ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি পরীক্ষার তাগিদ

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৪ মে ২০২১

করোনা নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি পরীক্ষার তাগিদ

অপূর্ব কুমার ॥ প্রকোপ হ্রাস, লকডাউন এবং বিদেশগামীদের সংখ্যা কমায় গত কয়েকদিন ধরে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে। একই সঙ্গে অবশ্য কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা এবং হার। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়া এবং লকডাউনসহ সরকারের বেশকিছু পদক্ষেপের কারণেই কমেছে সংক্রমণ। একই সঙ্গে কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আরও বেশি পরীক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের মার্চে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে শুরুর দিকে শনাক্তের হার কম ছিল। পরে গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর ধীরে ধীরে নতুন রোগী শনাক্তের হার কমতে থাকে। ১৮ জানুয়ারির পর থেকে সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে ছিল। মাঝখানে সংক্রমণ তিন শতাংশের নিচেও নামে। গত ৯ এপ্রিল তা ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশে ওঠে। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। মৃত্যুর হারও বাড়তে থাকে। তবে এখন আক্রান্তের হার ও মৃত্যু দুটোই কমেছে। সোমবারে সংক্রমণের হার কমে ৮ শতাংশে নেমেছে। গত বছর মার্চ মাসে করোনা রোগী শনাক্তের পর ধীরে ধীরে পরীক্ষা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে টেস্ট ল্যাব স্থাপন করা হয়। প্রথম দিকে কয়েক হাজার পরীক্ষা করা হলেও ধীরে ধীরে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে থাকে। চলতি বছর ১২ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ করোনা পরীক্ষা করা হয় ৩৪ হাজার ৯৬৮টি। এতে ৭ হাজার ২০১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এর পর থেকে প্রতিদিনই নমুনা পরীক্ষা কমতে থাকে। সর্বশেষ রবিবার সারাদেশে ৪২০টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হয় ১৯ হাজার ৪১৩ জনের। এতে শনাক্ত হয়েছে ১,৭৩৯ জন। কঠোর লকডাউনে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে। কঠোর লকডাউনের কারণে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ, বিদেশগামীদের সংখ্যা কমে যাওয়াও করোনা পরীক্ষা কমার বড় কারণ। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের গমন ছাড়া বিদেশে যাওয়ার সুযোগ কম। যার কারণে করোনা পরীক্ষার বড় একটি অংশ এখন নিষ্ক্রিয়। তাই নমুনা সংগ্রহ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইন ৩৩৩-১, আর ১৬২৬৩ তে ফোন দিতে হচ্ছে। এই হটলাইন নম্বর দুটি বেশিরভাগ সময়েই ব্যস্ত থাকছে। সৌভাগ্যক্রমে হটলাইন নম্বরে ফোন দিয়ে পেলেও নমুনা সংগ্রহের দিনক্ষণ পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের জনবল সঙ্কট রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সীমিত আকারে চালু থাকার কারণে বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহ কমেছে। বিদেশগামী প্রত্যেক যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল। কারণ, নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ ছাড়া বিদেশে যাওয়া যায় না। যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় নমুনা সংগ্রহ কমেছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে লঞ্চ, বাস, ট্রেনসহ অন্য পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে, এমন ব্যক্তিরাও গুরুতর অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে নমুনা পরীক্ষা কমেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামলেও আরও বেশি নমুনা পরীক্ষার করা উচিত। কারণ দ্রুত রোগী শনাক্ত করা হলে সংক্রমিত ব্যক্তিকে আইসোলেশন করার পাশাপাশি কন্টাক্ট ট্রেসিং করে তার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন করা সম্ভব। এতে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করা সহজ হয়। দীর্ঘদিনের কঠোর লকডাউনের কারণে করোনার পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে যাতায়াত একটি বড় সমস্যা বলে অস্থায়ী বুথ স্থাপনের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহের পরামর্শও দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ অসিম কুমার নাথ বলেন, সরকারের লকডাউন কর্মসূচীর ফলে আগের তুলনায় হাসপাতালে রোগীর চাপ কমেছে। এখন এক তৃতীয়াংশ রোগীর আসন ফাঁকাই থাকছে। এছাড়া নতুন রোগী শনাক্তকরণে করোনা পরীক্ষার হারও কমেছে। তিনি বলেন, মৃদু লক্ষণ নিয়ে করোনা পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের সংখ্যা কমেছে। এছাড়া বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা ও চাকরিপাত্রীদেরও এখন পরীক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে না। তাই নমুনা সংগ্রহও কমেছে। আগে মুগদা হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগী নমুনা জমা দিতে আসতো। তার চেয়ে অনেক কম রোগী আসছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দেশের যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। আগামীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং আন্তঃজেলা বাস চলাচল শুরুর পর বোঝা যাবে সংক্রমণের হার কোন দিকে যাবে।
×