ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বাঙালী জাতি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব ইনশাল্লাহ

সত্য দাবিয়ে রাখা যায় না ॥ ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণই প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৮ মার্চ ২০২১

সত্য দাবিয়ে রাখা যায় না ॥ ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণই প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটা নিষিদ্ধ ছিল। এ ভাষণ বাজানো যাবে না। অলিখিত একটা নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু ইতিহাসকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। আর বাঙালীকে দাবায়ে রাখা যায় না, এটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে। তাই দাবায়ে রাখতে পারে নাই। আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি যেমন পেয়েছে, তেমনই জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতার যুদ্ধ হবে, সেই কথাটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণেই স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই এটা একদিক দিয়ে বলতে গেলে সাতই মার্চই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। তিনি বলেন, বাঙালী জাতি আজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ, জাতির পিতার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা আমরা পূরণ করব। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। সেই মুক্তির পথে আমরা অনেক দূরে এগিয়ে গেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। রবিবার বিকেলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২১’ উদ্যাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন মুজিববর্ষ উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবু নাসের চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের এই ভাষণটা অনুবাদ প্রচার করা হচ্ছে। ইউনেস্কো সেই পদক্ষেপটা নিয়েছে। প্যারিসের যিনি আমাদের রাষ্ট্রদূত তিনি আমাদেরকে এটা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইতিহাসকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। তাই আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শুধু রণকৌশলেই দিয়ে যাননি, তিনি নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, যা কিছু হোক দেশ স্বাধীন হবেই। শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে না, যুদ্ধের রণকৌশলে তার এই ঐতিহাসিক বক্তৃতা কত যে কার্যকর এবং তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যে কত বাস্তবমুখী সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালীর জীবনে একটা কালো অধ্যায় হিসেবে এসেছে। কারণ যারা পরাজিত হয়েছিল তারা বসে ছিল না। তারা সর্বক্ষণ ষড়যন্ত্রেই ব্যস্ত ছিল। তাই যখন একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে জাতির পিতা দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটল। যেখানে পাকিস্তানী শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে বার বার হত্যার চেষ্টা করেছে। ফাঁসির আদেশ দেয়া সত্ত্বেও ফাঁসি দিতে পারেনি। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাঙালীর জন্য জাতির পিতা নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করেছেন, যে বাঙালীর জন্য সারাজীবনের সব স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন, দিনের পর দিন কারাগারের অন্তরালে নির্যাতন ভোগ করেছেন, যে বাঙালীকে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিয়ে গেছেন, একটা রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন, একটা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন- কি দুর্ভাগ্য যে তাদের (বাঙালী) হাতেই বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হলো। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই না, গোটা পরিবারকে হত্যা করা হলো। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটা নিষিদ্ধ ছিল। এ ভাষণ বাজানো যাবে না। অলিখিত একটা নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু ইতিহাসকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। আর বাঙালীকে দাবায়ে রাখা যায় না, এটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে। তাই দাবায়ে রাখতে পারে নাই। আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি যেমন পেয়েছে, তেমনি জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাষায় অনুবাদ করে এটি প্রচার করা হচ্ছে। ইউনেস্কো সেই পদক্ষেপটা নিয়েছে। আমাদের প্যারিসের যিনি রাষ্ট্রদূত তিনি আমাদের এটা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যে ভাষণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের সৃষ্টি, সেই ভাষণটাই বাংলাদেশে একদিন নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজকে জাতিসংঘে সেটা স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। সারা বিশে^র সব থেকে শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলো, যে ভাষণগুলো মুক্তিকামী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেই ভাষণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই এই কারণে যে, ১৯৮০ সাল থেকেই যে সংগ্রাম, তারই সাফল্যে আমরা পেয়েছি। