ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ২১:০০, ১০ জুন ২০২১

গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে দু’টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বৃহষ্পতিবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। একটি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-গাজীপুর সড়ক সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৯ ঘন্টা অবরোধ করেছে। দিনভর সড়ক অবরোধের কারনে এলাকাবাসি ও যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সামনে লক্ষীপুরা এলাকাস্থিত স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত মে মাসের বেতন ভাতাসহ গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের শতকরা ৭০ ভাগের মধ্যে ৫৩ ভাগ বেতন এবং বাৎসরিক ছুটি পাওনা রয়েছে। তারা গত কয়েকদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাতে কোন সাড়া দেয়নি। বুধবার মালিক কারখানায় আসলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি না দিয়ে চলে যান। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধর ও স্থানীয়রা জানান, স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক রয়েছে। বৃহষ্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় আসে। তারা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করে। এসময় শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে ও গেইটে অবস্থান নিয়ে তাদের পাওনা মে মাসের পূর্ণ বেতন ভাতাসহ গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের পাওনা ৫৩ ভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের উপর গিয়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। অবরোধের কারণে সড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পুলিশের মধ্যস্থতায় বিকেল পর্যন্ত আন্দোলনরত শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে মালিক পক্ষের কয়েক দফা আলোচনা হয়। আলোচনাকালে মালিক পক্ষ আগামী ২৮ থেকে ৩০ জুন এর মধ্যে শ্রমিকদের পাওনাদির আংশিক পরিশোধের ঘোষনা দিলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন অব্যহত রাখে। সন্ধ্যায় মালিক পক্ষ পুনঃরায় আন্দোলনরত শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সভায় গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান, শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধরসহ কারখানার মালিক উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে শ্রমিকদের মে মাসের বেতন ২২ জুন এবং গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের পাওনা ৫৩ ভাগ বেতন-ভাতা ১৪ জুন পরিশোধের ঘোষণা দেন মালিক পক্ষ। এছাড়াও চলতি জুন মাসের বেতনসহ ঈদ বোনাস (আগামী ঈদুল আজহার) যথাক্রমে আগামী ১৫ ও ১৮ জুলাই পরিশোধের ঘোষণা দেয় মালিক পক্ষ। শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং প্রায় ৯ ঘন্টা পর সড়কে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। দিনভর সড়ক অবরোধের কারনে এলাকাবাসি ও যাত্রীদের অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেককে পায়ে হেটে বা বিকল্প পথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এদিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়াস্থ গরীব এন্ড গরীব কোম্পানি লিমিটেড কারখানার লিংকিং সেকশনের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে একইদিন কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ভোগড়াস্থিত গরীব এন্ড গরীব কোম্পানি লিমিটেড কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি মাসের বেতন ভাতা পরবর্তী মাসের ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। অথচ নির্ধারিত তারিখের আগেই কারখানার লিংকিং সেকশনের প্রায় দেড়শ’ শ্রমিক তাদের পাওনা মে মাসের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে বৃহষ্পতিবার সকাল হতে কর্মবিরতি শুরু করে। একপর্যায়ে তারা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পুলিশের মধ্যস্থতায় আলোচনা শেষে আগামী শনিবার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে প্রায় দেড়ঘন্টা পর কারখানা এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বভাবিক হয়। তবে নির্ধারিত তারিখের আগেই শ্রমিকদের হঠাৎ এধরনের কর্মসূচির বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
×