ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ সমস্যার কোনটিরও সমাধান নেই

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৫ জুন ২০২১

১৪ সমস্যার কোনটিরও সমাধান নেই

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় মাঝারি বৃষ্টিতেই জলজট, সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না করা, ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাটসহ বগুড়া নগরীর নাগরিক ভোগান্তির ১৪ সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছিল প্রায় দশ বছর আগে। কথা ছিল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ যৌথ উদ্যোগে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান করবে। শুরুতে বেশ ঢাক-ঢোল বাজলেও বাদ্য মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। বিষয়গুলো এখন জলজট বর্জ্যরে নিচে চাপা পড়েছে। এরইমধ্যে বগুড়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম বাদশা পৌর উন্নয়নে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ প্রায় ৯৭ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। পৌরবাসী আশা করে আছে উন্নয়নের চিহ্ন দেখতে পারবে। এদিকে রবিবার থেকে মঙ্গলবার কয়ক দফায় মুষল ধারার বৃষ্টিতে প্রধান সড়কগুলোতে জলজট এবং নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়েছিল। প্রধান সড়কের পানি সরতে কম সময় লেগেছে। নিম্নাঞ্চলের পানির ধারা চারদিনেও যায়নি। সাধারণ লোকের বলাবলি আষাঢ় না পড়তেই এই অবস্থা। ঘোর বর্ষায় না জানি কী হয়। দিনের বৃষ্টির জলজটে সাধারণের ভোগান্তির অন্ত নেই। রাতের বৃষ্টিতে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথাকে মনে হবে কোন জলধারার ওপর দাঁড়িয়ে আছে শহরের সৌন্দর্য। এ সময় পৌরসভার রাস্তার ধারে কোন আবর্জনা (বর্জ্য) জড়ো হয়ে থাকলে বৃষ্টির ধারায় কাদা প্যাকে থকথকে হয়ে থাকে। নগরীর আবর্জনা ফেলে জড়ো করে রাখা হয় মহাসড়কের ধারে বিভিন্ন পয়েন্টে। নিয়ম অনুযায়ী পৌর কর্তৃপক্ষের ট্রাকে করে নির্দিষ্টস্থানে এগুলো ফেলার কথা। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে। প্রথম বাইপাস রোডের ধারে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কাছে কয়েকটি স্থানে কয়েকমাস ধরে নগরীর বর্জ্যরে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। শহরের ভেতরেই আবর্জনার ভাগার। এরমধ্যে সবুজ ঘাস ও গাছও গজিয়ে উঠেছে। সড়কে যানবাহনে চলাচল করলে বিশ্রি গন্ধ নাকে আসে। পৌর কর্তৃপক্ষের সামনে এতকিছু ঘটলেও নীরব ভূমিকা। অভিযোগ দিয়েও কাজ হয় না জানালেন এলাকাবাসী। ক’জন জানালেন সাবেক মেয়র মাহবুবর রহমানের কাছে এই বিষয়ে কথা বললেও কোন কাজ হয়নি। বর্তমান মেয়রের কাছে আশা করছেন কিছু একটা করবেন। বগুড়া নগরীর ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়নের ধারা এখনও শুরু হয়নি। তবে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ শেখ ড্রেন পরিষ্কার ড্রেন উঁচু করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, রাস্তার আবর্জনা দূর করা, সড়ক বাতি বাড়িয়ে আলোকিত করা, মশক নিধনে ফগার মেশিনে স্প্রেসহ নানা কাজ শুরু করেছেন। নির্বাচনের আগে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা দ্রুত পালন করার চেষ্টা করছেন। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় তিনি সচেতনতা গড়ে তুলছেন। তরুণ এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। বগুড়া পৌরসভার ওয়ার্ড ২১টি। আয়তন ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার। ২০০৪ সালে ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোটিার এলাকার বগুড়া পৌরসভা রাতারাতি প্রায় পাঁচগুণ বাড়ানো হয়। দুইটি ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভার মধ্যে পড়ে। এই পৌরসভা দেশের সবচেয়ে বড়। পৌরসভার বর্ধিত এলাকাগুলোর অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। নাগরিক সুবিধা খুবই অপ্রতুল। শুধু কর বেড়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়নে গত টার্মে এগিয়েছিল ৩ নম্বর ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর করিবাজ তরুন চক্রবর্ত্তী এবারও নির্বাচিত হয়েছেন। পৌরবাসী এখন দেখছে নতুন মেয়রের আমলে পৌরসভার উন্নয়ন কেমন হয় এবং কোন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উন্নয়নে এগিয়ে নিয়ে যায়। বগুড়া পৌরসভার জনসংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছেন ৭ হাজার ৮শ’ জন। জনঘনত্ব বেশি। বাসাবাড়ির সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার। ৮০ শতাংশই বহুতল ভবন। এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত যে সমস্যার মধ্যে পড়ে সেগুলো হলো : কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি, ড্রেনেজ সমস্যা, প্রধান সড়কগুলোতে নিত্য যানজট (করোনাকালেও তা থেমে নেই), যেখানে সেখানে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও টোটো স্ট্যান্ড। দিনের বেলা ময়লা অপসারণ, সড়ক দ্বীপে গাছের ডালপালা না ছাটা, ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো এবং অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ, অধিকাংশ ল্যাম্পপোস্টে বাতি না থাকা, যেখানে সেখানে কোচিং সেন্টার, নিয়মিত রাস্তা সংস্কার না করা রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে বহুতল ভবন নির্মাণ, এমনকি সরু ফিডার রোডের ধারে বহুতল ভবন নির্মাণ, গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থান না থাকা নক্সা বহির্ভূত ভবন নির্মাণে তদারিক না করা। কথা ছিল, বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। সমাধানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ওই পর্যন্তই। দশ বছরেও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টো ভোগান্তি দিন দিনে বেড়ইে চলেছে। করোনাকালে সাধারণের চলাচলেও বিধি নিষেধ নেই। এখনও অনেকেই মাস্ক পরে না। সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেই। পৌর পার্ক এখনও বন্ধ। লোকজনের কথা সকাল বিকেল খোলা থাকলে সবুজে বেস্টনিতে অক্সিজেন নেয়া যেত। যারা ব্যয়াম করেন তারাও যেতে পারত। বিষয়টিতে গুরুত্ব নেই। অথচ শহরে জনাচল বেড়েই চলেছে।
×