ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসানচরে গিয়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের ভাগ্যবান ভাবছে

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

ভাসানচরে গিয়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের ভাগ্যবান ভাবছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে ॥ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি সরকারের জন্য ছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ নিজেরাও ছিল ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এখন সবই কেটে গেছে। সরকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফল হয়েছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে উন্নত জীবনের ছোঁয়া পেয়েছে। এরা এখন পরবাসে স্বপ্নঘেরা নতুন এক আবাসে। ভাসানচরে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গার স্থান হয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা যদিও প্রায় সাড়ে ১২ লাখ এবং তার মধ্যে প্রথমপর্যায়ে মাত্র ১ লাখকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে ধাপে ধাপে উখিয়া টেকনাফের ৩৪ আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে তালিকা তৈরি হচ্ছে। সে তালিকা অনুযায়ী স্থানান্তর কাজ ইতোমধ্যে দুদফা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ৩ হাজার ৭৫২ রোহিঙ্গার স্থান হয়েছে ভাসানচরের এ প্রকল্পে। ভাসানচরে এ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানিয়েছেন, এ চরে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৪০টি ক্লাস্টার হাউস ও ১২০টি শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় গুচ্ছগ্রামের আদলে নির্মাণ কাজ হয়েছে এসব ক্লাস্টার হাউসে। প্রতিটি হাউসে ১২টি গৃহে আর প্রতিগৃহে ১৬ রুম। একেক রুমে ৪ জনের থাকার সুব্যবস্থা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য বাজার, মসজিদ, শিক্ষা, কৃষি, খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানের পরিকল্পনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের উন্নততর জীবনে পৌঁছানো হচ্ছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতের পর মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে বর্বর সেনা অভিযানে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর দল। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় প্রদান করেন। কিন্তু বাস্তুচ্যুত সংখ্যা এত বেশিতে উন্নীত হবে তা কখনও কেউ কল্পনা করেনি। বর্তমানে বাংলাদেশের উখিয়া টেকনাফকে বিশে^র সর্ববৃহৎ ‘শরণার্থী’ শিবির হিসাবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সকল সংস্থা। সরকার উখিয়া টেকনাফের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নির্মাণ করেছে ৩৪টি আশ্রয় শিবির। যেখানে মোটামুটিভাবে রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে। মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন যেহেতু বিলম্বের ঘেরাটোপে পড়েছে, ফলে সরকার নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত প্রকল্পে সাময়িক স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এরই প্রক্রিয়ায় গত ৪ ডিসেম্বর ১৬৪২ রোহিঙ্গার প্রথম দলটি ভাসানচরে স্থানান্তরিত হয়। এর আগে ৩০৬ জনের একটি দল মালয়েশিয়ায় যেতে না পারায় তাদের সেখানে রাখা হয়। ১৮০৪ সদস্যের রোহিঙ্গার দলটি পৌঁছাল গত মঙ্গলবার। ইতোমধ্যে যারা সেখানে পৌঁছেছে, নতুন জীবনের স্বপ্নে তারা বিভোর হয়ে আছে। সবকিছু হাতের মুঠোয়। যাকে বলে একেবারে রেডিমেড। দ্বীপটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন সাগরের মাঝে উন্নততর এক শহুরে জীবন। বিদ্যুত থেকে শুরু করে আধুনিক জীবনের সকল ছোঁয়া সেখানে রাখা হয়েছে। এখন রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখা শুরু করে দেয়া হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতির বিরুদ্ধে নিন্দা ॥ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি একাধিক মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারে। স্বেচ্ছায় বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ১৮০৪ জনের রোহিঙ্গার দ্বিতীয় দলটি ভাসানচরে পৌঁছানোর দুই দিনের মাথায় সরকারের সমালোচনা করে চলছে কথিত মানবাধিকার সংগঠন। তারা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। কথিত ওই মানবাধিকার সংস্থাকে উদ্দেশ করে সচেতন মহল বলেন, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের আপনারা নিয়ে যান, তারপর বুঝবেন কষ্টের কী জিনিস নিয়ে বাংলাদেশীরা বসবাস করছে। তারা আরও বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে, বিদেশী কতিপয় মানবাধিকার সংগঠন রোহিঙ্গাদের নিয়ে খুব মায়াকান্না করছে অথচ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের পক্ষে ভোটও দেয়নি।
×