে সন্তান নিয়ে তাদের বসবাস ছিল অন্যের জমিতে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অনুভূতিতে মাজেদা বেগম বলেন, ‘২৩ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। কিন্তু স্বামীর নিজের বাড়ি ছিল না। খাস জমিতে ভাঙ্গা ঘরে বর্ষাকাল ও শীতকাল চরম দুর্ভোগে কাটাতে হতো। এখন শেখের বেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পাকা পেয়ে আজ নিজের বাড়ির ঠিকানা হয়ে গেল। তাদের ন্যায় ঘর পেয়েছেন বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী চেয়্যারম্যান পাড়া গ্রামের বেগম বেওয়া (৫০) মেলাপঙ্গা গ্রামের ভূমিহীন আব্দুল মতিন (৩০), হাবিবা বেগমসহ (৩২) উপজেলাটির ১০টি ইউনিয়নের ৩০০ পরিবার। এর মধ্যে ২০০ ঘর নির্মাণ শেষে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের রঙিন ঘর পেয়ে এখন তারা সকলেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বাস্তব সুখের। সূত্রমতে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ডোমার উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৩৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই ৩৮টি ঘর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করেন। একই প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ হওয়া ৩০০টি ঘরের মধ্যে ২০০টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে চলছে। চলতি মাসের ২০ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই পাকা ঘর হস্তান্তরের কথা আছে। অবশিষ্ট ১০০ ঘর বিতণের কাজ চলমান আছে। উপজেলা ত্রাণ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের ৩৮টি ঘর নির্মাণে প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা করে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩০০ ঘরের জন্য প্রতিটির বরাদ্দ পাওয়া গেছে এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা করে। ২০০ ঘর নির্মাণসহ রঙের কাজ শেষের পথে।’ যারা ঘর পেয়েছে তারা তাদের ভাঙ্গা ঘর ছেড়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরে উঠতে শুরু করেছে। ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বলেন, ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য কোন দাতা দুই শতাংশ জমি সরকারের নামে লিখে দিলে আমরা সেখানে ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীন পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এভাবে উপজেলায় ৩০০ পরিবারকে ঘর প্রদান করা হচ্ছে। এ কাজে জমি দাতার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার মানুষের সহযোগিতায় কাজটি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সকলের সহযোগিতায় উপযুক্ত ব্যক্তিরাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন।’ তিনি জানান, উপজেলায় মোট খাস জমির পরিমাণ ৯০৪ একর। এর মধ্যে ৮৭৫ একর জমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়া আছে। বাকি ২৯ একর জমি আট থেকে ১০ ফিট নিচু হওয়ায় সেখানে ঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
×