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা দেখে যেতে পারলাম যে, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্বস্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষও আজকে এটা শুনতে পাচ্ছে, জানতে পারছে, চর্চা করতে পারছে আর আগ্রহ বাড়ছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এখানেই তো সব থেকে বড় সাফল্য। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালী জাতি আজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ, জাতির পিতার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা আমরা পূরণ করব। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। সেই মুক্তির পথে আমরা অনেক দূরে এগিয়ে গেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণের ভেতরে আপনারা তিনটা স্তর পাবেন। একটা ঐতিহাসিক পটভূমি আছে যে বাঙালীর বঞ্চনার ইতিহাস, অত্যাচার-নির্যাতনের ইতিহাস, তখনকার বর্তমান অবস্থাটা এবং কিভাবে সেই পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা গুলি করে মানুষকে হত্যা করেছে, কিভাবে মানুষ ভোট দিয়েছে। তাদের সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করছে সেই বঞ্চনার ইতিহাসও। সেই তখনকার নির্যাতনের ইতিহাস বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার সকল নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কারণ একটা গেরিলা যুদ্ধ হবে এবং সেই গেরিলা যুদ্ধ হতে হলে কি কি করতে হবে, সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা শুরু করে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে বলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটাও জানতেন, যেই মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা বাস্তবে অফিশিয়ালভাবে দেবেন- সেই মুহূর্তে হয়ত তিনি বেঁচে নাও থাকতে পারেন। সেইজন্য তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণের ভেতরেই কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন। তিনি বলে গেলেন যে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু দুই দুইবার করে এই কথা বলেছেন এবং ভাষণের শেষে সব থেকে জোর দিয়ে বলেছেন। অর্থাৎ এটা যে স্বাধীনতার সংগ্রাম আর এই যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে- সেই কথাটাই কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই এটা একদিক দিয়ে বলতে গেলে ৭ মার্চের ভাষণই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। এই ঘোষণার পর থেকে পূর্ববঙ্গ কিভাবে চলবে জাতির পিতা সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চ কোন লিখিত ভাষণ ছিল না। জাতির পিতা তাঁর জীবনের সমস্ত সংগ্রামের যেই অভিজ্ঞতা এবং তাঁর বাঙালী জাতিকে নিয়ে যেই লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু তিনি এই ভাষণটা দিয়েছিলেন। আর এই পরামর্শটা আমার মা-ই (বঙ্গমাতা) দিয়েছিলেন। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার আগে অনেকের অনেক ধরনের পরামর্শ ছিল, যা ছাত্র সংগ্রাম ও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় শেখ হাসিনা জানতেন বলেও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তখন আমাদের ছাত্র নেতাদের অনেকে, বিশেষ করে নাম বলতে আপত্তি নেই যেমন- সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদসহ অনেক ছাত্র নেতারা ৩২ নম্বরে এসেছেন। সিরাজুল আলম খান খুব বার বার জানাতে চাইছিল যে, আজকেই স্বাধীনতাটা ঘোষণাটা দিতেই হবে। সেই সময় অনেক অনেক বুদ্ধিজীবীরা লিখতেন, পয়েন্ট দিয়ে দিয়ে যেতেন আবার কেউ পরামর্শ দিয়ে যেতেন বঙ্গবন্ধুকে, যে কি করে বলতে হবে বা কি বলতে হবে। সিরাজুল আলম খান যখন এই কথাগুলো বলে বঙ্গবন্ধুকে বলেন, তখন বঙ্গবন্ধু তাকে একটি কথা বলেছিলেন, যা আমার কানে এখনও বাজে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘সিরাজ (সিরাজুল আলম খান), লিডার সুড লিড দ্য ল্যাড। ল্যাড সুড নট লিড দ্য লিডার। কি করতে হবে আমি জানি। তোমরা তোমাদের কাজ করে যাও।’ ঠিক সিঁড়ির গোড়ায় এই কথাটা বলে বঙ্গবন্ধু ঘরে ফিরে আসলেন যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থাৎ সংগ্রাম ও আন্দোলনের ক্ষেত্রেও একটা পরিমিতিবোধ কিন্তু থাকতে হয়। ৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধু যখন দিতে যাবেন, তখন আমার মায়ের একটাই পরামর্শ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে ডেকে আমার মা তাঁকে বলেছিলেন- ‘সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছো তুমি। তোমার মনে যেই কথা আছে, তুমি ঠিক সেই কথাটাই বলবে। কারো কথা শুনবার তোমার প্রয়োজন নাই।’ বঙ্গবন্ধু ঠিক সেভাবেই সম্পূর্ণ অলিখিত এক ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে প্রকারান্তরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে, সেই কথাটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই ৭ মার্চই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়ি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে নির্দেশনা দিতেন, সেই নির্দেশনাই দেশ চলত। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ওই বত্রিশ নম্বরে। আর এই ভাষণটি বঙ্গবন্ধু যখন দিতে যান, আমি একথা বহুবার বলেছি, আবারও বলছি। এ ভাষণ কিন্তু কোন লিখিত ভাষণ না। জাতির পিতা তাঁর জীবনে সমস্ত সংগ্রামের যে অভিজ্ঞতা এবং তাঁর যে বাঙালী জাতিকে নিয়ে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু তিনি এই ভাষণটি দিয়েছিলেন। আর এই পরামর্শটাই আমার মা দিয়েছিলেন। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যা যা নির্দেশনা দিয়েছেন, ঠিক সেই নির্দেশনাই এদেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে, এনেছে মহার্ঘ স্বাধীনতা।
×