ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড টিকা বাধ্যতামূলক হবে না ॥ জো বাইডেন

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড টিকা বাধ্যতামূলক হবে না ॥ জো বাইডেন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের কোন টিকা যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত ও সহজলভ্য হলেও তা সবাইকে নিতে বাধ্য করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) মার্কিনীদের নিজের ঘর ছাড়া অন্য যে কোন চার দেয়ালে আবদ্ধ কক্ষের ভেতর মাস্ক পরতে বলার পর বাইডেনের টিকা নিয়ে এ মন্তব্য এল। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইউএসএ টুডে, ফক্স নিউজ ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। যুক্তরাষ্ট্র এখন করোনাভাইরাসের ‘উচ্চ পর্যায়ের সংক্রমণ পর্বে প্রবেশ করেছে’ বলে জানিয়েছে সিডিসি। শুধু শুক্রবারই দেশটিতে প্রায় সোয়া দুই লাখ নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত ও আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৪৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে; মৃত্যু ২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। ভাইরাস সংক্রমণজনিত উদ্বেগের কারণে ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ ও অভিষেক অনুষ্ঠানের জমায়েতের আকার ছোট হতে পারে বলে বাইডেন ধারণা দিয়েছেন। শুক্রবার আটলান্টার সিডিসি পরিদর্শনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যেই একটি কোভিড-১৯ টিকা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে যাচ্ছে বলে জানান। একই দিন ডেলওয়ারের উইলমিংটনে এক বক্তৃতায় বাইডেন বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন পড়বে না। আগের দিন এক সাক্ষাতকারে নবনির্বাচিত এ প্রেসিডেন্ট বলেন, টিকার নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দূর করতে তিনি জনসমক্ষেই টিকা নিতে রাজি। সাবেক তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটনও জনসমক্ষে টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ শতাংশ নাগরিক এখন টিকা নিতে প্রস্তুত বলে দেখা গেছে। সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ৫১ শতাংশ। টুইটারে নিষিদ্ধ হতে পারেন ট্রাম্প ॥ হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। টুইটারের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার ফোর্বস ম্যাগাজিনকে একথা জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প টুইটারে করোনাভাইরাস নিয়ে লাগাতার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও নির্বাচনে জালিয়াতি সম্পর্কে মিথ্যা দাবি প্রচার করেছেন। তার এসব দাবি দেশটির নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং বিচার বিভাগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। যে কারণে টুইটারকে ‘সত্যতা যাচাই করতে’ এবং নির্দিষ্ট টুইটের ওপর সতর্কতার লেবেল লাগাতে বাধ্য করছে। টুইটারের ‘ওয়ার্ল্ড লিডার পলিসি’র আওতায় পড়ায় এতদিন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ওয়ার্ল্ড লিডার নীতির আওতায় সাধারণত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যেমন- প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য শাসকদের গণ্য করা হয়। এদের মধ্যে যাদের যথেষ্ট সংবাদ-মূল্য আছে তারা টুইটারের কিছু নিয়ম ভঙ্গ করলেও ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সেই সুবিধাই ভোগ করে আসছেন ট্রাম্প। যদিও গত কয়েক মাসে ট্রাম্পের বেশ কিছু টুইটে সতর্কতা চিহ্ন যোগ করে গোপন করে রাখে টুইটার। সতর্কতা পড়ার পর আগ্রহীরা চাইলে ক্লিক করে সেসব পোস্ট দেখতে পেতেন। কিন্তু তাতেও ট্রাম্পকে থামানো যাচ্ছে না। জানুয়ারির ২০ তারিখের পর থেকে ট্রাম্প আর ‘ওয়ার্ল্ড লিডার নীতি’র আওতায় পড়বেন না। সাধারণ নাগরিকদের মতোই তাকে টুইটারের বিধিমালা মেনে চলতে হবে, টুইটারের ওই মুখপাত্র বলেন ফোর্বসকে। মুখপাত্রের ওই কথার মানে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর ওইসব বিধিমালা না মানলে তাকে মারাত্মক সব ‘শাস্তি’ দেয়া হবে। এরপর এক পর্যায়ে তাকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। উল্লেখ্য, নিয়মিত পোস্ট করার কারণে টুইটারে খুব জনপ্রিয় ট্রাম্প। টুইটারে তাকে ৮ কোটি ৮৭ লাখ ব্যবহারকারী অনুসরণ করছেন। বাইডেন শিবিরের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অসহযোগিতা ॥ নির্বাচনী ময়দানের পর এবার ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও ট্রাম্প প্রশাসনের ‘বাধা’র মুখে বাইডেন। অভিযোগ রয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাইডেনের ট্রানজিশন দলকে সাক্ষাতের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে পেন্টাগন। যদিও পুরো বিষয়টি মানতে নারাজ পেন্টাগন। টিম বাইডেনের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলছে না। তবে মার্কিন সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বাইডেনের টিমকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। চলতি সপ্তাহেই ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ), ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিসহ (ডিএসএ) একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল বাইডেনের ট্রানজিশিন টিমের। এ বিষয়ে গত ২৩ নবেম্বরই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল মার্কিন জেনারেল সার্ভিসেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন। যদিও মার্কিন সংবাদ সংস্থার দাবি, চলতি সপ্তাহে টিম বাইডেনের সেই সাক্ষাতের অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা দফতরের ওই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি না পেলেও চলতি সপ্তাহে সিআইএর (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) এবং ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পেরেছে বাইডেনের টিম। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ওই দুই এজেন্সি পেন্টাগনের নিয়ন্ত্রণে নয়। বাইডেনের দলকে প্রতিরক্ষা দফতরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত না করতে দেয়ার ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে পেন্টাগন। শুক্রবার প্রতিরক্ষা দফতরের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, টিম বাইডেনকে কোনভাবেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে বাধা দেয়া হয়নি। উল্টো তিনি জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে হয়তো টিম বাইডেনকে ওই অনুমতি দেয়া হবে। পেন্টাগনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে টিম বাইডেনের ওপরেই যাবতীয় দায় চাপিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার দাবি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অন্যায়ভাবে সরাসরি সাক্ষাত করতে চেয়েছিল টিম বাইডেন। তাদের বলা হয়েছে, এ নিয়ে পেন্টাগনের কাছে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত রাশিয়া, চীন বা ইরানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে পরিচালনায় ক্ষেত্রে সমস্যা হবে টিম বাইডেনের।
×