ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মাপাড়ের মানুষ সুফল পাবে

পদ্মা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পে সময় ও ব্যয় দুইই বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৩ মার্চ ২০২১

পদ্মা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পে সময় ও ব্যয় দুইই বাড়ছে

ওয়াজেদ হীরা ॥ পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষায় ব্যয় ও সময় দুই বাড়ছে। ৩১৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় এবং এক বছরের সময় বৃদ্ধির জন্য সংশোধন প্রস্তাব উঠতে যাচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবটি একনেকের আগামী যে কোন বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পানি উন্নযন বোর্ড। প্রকল্পটি সফল বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙ্গন এলাকাখ্যাত পদ্মাপাড়ের মানুষ সুফল পাবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৯৭ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৩১৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদিকে প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি ২০২১ সাল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫০৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের ৪৬ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্প অনুমোদনের পর ২০১৮-১৯ সালে ভাঙ্গনের তীব্রতার জন্য প্রকল্প এলাকায় পুনরায় সার্ভে করে নক্সা সংশোধন করা হয়। সংশোধিত নক্সা অনুযায়ী জিও ব্যাগের ডাম্পিং ভলিউম ৭৬ ঘনমিটারের পরিবর্তে ৭৬ থেকে ১৩২ ঘনমিটার এবং ব্লকের ডাম্পিং ভলিউম ২৫ ঘনমিটারের পরিবর্তে ৪০ থেকে ৫০ ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের বাস্তব অবস্থার জন্য নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৪৫০ মিটার ও নদী ড্রেজিংয়ের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার বাড়ানো হয়েছে। কিছু নতুন অংশ যেমন, ব্রিজ নির্মাণ ও নদী তীর সংরক্ষণ কাজ পুনর্বাসন সংযোজন এবং প্রস্তাবিত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন অবকাঠামো নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে, নদীগুলোর নাব্যতা ও পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক ও মূল চ্যানেল বজায় রাখা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর প্রশাসনিক অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালে পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ফলক উন্মোচন করে সে সময় প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (বর্তমানে সিনিয়র সচিব) কবির বিন আনোয়ার। সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলা পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা ও আড়িয়াল খাঁ নদী দ্বারা বেষ্টিত। গঙ্গা আরিচার কাছে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মা নাম ধারণ করে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। পদ্মা ও যমুনা নদীর মিলিত বিশাল জলরাশির প্রবাহ এবং নদীর অবকাঠামো পরিবর্তনের কারণে নদীতে বিভিন্ন স্থানে চর জেগে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া জোয়ার-ভাটা, তীব্র স্রোত, প্রবল ঢেউ ও উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহের সম্মিলিত প্রভাবে নদীর তীর ভাঙ্গনের সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হাট-বাজার, ফসলি জমিসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন অবকাঠামো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই এলাকায় নদীর তীর অবতল হয়ে ক্রমান্বয়ে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়ে আরও অবতল হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১২ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেস্ট কনসালটেন্ট লিমিটেডের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ২০১৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। এই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মূল প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। মূল প্রকল্পটি মোট ১ হাজার ৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবর হতে ২০২১ সালে জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীরে অবস্থিত বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষাসহ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে ২০২১ সালের জানুয়ারি আইডব্লিউ ও সিইজিআইএসকে অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত কমিটির সুপারিশে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
×