ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৪০তম স্প্যান বসেছে, রইল বাকি এক

বিজয়ের মাসেই হবে পদ্মা জয়

প্রকাশিত: ২২:২৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

বিজয়ের মাসেই হবে পদ্মা জয়

সংবাদদাতা, মুন্সীগঞ্জ, ৪ ডিসেম্বর ॥ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১১ থেকে ১২নং পিয়ারের ওপর পদ্মা সেতুর ৪০তম ‘২-ই’ স্প্যান ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার বসানো হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে স্প্যানটি পিয়ারের ওপর তোলার জন্য কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে সকাল দশটা ৫৮ মিনিটের সময় সফলভাবে পিয়ারের ওপর স্থাপন করা হয়। এটি বসানোর পর মূল সেতুর ছয় কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে বলে জানান পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের। অনুকূল আবহাওয়া আর কারিগরি জটিলতা দেখা না দেয়ায় তেমন কোন সমস্যা ছাড়াই স্প্যানটি স্থাপন করা হয়েছে বলে পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার স্প্যানটি দুটি পিয়ারের কাছে ক্রেনের মধ্যে রেখে ক্রেনটি নোঙ্গর করে রাখা হয়েছিল। গত ২৭ নবেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১০ থেকে ১১নং পিয়ারের ওপর পদ্মা সেতুর ৩৯তম ‘ডি-২’ স্প্যান বসানোর ৭দিন পর ৩৯নং স্প্যানের পাশেই বসানো হলো ৪০তম স্প্যান। পদ্মা সেতুর শতভাগ দৃশ্যমান হতে আর প্রয়োজন একটি ১৫০ মিটার লম্বা স্প্যান। সেতুর প্রকৌশলীরা আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টক জেটিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় থাকা ধূসর রঙের ১৫০ মিটার লম্বা তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ৩০ মিনিট সময়ে নির্ধারিত পিয়ারের কাছে পৌঁছায়। বেলা ১২টায় ছয়টি ক্যাবলের (তার) মাধ্যমে মূল নদীতে পিয়ারের কাছে ক্রেনটি নোঙ্গর সম্পন্ন করে রাখা ছিল। শুক্রবার সকাল ৯টা ২০ মিনিট থেকে স্প্যানবাহী ক্রেন থেকে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে উপরে তোলা হয় স্প্যানটি। তার পর এটি দুটি পিয়ারের ওপর বিয়ারিঙে বসিয়ে সেটিং করা হয়। বৃহস্পতিবার সেতুর ১১ ও ১২ নং পিয়ারের নিকট স্প্যান নেয়ার পর থেকে শুক্রবার স্প্যান বসানো পর্যন্ত মাঝ নদীতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ৪০তম স্প্যানটি বসাতে কম সময়, মাত্র দেড় ঘণ্টা লাগার কারণ হিসেবে প্রকৌশলীরা জানান, মাওয়া প্রান্তের মাঝ নদীতে ১১ ও ১২ নম্বর পিয়ার হওয়ায় নদীর গভীরতা ঠিক ছিল। তাছাড়া আগের দিন স্প্যান নিয়ে নির্দিষ্ট পিয়ারের সামনে রাখা হয়। শুক্রবার শুধু উপরে অল্প সময়ের মধ্যেই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয়। সফলভাবে স্প্যান বসাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি বলে প্রকৌশলীরাও খুশি। সেতুর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্প্যান বসেছে গত অক্টোবর ও নবেম্বর দুই মাসে। টার্গেট অনুযায়ী অক্টোবর মাসে ৪টি ও নবেম্বর মাসে ৪টি মিলিয়ে মোট ৮টি স্প্যান বসানো হয়েছে। আর বিজয়ের মাসের ৪ তারিখে ৪০তম স্প্যান বসানোর পর আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে ৪১তম স্প্যান (২- এফ) বসানো হবে ১২ ও ১৩ নং পিয়ারের ওপর। আর ৪১তম স্প্যানটি পিয়ারের ওপর বসানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় রাখা আছে মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। অপরদিকে স্প্যানের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক তৈরিতে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাব বসানো হবে; যা ইতোমধ্যে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী এক হাজার ২৩৯টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। আর সেতুর নিচের অংশ স্প্যানের ভেতর দিয়ে রেল চলাচলের জন্য দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এর মধ্যে এক হাজার ৮৬০টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর পর বাকি থাকবে স্প্যানের ওপর সড়ক আর মাঝে রেলপথ নির্মাণের কাজ। যে কাজের বড় একটি অংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান শুরু হয় পদ্মা সেতু। এর পর একে একে বসানো হয় ৪০টি স্প্যান। ২৯ জুন ২০১৮ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৪১ থেকে ৪২ নং পিয়ারের ওপর ৫ম স্প্যান ‘৭-ফ’ বসানোর মাধ্যমে মূল সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুরের জাজিরার আর ২১ নবেম্বর ২০২০ মাওয়া প্রান্তে ১ থেকে ২নং পিয়ারে ৩৮তম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে মূল সেতুর সঙ্গে মাওয়ার সেতুবন্ধন হয়। ৪২টি পিয়ারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সব পিয়ার দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি স্প্যানটি পিয়ারের ওপর ওঠানোর জন্য প্রস্তুত করা আছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। ৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টীল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন, নিচ দিয়ে ট্রেন আর তার নিচ দিয়ে চলবে নৌযান।
×