ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আল্লামা শফী হত্যা মামলায় ৪৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ১৩ এপ্রিল ২০২১

আল্লামা শফী হত্যা মামলায় ৪৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

শংকর কুমার দে ॥ হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাকালীন আমির আল্লামা শফীকে হত্যার প্ররোচনা মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হেফাজতের ৭ নেতাকে আটক করা হয়েছে। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে ‘জ্বালাও পোড়াও’ মামলায় নেয়া হয়েছে ৭ দিনের রিমান্ডে। এ ছাড়াও ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার আসামিদের গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত ছিল। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে তার যেই বিনোদন সঙ্গিনীর ফোনালাপ উদ্ধার করা হয়েছে তিনি মামুনুলের কথিত তৃতীয় স্ত্রী জান্নাত ফেরদৌস লিপি। কথিত তৃতীয় স্ত্রীর খোঁজ না পেয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করেছেন কথিত তৃতীয় স্ত্রীর ভাই মোঃ শাহাজাহান। মামুনুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, নাশকতা, নৈতিক স্খলনসহ একাধিক মামলার আসামি হিসাবে তাকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী আবারও সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, সারাদেশে গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতাদের মুক্তি না দিলে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সূত্রে জানা গেছে, আল্লামা শফীকে হত্যার প্ররোচনা মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হক ও আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বর্তমানে হেফাজতের আমির ও মামুনুল হক যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আহমদ শফীর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। গত বছরের ডিসেম্বরে আল্লামা শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে হেফাজতের বর্তমান কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। চট্টগ্রামে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ মামলাটি করেন আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, আহমদ শফীর শ্যালক মঈনউদ্দিন মামলায় ৩৬ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ৯০ জনকে আসামি করেন। সুনির্দিষ্ট ৩৬ জন সকলেই হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী। তদন্তে ৫ আসামিকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যাদের আসামি করে মামলাটি করা হয় তারা হলেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, জাকরিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আবদুল মতিন, মোঃ শহীদ উল্লাহ, মোঃ রিজওয়ান আরমান, মোঃ নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমেদ, মীর জিয়া উদ্দিন, আহমেদ, মাহমুদ, আসাদ উল্লাহ, জোবায়ের মাহমুদ, এইচএম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ, আহমদ কামাল, নাসির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাশেমী, মোঃ হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জোবায়ের, মোঃ আমিনুল, রফিক সোহেল, মুবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সাইম উল্লাহ ও হাসান জামিল। দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগ ছিল, শতবর্ষী আহমদ শফী মৃত্যুর পূর্বে প্রায় তিনদিন মাদ্রাসায় অবরুদ্ধ ছিলেন। জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের বিক্ষোভের মুখে আটক অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। মামলায় আহমদ শফীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, শফীর মৃত্যুর পূর্বে ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর এলাকায় মামুনুল হকসহ আসামিরা বৈঠক করেন। সেই বৈঠক থেকে শফীর পুত্র আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে চাপ সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত হয়। আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা না হলে আহমদ শফীকে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর আহমদ শফী মাদ্রাসায় অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানো হয়। তারা উগ্র ভাষায় মাদানীর নামে গালাগাল দেয়। একপর্যায়ে উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা এবং হেফাজত নেতারা আহমদ শফীর কক্ষে প্রবেশ করে সরকারের দালাল বলে গালমন্দ করেন। এছাড়াও হেফাজতের আমিরের পদে জুনায়েদ বাবুনগরীকে বসানোর দাবিও জানানো হয়। কিন্তু প্রচ- চাপের মুখেও আহমদ শফী তখন পদত্যাগে রাজি হননি। এ অবস্থায় উচ্ছৃঙ্খলরা আহমদ শফীর চেয়ারে লাথিও মারেন। ক্ষুব্ধদের কয়েকজন আহমদ শফীর নাক থেকে অক্সিজেন খুলে ফেললে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং আহমদ শফী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। এরপর তাকে অধিকতর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর পিবিআই’র ডিজি বনজ কুমার মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনাটি ‘দ-ার্হ নরহত্যা’ (কালপেবল হোমিসাইড)। এ সংক্রান্ত আইনী ধারা পিসি-২৯৯ হচ্ছে সংজ্ঞা। আর ৩০৪/ক পিসি হচ্ছে শাস্তির বিধান। ২৯৯ ধারায় বলা আছে, যে ব্যক্তি কোন কার্যের সাপেক্ষ মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায় বা মৃত্যু ঘটানোর সম্ভাবনার রয়েছে-এরূপ দৈহিক জখম ঘটানোর অভিপ্রায়ে বা উক্ত কাজের সাহায্যে সে মৃত্যু ঘটাতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেনেও