ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন ৩৩ শিল্পী

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন ৩৩ শিল্পী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য বিশেষ একটি দিন ছিল রবিবার। শিল্পী থেকে সুরকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, নির্মাতা কিংবা নেপথ্যের কুশলীদের ভাল কাজের স্বীকৃতি জানানো হলো এদিন। ঢাকাই ছবিতে গৌরবময় অবদানের জন্য ছয়টি যুগ্মসহ ২৬ ক্যাটাগরিতে ৩৩ শিল্পীকে প্রদান করা হলো ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সেই সুবাদে শীত সকালে আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বসেছিল কীর্তিমান শিল্পীদের মিলনমেলা। সেখানে উচ্চারিত হয়েছে ঢাকাই ছবির সোনালি দিনে ফেরার প্রত্যাশা। গণভবন থেকে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্পৃক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পক্ষ থেকে পুরস্কারজয়ী শিল্পী ও কুশলীদের হাতে পুরস্কারের স্মারক, সম্মানী ও সনদপত্র তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য সচিব খাজা মিয়া। দেশীয় চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন দুই বরেণ্য চলচ্চিত্রশিল্পী। তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা, প্রযোজক ও চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা এবং বাংলা ছবির সোনালি সময়ের চিত্রনায়িকা কোহিনুর আক্তার সুচন্দা। সুচন্দার পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার মেয়ে লিসা মালিক। আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি উৎসর্গ করে অনুভূতি প্রকাশে সোহেল রানা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দাবি জানিয়ে বলেন, প্রতিবছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তদের ভিআইপি ঘোষণার দাবি জানাই। একইসঙ্গে অন্যান্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সিআইপি ঘোষণা করা দরকার। দুই বছরের জন্য হলেও। চলচ্চিত্রের সব ধরনের শিল্পী, পরিচালক ও কুশলীদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। আপনি যদি নির্দেশ প্রদান করেন, আমি মনে করি বিএফডিসির মহাব্যবস্থাপকের মাধ্যমে এটি করা হলে সাধারণ কোন শিল্পী, কর্মচারী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত না খেয়ে থাকবেন না। বক্তব্যে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে করোনার কারণে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করেন। আবেগঘন বক্তব্যে সোহেল রানা বলেন, চলচ্চিত্রে ৪৬ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবার পুরস্কার নিয়েছিলাম বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। ইচ্ছা ছিল এই পুরস্কারও তার হাত থেকে নেয়ার। ৪৬ বছরের ক্যারিয়ারে যা কিছু পাওয়া ছিল, সেটার আজ ইতি হলো। হয়ত আর কোন পুরস্কার আমি পাব না। সভাপতির বক্তব্যে সিনেমা হলের জন্য হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের ঘোষণা দেন হাছান মাহমুদ। ঢাকাই ছবির গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি দিন ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এ তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে যে সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো চালু করা যাবে। বর্তমানে যেসব সিনেমা হল চালু আছে সেগুলোকেও আধুনিকায়ন করা যাবে এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে নতুন নতুন সিনেমা হল গড়ে তোলা যাবে। খুব সহসাই এ তহবিল চালু হতে যাচ্ছে। এ তহবিল চালু হওয়ার পর চলচ্চিত্রশিল্প একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতি জেলায় একটি করে তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের যে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, সেটির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২৮টি জেলায় তথ্যকেন্দ্র ও সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হবে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সর্বোচ্চ আটটি পুরস্কার জিতেছে মাসুদ পথিক নির্মিত ছবি ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’। আবার বসন্ত নামের ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন তারিক আনাম খান। ন’ ডরাই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। একই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার তানিম রহমান অংশু। ফাগুন হাওয়ায় ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন ফজলুর রহমান বাবু। মায়া দ্য লস্ট মাদার শিরোনামের ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন নারগিস আক্তার। সাপলুডু ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা খল-অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন জাহিদ হাসান। যৌথভাবে সেরা গীতিকারের পুরস্কার পেয়েছেন কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী (‘চল হে বন্ধু চল’, ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’) এবং নির্মলেন্দু গুণ (‘ইস্টিশনে জন্ম আমার, ‘কালো মেঘের ভেলা’)। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে মাহবুব উর রহমানের ‘ন’ ডরাই’ এবং ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবিকে। শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ‘নারী জীবন’। সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘যা ছিল অন্ধকারে’। কালো মেঘের ভেলা এবং যদি একদিন নামের ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন নাইমুর রহমান আপন ও আফরীন আক্তার। মায়া দ্য লস্ট মাদার ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান ইমন। সেরা গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন মৃনাল কান্তি দাস (‘তুমি চাইয়া দেখো’, ‘শাটল ট্রেন’)। যৌথভাবে সেরা গায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন মমতাজ বেগম (বাড়ির ওই পূর্বধারে) ও ফাতিমা তুয যাহরা ঐশী (মায়া দ্য লস্ট মাদার)। শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হাবিবুর রহমান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)। যৌথভাবে সেরা সুরকারের পুরস্কার জিতেছেন তানভীর তারেক (‘আমার মায়ের আঁচল’, ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’) এবং প্লাবন কোরেশী (‘বাড়ির ওই পূর্বধারে’)। মায়া দ্য লস্ট মাদার ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার পেয়েছেন মাসুদ পথিক। ন’ ডরাই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার পেয়েছেন মাহবুব উর রহমান। এছাড়া অন্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা জাকির হোসেন রাজু (মনের মতো মানুষ পাইলাম না), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক জুনায়েদ আহমেদ হালিম (মায়া দ্য লস্ট মাদার), যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বসু ও ফরিদ আহমেদ (মনের মতো মানুষ পাইলাম না), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক সুমন কুমার সরকার (ন’ ডরাই), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রিপন নাথ (ন’ ডরাই), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা খন্দকার সাজিয়া আফরিন (ফাগুন হাওয়ায়), শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান রাজু (মায়া দ্য লস্ট মাদার) এবং শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হাবিবুর রহমান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)।
×