ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহেশখালীতে হচ্ছে এলপিজি মাদার টার্মিনাল

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৯ মার্চ ২০২১

মহেশখালীতে হচ্ছে এলপিজি মাদার টার্মিনাল

রশিদ মামুন ॥ দেশে প্রথম এলপিজি মাদার টার্মিনাল হচ্ছে মহেশখালীতে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে দুই বিদেশী কোম্পানি টার্মিনালটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে। পঞ্চাশ হাজার মেট্টিক টন মজুদ ক্ষমতার টার্মিনালটি উৎপাদনে এলে প্রতি টন এলপিজির পরিবহন ব্যয় ৪০ ডলার পর্যন্ত কমে যাবে। এলপিজি বাণিজ্যে সরকারী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে দাম কমে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। বিপিসি, জাপানী কোম্পানি মারুবিনি এবং যুক্তরাজ্যের ভিটল পাওয়ারকো টার্মিনাল নির্মাণের জন্য শীঘ্রই সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা গত ৩ মার্চ এ সংক্রান্ত জ¦ালানি বিভাগের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেছে। গতকাল সোমবার জ¦ালানি বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের চিঠি পেয়েছে। শীঘ্রই এমওইউটি সই করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানা গেছে। বেসরকারী এলপিজি বটলিং প্ল্যাট নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এখন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশ থেকে দুই থেকে তিন হাজার মেট্টিক টন জাহাজীকরণ এলপি গ্যাস আমদানি করে। সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া থেকে ছোট আকারের জাহাজের পরিবহন খরচ পড়ে টন প্রতি ১০০ থেকে ১১০ ডলার। তবে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার মেট্টিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ পরিবহন খরচ টন প্রতি সর্বোচ্চ হবে ৬৫ থেকে ৭০ মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রতি টনে পরিবহন ব্যয় কমে যাবে ৪০ ডলার পর্যন্ত। জ¦ালানি বিভাগ বলছে এলপিজির একটি বড় অংশ হচ্ছে পরিবহন ব্যয়। পরিবহন ব্যয় কমে গেলে এলপিজির দাম একেবারে অনেকটা কমে যাবে। ভারত এলপিজি যে দামে পরিবহন করে বাংলাদেশ তার দ্বিগুণ দামে এলপিজি পরিবহন করে। ফলে ভারতে এলপিজির দাম বাংলাদেশের তুলনায় সব সময় কম থাকে। জানতে চাইলে জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এতে করে এলপিজির একটি অংশ সব সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সরকার এলপিজি বিশ^বাজার থেকে নির্দিষ্ট দামে কিনবে। এরপর পরিবহন ব্যয় এবং টার্মিনাল চার্জ যোগ করে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করবে। ফলে এলপিজির দর বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে না। এখন এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থাই সরকারের হাতে নেই। একবার টার্মিনাল হয়ে গেলে ভোক্তাকে স্বস্তি দেয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এলপিজির মাদার টার্মিনাল হলে নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে সরকারের হাতে। বেসরকারী উদ্যোক্তারা নিজের ইচ্ছামতো দর নির্ধারণ করে। ভবিষ্যতে সরকারের কাছ থেকে কাঁচামাল কিনলে এটি করার কোন সুযোগ থাকবে না। সঙ্গত কারণে এখন বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জ¦ালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিপিসি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত এলপিজি টার্মিনালের অপারেশন ক্ষমতা হবে বার্ষিক প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ মেট্টিক টন। টার্মিনালের জেটিতে প্রায় ৪০ হাজার মেট্টিক টন ধারণ ক্ষমতার এলপি গ্যাসবাহী জাহাজ নোঙ্গর করার ব্যবস্থা থাকবে। টার্মিনালের মজুদ ক্ষমতা হব ন্যূনতম ৫০ হাজার মেট্টিক টন। টার্মিনাল থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার মেট্টিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ দিয়ে দেশের এলপি গ্যাস কোম্পানিকে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এখন দেশে ২৭টি এলপিজি বটলিং প্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টির নিজস্ব জেটি রয়েছে। বাকি সাতটি প্ল্যাট অন্যের জেটির মাধ্যমে এলপিজি আমদানি করে। কিন্তু সবগুলো জেটি ছোট আকারের হওয়াতে এলপিজি বড় জাহাজ নোঙ্গর করতে পারে না। দেশে আরও ছয়টি এলপিজি বটলিং প্ল্যাট শীঘ্রই উৎপাদন আসব। আমদানির সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এলপিজি বটলিং প্ল্যাটসমূহ মংলায় এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। জ¦ালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব জায়গায় নদীর গভীরতা কম থাকায় বেসরকারী এলপিজি কোম্পানিগুলো ছোট ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করে। ফলে এলপি গ্যাস আমদানি বাবদ পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পায়। বড় জাহাজে এলপিজি আমদানি করা হলে এলপি গ্যাস আমদানি বাবদ পরিবহন খরচ কমে আসবে। তবে দেশে যারা এলপিজি ব্যবসা করেন তারা এ ধরনের বড় প্রকল্প নির্মাণে আগ্রহী নয়। এজন্য বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। যার সংস্থান করা কঠিন। বিপিসি সূত্র বলছে, প্রকল্পটি হবে ৩০৫ মিলিয়ন ডলারের। এতে বিপিসি এবং ভিটল পাওয়ারকোর ৩০ শতাংশ করে ৬০ শতাংশ এবং মারুবিনির ৪০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকছে। বিল্ট ওন অপারেট (বিওটিটি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। মহেশখালী বিদ্যুত জ¦ালানি হাবে এই প্রকল্পের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর ১০ বছর পর বিপিসির কাছে শতভাগ শেয়ার হস্তান্তর করবে ভিটল এবং মারুবিনি। অর্থাৎ তখন প্রকল্পটির পুরো মালিকানা সরকারের হাতে চলে আসবে। এর আগে সরকার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। দুটি এলএনজি টার্মিনালে সরকারের কোন অংশীদারিত্ব নেই। সরকার শুধু নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ দিয়ে সেখান থেকে এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে।
×