ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ ফাহাদ হোসেন

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিকৃতি রোধে তারুণ্যের ভাবনা

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিকৃতি রোধে তারুণ্যের ভাবনা

ফেব্রুয়ারি বাঙালী জাতির জন্য শ্রদ্ধার আর অহঙ্কারের মাস। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্তে রঞ্জিত করেছিল ঢাকার রাজপথ। ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষা বাংলায় প্রাণ খুলে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা ভাষা তার যথাযথ মর্যাদা হারাতে বসেছে। বাংলা ভাষার বিকৃত ব্যবহার ও উচ্চারণ আজ চোখে পড়ে সর্বত্র। ফলে, এ ভাষা আজ হুমকির মুখে। তাই ভাষার ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিকৃতি রোধে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ ফাহাদ হোসেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা যেন ভাষা দিবসে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণে প্রদর্শনের দ্বারাই আজকাল সীমাবদ্ধ। সারাবছর দাপ্তরিক হতে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বাংলা ভাষার চেয়ে যখন ইংরেজী ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, তখন পৃথিবীর ভাষাভাষীর দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা এই অমিয় ভাষার মানুষদের গুরুত্বহীনতাই চোখে পড়ে। কাব্যিক ভাষায় তখন বলতে হয় ‘ফুল দেবো ভাই সবার আগে ভুল হবে না মোটে পত্রিকাতে আমার যেন একটা ছবি জোটে কিংবা কোন টিভি চ্যানেল নেতার শিরোনামে ঝরঝরিয়ে পানি দেবে আমার মনস্কামে’ একই সঙ্গে বলতে হয়, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে পড়ে আজ বাংলা ভাষা তার আভিজাত্য হারিয়েছে। ব্যক্তিগত অবস্থানের চেয়ে তাই রাষ্ট্রীয় জায়গা থেকে বাংলা ভাষার প্রয়োগে জোর বাড়ানো উচিত বলে মনে করি।’ মাজহার তাহমিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ‘বর্তমানে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাড়ছে অশুদ্ধ ও বিকৃত বাংলা বানানের ব্যবহার। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান গুটিকয়েক শতাংশের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। আমাদের এই মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে তরুণ সমাজকেই সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে। ভাষা ব্যবহারে সচেতন হতে হবে প্রত্যেক তরুণকে সেই সঙ্গে শুদ্ধ বাংলা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে অন্যদের। যুগ যুগ ধরে সকল পরিবর্তনে তরুণ সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। এক্ষেত্রেও তরুণরা একসঙ্গে মাঠে নেমে রোধ করতে পারে বিকৃত বাংলার ব্যবহার। পরবর্তী প্রজন্মকে শুদ্ধ বাংলা শিখানোর মাধ্যমে এবং বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা জাগ্রত করার মাধ্যমে তরুণ সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। খাদিজা খানম উর্মি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ‘পৃথিবীতে এমন কোন নজির আর কোথাও নেই, যেখানে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় ভাষা। কিন্তু এই চেতনা কেবল ফেব্রুয়ারি মাসেই জেগে ওঠে প্রভাতফেরীর সঙ্গে আর শেষ হয় স্টাটাসের মাধ্যমে। শুধু ভাষার মাসে নয়, সারা বছর এই চেতনায় বাঙালী তরুণেরা জেগে উঠুক। সব ভাষা শহীদদের অর্জন আজ প্রজন্ম চত্বরে সবার প্রেরণা। তাই বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, বাংলাজুড়ে আছে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রাম। প্রতিনিয়তই বাঙালীরা পাশ্চাত্যের আদলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যর্থ চেষ্টায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখছে। বাংলার সঙ্গে ইংরেজী, হিন্দীর মিশ্রণে কোন বীরত্ব নেই। বরং সঠিক সুন্দরভাবে বাংলা ভাষা চর্চাই আমাদের আদর্শ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তাই আজ তারুণ্যের অঙ্গীকার হোক, কয়েকটি ইংরেজী বুলি মেরে স্মার্ট হবার চেষ্টা না করে এই বাংলা ভাষাকে বুকে ধারণ করে, লালন করে ভাষার সুস্থচর্চা করা। তাই এই ভাষার মাসে আমাদের বাঙালীদের সকলের শপথ হোক একটাই, ‘আমি বাঙালী, আমার ভাষা বাংলা। শপথটি একদিন বা একমাসের জন্য না হয়ে, হোক সারাটা বছরের, সারাটা জীবনের।’ সিনথিয়া সুমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত আর জীবন বিসর্জন দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকেই। অথচ সেই ভাষাকেই আমরা বিকৃতভাবে উপস্থাপনা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। ফেসবুক, মেসেঞ্জার থেকে শুরু করে রেডিও টেলিভিশনেও বিকৃতভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে বাংলা ভাষাকে। বাংলা শব্দকে ইংরেজী এ্যাকসেন্টে লেখাটাই এখন আমাদের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ভালো’ শব্দটাকে যখন ‘valo’ লেখা হয় তখন আমাদের ভাষার মান কি আর অক্ষুণ্ণ থাকে! যেখানে আমাদের বাংলা কী-বোর্ড আছে সেখানে বাংলা শব্দকে ইংরেজী এ্যাকসেন্টে এভাবে বিকৃত করে লেখাটা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক এবং ভাষাকে অমর্যাদাও বটে। আমাদের শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে হবে, এভাবে বিকৃত করে নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে এখনই, নয়তো এক সময় এই বিকৃত ভাষার স্রোতে হারিয়ে যাবে অনেক দামে কেনা আমাদের প্রকৃত বাংলা ভাষা। মোহাম্মদ তানবির হোসেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
×