অনুরূপ কাজের সাহায্যে মৃত্যু ঘটায়, সে ব্যক্তি দ-ার্হ নরহত্যার অপরাধ অনুষ্ঠান করে বলে গণ্য হবে। মামলার তদন্তে অভিযুক্ত ৩৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে অভিযোগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে অভিযুক্ত করা হয়েছে ১২ জনকে। এদের মধ্যে অন্যহত হলেন হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। পিবিআই সূত্রে কোন ৫ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানাতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন। নতুন অভিযুক্তদের মধ্যে শুধুমাত্র জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম উল্লেখ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর হেফাজত নেতাকর্মীদের মধ্যে অজানা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় বাবুনগরীসহ আসামিদের অনেকেই হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা অভ্যন্তরে ছিলেন বলে জানা গেছে। পিবিআই সূত্র জানায়, এদের গ্রেফতারে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে। আজিজুল হক ইসলামাবাদী ৭ দিনের রিমান্ডে ॥ হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার (১২ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী রিমান্ডের এই আদেশ দেন। হেফাজতের শাপলা চত্বর কা-ে ২০১৩ সালে হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। সেই মামলায় গ্রেফতার আজিজুলকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক রিমান্ডের এই আদেশ দেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম বলেন, ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুরের অভিযোগে আজিজুল হক ইসলামাবাদীর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা হয়। ওই মামলায় রবিবার (১১ এপ্রিল) অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ইসলামাবাদীর ছোট ভাই ফয়েজুল হক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘বড়ভাই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তিনি ঢাকা ডিবি অফিসে আছেন, সুস্থ আছেন। উদ্বিগ্ন না হয়ে সবাই ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। নুুরুল ইসলাম জিহাদী ও মুফতি ইলিয়াস গ্রেফতার ॥ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহঅর্থসম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস হামিদিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের জরুরী বৈঠক শেষে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুফতি ইলিয়াসের ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা মাহমুদ। তিনি জানান, রবিবার নেতৃবৃন্দের জরুরী বৈঠক শেষে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে ঢাকা ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে র‌্যাবের একটি দল সাদা পোশাকে হুজুরের ভাড়া করা গাড়ির গতিরোধ করে। এরপর তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তবে আমরা যেকজন গাড়িতে ছিলাম তাদের র‌্যাব আটক করেনি। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, রবিবার হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের বৈঠক শেষে ঢাকায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি মুফতি ইলিয়াস হামিদিকে আটক করেছে র‌্যাব। একই বৈঠক থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে আশ্চর্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত তার কোন খবর পায়নি পরিবার। তিনি আরও বলেন, তার মোবাইল-ফোন এবং তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তির মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও তাকে গ্রেফতারের কোন খবর পাওয়া যায়নি। মাওলানা ইসলামাবাদী কি গ্রেফতার হয়েছেন নাকি তাকে গুম করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হেফাজত নেতৃবৃন্দকে এভাবে গ্রেফতার ও গুম করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী আটক ॥ ওয়াজ মাহফিলে মুসল্লিদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার বিকেল ৫টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া বাসা থেকে ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীকে আটক করে জেলা ডিবি পুলিশ। রাতে গণমাধ্যমকে তাকে আটকের খবর নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে ওয়াসেক বিল্লাহর উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করার কয়েকটি ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। ওইসব বক্তব্য ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করাসহ মানুষকে ভিন্ন পথে ধাবিত করার একটি অপপ্রয়াস। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওয়াসেক বিল্লাহ এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আজ সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী উগ্র কণ্ঠে বলছেন, ‘খেলাফত তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হলে সব সাংবাদিককে ধরে ধরে জবাই করা হবে। দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অনেক রক্ত দেয়া হয়ে গেছে। এখন আর রক্ত দেব না।’ এখন থেকে রক্ত নেয়া হবে বলে লাফিয়ে ওঠেন। ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়ার ফজলুল হক মারকাযুল উলুম মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজী ও গণিত বিষয়ে শিক্ষা দেন। ওই মাদ্রাসার নূরানি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ মাহমুদ জানান, নোমানীর বাড়ি ও জন্ম নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায়। