ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাকরাইলে মা-ছেলে খুনের মামলায়৩ জনের ফাঁসি

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

কাকরাইলে মা-ছেলে খুনের মামলায়৩ জনের ফাঁসি

কোর্ট রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কাকরাইলে তিন বছর আগে মা-ছেলে খুন হওয়ার ঘটনায় তিনজনের ফাঁসির রায় হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম রবিবার আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডিত তিন আসামি হলেন- নিহত গৃহবধূর স্বামী আব্দুল করিম, করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা ও মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনি। এর পাশাপাশি তিন আসামির সবাইকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক রবিউল আলম বলেছেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলো আসামি আব্দুল করিম। যিনি মৃত শামসুন্নাহারের স্বামী ও সাজ্জাদুল করিম শাওনের পিতা। অথচ আব্দুল করিম নিজের অসৎ উদ্দেশ্য ও হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আসামি শারমিন আক্তার মুক্তা ও আসামি মোঃ আল-আমিন জনির সঙ্গে পরিকল্পনা করে জনিকে দিয়ে নিজ স্ত্রী ও ঔরষজাত ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করিয়েছে। সে কারণে সকল আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করে।’ জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের শামসুন্নাহার (৪৬) ব্যবসায়ী করিমের প্রথম স্ত্রী। পরে ফরিদা নামের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন করিম। ফরিদার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তিনি মুক্তাকে বিয়ে করেন। ২০১৭ সালের ১ নবেম্বর কাকরাইলে বাড়ির পঞ্চম তলায় শামসুন্নাহার করিম ও তার ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওনকে (১৯) গলা কেটে হত্যা করা হয়। বাড়িটি আব্দুল করিমের। তাদের বড় দুই ছেলে বিদেশে থাকেন। করিম মুদি পণ্যের ব্যবসা ছাড়াও এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের প্রযোজনা ও পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সে সময় জানায়। ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিন শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী রমনা থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে করিম, মুক্তা ও জনিসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী মুক্তাকে। পরে তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ওই বছরের ৩ নবেম্বর রাতে গোপালগঞ্জ থেকে মামলার মূল আসামি জনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ছয়দিনের রিমান্ডের মধ্যেই ৮ নবেম্বর জনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। পরে মুক্তাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। গতকাল রায় ঘোষণার আগে বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাদের যেসব নিয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে সুসন্তান অন্যতম। সন্তানের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হলো তার পিতা। আর স্ত্রী হলেন সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী ও সন্তানের জননী। সে কারণে প্রত্যেক স্ত্রী তার স্বামীর কাছে সম্মানের পাত্রী। স্বামীর কাছে স্ত্রীর আছে বহুমাত্রিক অধিকার। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক।’ সুরা বাকারার একটি আয়াত তুলে ধরে বিচারক বলেন, ‘মহান আল্লাহ পবিত্র কোরান শরীফে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে বলেছেন, তারা তোমাদের আবরণ এবং তোমরা তাদের আবরণ।’
×