ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে টানা পাঁচ দিনে দরপতন

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শেয়ারবাজারে টানা পাঁচ দিনে দরপতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভয়াবহ ধসের কবলে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। আরও কমে যাবে শেয়ারবাজারের সূচক এমন আতঙ্কে মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি সূচকই ধসে পড়েছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ দিন পতনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার। টানা পতনের মধ্যে অবশ্য মঙ্গলবারে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন দেখা দিলেও তাকে স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে সুদের হার বেশ কম। এছাড়া করোনা কালেও দেশের অর্থনীতিও ভালো অবস্থানে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন দেখা দেয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। অনেকেই এই পতনকে কৃত্রিম বলেও আশঙ্কা করছেন। সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, অকারণে আতঙ্কে শেয়ার প্যানিক সেল করা ঠিক হবে না। আর যেমন তেমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে, ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এখন বেশকিছু ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম কমে গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানি বাছাই করে দীর্ঘমেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করতে পারেন। সর্বোপরি সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার লেনদেন শেষে সূচকের বড় পতন হলেও লেনদেনের শুরুতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে প্রথমদিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও দেখা দেয়। প্রথম ১৫ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের প্রথম দেড় ঘণ্টা সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকে। তবে বেলা সাড়ে ১১টার পর একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দাম কমতে থাকে। ফলে নি¤œমুখী হতে থাকে সূচক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পতনের এই মাত্রা বাড়তে থাকে। এতে লেনদেন শেষে ধসে পরিণত হয় শেয়ারবাজার। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে পতনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১৫৬টি। আর ১১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এই দরপতনের যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ আমি দেখি না। বিনিয়োগকারীরা কেন আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করছে আমি বুঝি না। অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। সুদের হারও বেশ কম। এই সবকিছুই পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। আমি মনে করি, দাম কমে যাওয়ায় এখন বিনিয়োগকারীদের কেনা উচিত। তবে যেই-সেই কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে না। অবশ্যই ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন যে রিটার্ন পাওয়া যাবে, শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে তার থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, এখন বাজার খারাপ হওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে এখন একটি কোম্পানির আইপিও আবেদন চলছে। এতে কিছু বিনিয়োগকারী টাকা তুলে নিয়ে আইপিও আবেদন করছেন। বাজারে নেতিবাচক প্রবণতার জন্য এটি একটি কারণ হতে পারে। তারপরও ব্যাংকের সুদহার এখন বেশ কম। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো সংবাদ। আমাদের ধারণা আগামী সপ্তাহ থেকেই হয়ত বাজার ভালো হবে। এদিকে মূল্য সূচকের বড় পতন হলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৯১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৬৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৮১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির এবং ৫১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×