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছেন। ২০১২ সালে তিনি হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন। এরপর থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে আছেন। জুরাইন থেকে ৪ হেফাজত নেতা আটক ॥ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে নারীসহ আটকের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ভাংচুর ও মহাসড়কে নাশকতার মামলার প্রধান আসামিসহ দলটির চার নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১। গ্রেফতার নেতারা হলেন উপজেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি ইকবাল হোসেন (৫০), সোনারগাঁও উপজেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মহিউদ্দিন (৫০), উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সেক্রেটারি শাহাজাহান শিবলী (৪৩) ও উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম ( ৪৯)। এই মামলার প্রধান আসামি ইকবাল হোসেন। সোমবার সকালে র‌্যাব ১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে ভাংচুর ও মহাসড়কে নাশকতা সৃষ্টির মামলার প্রধান আসামি মাওলানা ইকবালসহ চার হেফাজত নেতাকে রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ১১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃতরা মামলার এজাহারভুক্ত ১, ২, ৪ ও ৬ নম্বর আসামি। তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে মাওলানা ইকবাল ও মাওলানা মহিউদ্দিন হেফাজতের বড় নেতা। গ্রেফতার চারজনকে সোনারগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারীসহ অবরুদ্ধ থাকার পর সহিংসতায় জড়িতের অভিযোগে স্থানীয় হেফাজত নেতা হাসান মিয়া ও শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে তাদের আটক করা হয়। সোনারগাঁও থানার ওসি মোঃ হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লোকমান হোসেন আমিনী আটক ॥ নারয়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থেকে হেফাজত ইসলামের অন্যতম নেতা এবং স্থানীয় মর্তুজাবাদ জামে মসজিদের খতিব মুফতি লোকমান হোসেন আমিনীকে (৪৫) আটক করেছে পুলিশ। ফেসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস প্রদান এবং হেফাজতের ডাকা হরতালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় দাঙ্গা- হাঙ্গামার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে মর্তুজাবাদ এলাকা থেকে আটক করা হয়। রূপগঞ্জ থানার ওসি এইচ এম জসীম উদ্দিন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আটক লোকমানকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামুনুল হকের তৃতীয় স্ত্রীর ভাইয়ের জিডি ॥ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সঙ্গে তার বিনোদন সঙ্গিনীর ফোনালাপের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দাবি করা হয়েছে এই নারী মামুনুলের কথিত তৃতীয় স্ত্রী। তার নামও জান্নাত ফেরদৌস লিপি। লিপির ভাই মোঃ শাহজাহান বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করেছেন। লিপির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে জিডিতে। জিডিতে শাহজাহান উল্লেখ করেছেন, তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়র বানারহাওরা এলাকায়। মোঃ শাহজাহান বলেছেন, গত ১০ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে মামুনুল তাকে বলেছেন, তিনি তার বোন জান্নাতুল ফেরদৌস লিপিকে বিয়ে করেছেন। জিডিতে শাহজাহান বলেন, গত ৭ এপ্রিল তার বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস লিপির সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। ওই সময় লিপি তার ভাই শাহজাহানকে জানান, তিনি ওই সময় মোহাম্মদপুরে দিলরুবা নামে এক নারীর বাসায় অবস্থান করছেন। দিলরুবা মামুনুল হকের বোনের নাম। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, মোঃ শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি রবিবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করেছেন। জিডির নম্বর ৮৩৫। জিডিতে শাহজাহান উল্লেখ করেন, ‘১০ এপ্রিল (শনিবার) আল্লামা মামুনুল হক আমাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় ডেকে জানায়, আমার বোন জান্নাতুল ফেরদৌস লিপির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। ওই সময় মামুনুল একটি চুক্তিনামা দেখান বলেও সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন শাহজাহান। তবে তার বোনের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ এখনও হয়নি বলেও জিডিতে লিখেছেন তিনি। বাবুনগরীর হুমকি ॥ হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও সহ-অর্থ সম্পাদক মুফতি ইলিয়াস হামিদিসহ সারাদেশে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাবুনগরী বলেন, ‘পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে গভীর রাতে হানা দিচ্ছে। নির্বিচারে গ্রেফতার করছে। কয়েকদিন আগে আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচীতে গুলি চালিয়েছে। আবার এসব ঘটনার মামলায় আমাদের আসামি করেছে।’ হেফাজতের আমির বলেন, ‘এত জুলুমের পরও হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। হেফাজতের সরলতাকে দুর্বলতা মনে করলে, সরকারকে এর চরম মাশুল দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে এসব কর্মকা- বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। নিরপরাধ মানুষকে এভাবে গ্রেফতার ও মামলা বরদাশত করা হবে না। হেফাজতে ইসলাম দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা চায়। তবে জুলুমের কারণে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুমকি দেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
×