ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ১৩ এপ্রিল ২০২১

এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গৃহস্থালি রান্নায় ব্যবহৃত লিকুইড পেট্রোলিয়াম (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। মূসকসহ বেসরকারী খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপি গ্যাসের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯৭৫ টাকা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৫৯১ টাকা। এছাড়া, গ্রাহক পর্যায়ে সবচেয়ে ছোট বেসরকারী এলপিজি সাড়ে ৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৪৪৭ টাকা, আর সবচেয়ে বড় ৩০ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩ হাজার ৬৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিইআরসির আদেশে, গাড়িতে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের দাম প্রতি লিটার ৪৭ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার (১২ এপ্রিল) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। নতুন এই দাম সোমবার (১২ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে প্রতি মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই দাম পরিবর্তন করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতি মাসের শুরুতে নতুন দামের ঘোষণা দেবে তারা। সেই হিসেবে মে মাসে আবারও এই দাম পরিবর্তন হবে। বিইআরসি’র আদেশে সাড়ে ৫ কেজি, সাড়ে ১২ কেজি, ১৫ কেজি, ১৬ কেজি, ১৮ কেজি, ২০ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৩ কেজি, ৩৫ কেজি ও ৪৫ কেজি এলপিজির দাম পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই আদেশ দেয়। অনলাইনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহী, বজলুর রহমান, মোঃ কামরুজ্জামান, সচিব রুবিনা ফেরদৌসীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল জলিল বলেন, গণশুনানি শেষে সবকিছু বিচার-বিবেচনা ও দাখিল করা তথ্য যাচাই করে একাধিক সভার মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করেছে কমিশন। এই দাম ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, দাম সারাদেশে অভিন্ন থাকবে। ভোক্তারা বাড়তি দাম দেবেন না। কমিশনের আদেশ বাস্তবায়ন করতে লাইসেন্সধারীরা বাধ্য। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, বেসরকারী এলপিজি মজুতকরণ ও বোতলজাতকরণ লাইসেন্সিগুলোর সরবরাহ করা এলপিজির দাম প্রতি কেজি ৮১ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ১২ কেজি এলপিজির দাম ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫.৫, ১২.৫, ১৫, ১৬, ১৮, ২০, ২৫, ৩০, ৩৩, ৩৫ ও ৪৫ কেজি এলপিজির দামও বিইআরসি আদেশে পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। বিইআরসির আদেশে বলা হয়, সাড়ে ৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৪৪৭ টাকা, ১২ কেজির দাম ৯৭৫ টাকা, সাড়ে ১২ কেজির দাম ১ হাজার ১৭ টাকা, ১৫ কেজির দাম ১ হাজার ২২০ টাকা, ১৬ কেজির দাম ১ হাজার ৩০১ টাকা, ১৮ কেজির দাম ১ হাজার ৪৬৪ টাকা, ২০ কেজির দাম ১ হাজার ৬২৭ টাকা, ২২, কেজির দাম ১ হাজার ৭৮৯ টাকা, ২৫ কেজির দাম ২ হাজার ৩২ টাকা, ৩০ কেজির দাম ২ হাজার ৪৪০ টাকা, ৩৩ কেজির দাম ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ৩৫ কেজির দাম ২ হাজার ৮৪৬ টাকা, ৪৫ কেজির দাম ৩ হাজার ৬৫৯ টাকা নির্ধারণ করেছে কমিশন। প্রসঙ্গত, সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মার্চ মাসের জন্য সৌদি আরামকো কর্তৃক প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপি যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৬২৫ মার্কিন ডলার এবং ৫৯৫ মার্কিন ডলার অনুযায়ী প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ অনুপাত ৩৫:৬৫ বিবেচনায় প্রোপেন ও বিউটেনের গড় সৌদি সিপি প্রতি মেট্রিক টন ৬০৫ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার বিবেচনা করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মাসের শেষে আবারও আরামকোর দাম পরিবর্তন হলে বিইআরসিও নতুন দাম নির্ধারণ করবে। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানি করে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর আড়ে গত বছরের ডিসেম্বরে বিইআরসিতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এলপি গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। গণশুনানির আগে তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এরপর গণশুনানিতে সরবরাহকারী কোম্পানির প্রস্তাব, কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, বাসা-বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় বেসরকারী খাতের কোম্পানিগুলো। আর সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার কথা বলে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। বেসরকারী খাতে প্রায় ২০ বছর ধরে এলপি গ্যাসের ব্যবসা চলে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বাজারে এর চাহিদা বাড়ছে। ফলে বাড়ছে ব্যবসার পরিধিও। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও গ্রাহকের জন্য এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি বিইআরসি। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে বাধ্য হয়ে দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে বিইআরসি।
×