ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনা ভীতি উপেক্ষা করে মার্কেটে মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ২৩:২০, ৫ মে ২০২১

করোনা ভীতি উপেক্ষা করে মার্কেটে মানুষের ঢল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা ভীতি উপেক্ষা করে ঈদের কেনাকাটার জন্য নগরবাসী ছুটে যাচ্ছেন মার্কেট শপিংমল ও বিপণিবিতানে। দুপুরের পর রাজধানীর বেশিরভাগ মার্কেটে মানুষের ঢল নামছে। সবার চাই নতুন পোশাক, প্রসাধন ও গহনাসামগ্রী। এ কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিকে সম্পূর্ণ তুচ্ছজ্ঞান করে কেনাকাটার জন্য ক্রেতারা এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে দৌড়ঝাঁপ করছে পছন্দের প্রিয় জিনিসটি কিনতে। গত এক সপ্তাহ ধরে মার্কেটগুলোতে ভিড় লেগে আছে। সড়কে সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিক্সা-সিএনজির অতিরিক্ত ভাড়ায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। প্রতিটি মার্কেটের সামনে দেখা যাচ্ছে গাড়ির জট। ঈদ সামনে রেখে এই ভিড় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করছে। কিন্তু এরপরও সজাগ হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। মাস্ক ছাড়াই ক্রেতারা ঢুকে পড়ছে ভিড়ের মধ্যে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের বড় ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার মার্কেট শপিংমল বিপণিবিতান ও ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা দেদার ঈদের কেনাকাটা করছেন। দীর্ঘ একবছরেরও বেশি সময়ের পর বেচাবিক্রি বাড়ায় খুশি দোকানদার ও মার্কেট ব্যবসায়ীরা। তাদের আশা, এভাবে ঈদ পর্যন্ত বেচাবিক্রি থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন তারা। তবে মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। কারণ যেভাবে মার্কেটে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর বেশিরভাগ মার্কেটে বেলা দশটার পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। শেষ বিকেলে গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ইসমাইল ম্যানশন, ধানম-ি হকার্স এবং নিউমার্কেট ঠাসা ছিল মানুষে। ঈদ শপিংয়ের ব্যাগ ছিল সবার হাতে হাতে। এ প্রসঙ্গে গাউছিয়া মার্কেটের জ্যোতি শাড়ির এক কর্মকর্তা জানান, ঈদ সামনে রেখে তাদের ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। জমে উঠেছে ঈদের মার্কেট। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে তারা পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তবে কোন ক্রেতা মাস্ক ব্যবহার না করলে তাদের দ্রুত মাস্ক ব্যবহারের জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত স্যানিটাইজারও হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা করেছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। চাঁদনী চক মার্কেটে জুয়েলারি সামগ্রী কিনছিলেন ধানম-ির বাসিন্দা ফারজানা খান। ঈদের কেনাকাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, কেনাকাটার জন্যই তো মার্কেটে আসা হয়েছে। পরিবারের সবার জন্য এবার ঈদের কেনাকাটা করা হবে। এ কারণে শুধু এক মার্কেট নয়, বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে ঘুরে তাকে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। করোনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার ভয় একটু আছে। কিন্তু এই ভয়ে বসে থাকলেও তো আর ঈদের কেনাকাটা করা যাবে না। এ কারণে মার্কেটে আসতে হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হয়েছে শপিংমলগুলো। বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বড় বড় শপিংমলগুলোতে কেনাকাটা বেড়েছে। সরেজমিনে বসুন্ধরা শপিংমলে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতাসাধারণের সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার লম্বা লাইন ধরেছেন। কিন্তু ভিড়ের কারণে তা পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা যাচ্ছে না। মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা এই শপিংমলে প্রবেশের সময় নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তাকর্মীরা চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। হুমড়ি খেয়ে ক্রেতারা ঢুকে পড়ছেন মলটিতে। শপিংমলটির ভেতরে বিভিন্ন লেভেলে গিয়ে দেখা গেছে, মূলত পোশাক এবং জুতার দোকানে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড়। তুলনামূলক কম ভিড় দেখা গেছে মোবাইল ফোনের দোকানগুলোয়। অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা জানান, গত চার-পাঁচ দিন ধরে তাদের বিক্রি ভাল হচ্ছে। অন্যদিকে, রাজধানীর আরেক শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়েও দেখা গেছে নানা বয়সী মানুষের ব্যাপক ভিড়। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের আনাগোনা ছিল এই শপিংমলে। জনপ্রিয় পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোর শোরুমে পা ফেলার জায়গা ছিল না। দেশীয় ব্র্যান্ড আড়ংয়ে লম্বা লাইন ধরে ক্রেতাদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে রাখা হয়েছে বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ২০-৬০% ডিস্কাউন্ট অফার। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বাইরে অন্য দোকানগুলোতেও নানা ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। রাজধানীর নিউমার্কেটে একজনের সঙ্গে আরেকজনের গা ঘেঁষে ঘেঁষে চলতে দেখা গেছে। অভিভাবকদের সঙ্গে ঈদ শপিংয়ে মার্কেটে আসা শিশুদেরকেও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, সরকারী ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড় অনেক বেশি বাড়ে। ঈদ সামনে রেখে প্রতিটি মার্কেটে বিক্রিও হচ্ছে সন্তোষজনক। ঈদ শপিংয়ে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে রাজধানীর কিছু কিছু সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। মঙ্গলবার ঢাকার বেশির ভাগ সড়কে যানজট তৈরি হয়। ঈদের কেনাকাটার জন্য নগরবাসী বাইরে বের হওয়ার কারণে সিএনজি রিক্সা, অটোরিক্সা এবং রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছে না। দুএকটি মিললেও তাতে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিক্সা-সিএনজি ভাড়া গুণতে মানুষের পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
×