ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড

প্রকাশিত: ১৭:০২, ৯ জুন ২০২১

শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড

অনলাইন রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর গত রবিবার (৬ জুন) সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড হয়। তিন দিনের মাথায় বুধবার সেই রেকর্ড ভেঙে আরও উচ্চতায় উঠেছে লেনদেন। এতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ লেনদেনের কাছাকাছি চলে এসেছে। রেকর্ড লেনদেনের দিন শেয়ারবাজারে মূল্য সূচক উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। সুতরাং আগামী ৩০ জুনের পর কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করের সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। আবার সেই টাকা বৈধপথে উপার্জিত হতে হবে। তারা আরও বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিনিয়োগ করলে সেই টাকা বৈধ না অবৈধ তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। এ সুযোগের কারণে কয়েক দিন ধরে বাজারে কালো টাকার একটি অংশ ঢুকছে, যা লেনদেন বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কালো টাকার বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কিছুই বলেননি অর্থমন্ত্রী। এ কারণে ধরে নেয়া হচ্ছে চলতি অর্থবছর মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের যে সুযোগ দেয়া হয়, তা আগামী অর্থবছর থাকবে না। ফলে আগামী ৩০ জুনের পর শুধু ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে না। অর্থমন্ত্রী নতুন বছরের প্রস্তাবিত বাজেট দেয়ার পর রবিবার সাড়ে ১০ বছর বা ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। দরপতন হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের। পরদিন সোমবার মূল্য সূচকের পতনের সঙ্গে কমে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে দুই হাজার কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়। মঙ্গলবার সূচকের উত্থানের পাশাপাশি লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে বুধবার লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের লেনদেনের আভাস পাওয়া যায়। মাত্র আধা ঘণ্টার লেনদেনেই ডিএসইতে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। লেনদেনের গতি অব্যাহত থাকে শেষ পর্যন্ত। ফলে দিন শেষে ডিএসই লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৭০০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর লেনদেন হয় দুই হাজার ৭১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর আজ বুধবারের আগে ডিএসইতে ২৭০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়নি। রেকর্ড এই লেনদেনের দিনে ডিএসইতে লেনদেনের শুরুতে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে প্রথম মিনিটেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৫০ পয়েন্টে বেড়ে যায়। তবে শেষদিকে এসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৫৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ছয় পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ২০২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক পাঁচ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ১২৪টির। ৩৭টির দাম অপরিবর্ততি রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক সদস্য বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের মতো ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়নি। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে দেয়া সুযোগ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নিতে হবে। এ কারণে কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজার প্রচুর কালো টাকা ঢুকছে। লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করলে সেটা খুব সহজেই বোঝা যাবে। তিনি আরও বলেন, বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের যে তথ্য দিয়েছেন, অর্থবছর শেষে তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পুঁজিবাজারে তার থেকে অনেক বেশি কালো টাকা ঢুকেছে। কারণ কালো টাকার বড় অংশ এই জুন মাসে ঢুকেছে এবং মাসের বাকি দিনগুলোতেও ঢুকবে। শেয়ারবাজারে এখন যে তেজিভাব রয়েছে, তার পেছনে কালোটাকা বড় ভূমিকা পালন করেছে। যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, এক বছর ধরেই শেয়ারবাজার ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে বেশকিছু বিষয় কাজ করেছে। করোনার কারণে মানুষের বিকল্প বিনিয়োগকারীদের সুযোগ কমে গেছে। ব্যাংকের সুদের হারও কম। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। যা বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। এটিও শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এদিকে রেকর্ড লেনদেনের দিনে টাকার অঙ্কের ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল পলিমার। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ন্যাশনাল ফিড, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের, ইসলামিক ফাইন্যান্স, এনআরবিসি ব্যাংক, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও ফরচুন সুজ। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক বেড়েছে ৮৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৯৬টির দাম কমেছে এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×