ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার হুমকি দিয়ে রাজনৈতিক মোল্লারা বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যা করতে চায় ॥ ইনু

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ১ ডিসেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার হুমকি দিয়ে রাজনৈতিক মোল্লারা বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যা করতে চায় ॥ ইনু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতি বছরের এক ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ’৭১ এর খুনীরাই মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। পাকিস্তানের দালাল ’৭১ এর খুনী ও ’৭৫ এর খুনীরা চক্রান্ত ছাড়েনি। সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বঙ্গবন্ধুর উপর আক্রমণ করে। দলের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নেন। ইনু বলেন, আজ আমরা যখন মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করছি তখন বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষও পালন হচ্ছে। আর এ শতবর্ষের ভিতরে, এ বিজয় মাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক মোল্লা হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুঙ্কার ছাড়ছে যা চক্রান্তের রাজনীতিরই অংশ। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছে তারা ’৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর খুনী, ’৭১ সালের খুনী রাজাকারদের দোসর। তারা বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয় বার হত্যা করতে চাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর উপর আক্রমণ মানে বাংলাদেশ, ’৭১এর মুক্তিযুদ্ধের উপর আক্রমন। রাজনৈতিক মোল্লারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর ছুরি চালাতে চায় মন্তব্য করে সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভাস্কর্য ভাঙ্গার হুমকি দেয়ার মাধ্যমে এরা তিন ধরনের আইনী বরখেলাপ করছে-বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা এবং সকল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়া, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে সমাজে অশান্তি তৈরীর চক্রান্ত ও উস্কানী দেয়া এবং ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে মিথ্যাচার করা, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মের অনুভূতির উপর আঘাত হানছে। এ আইনী বরখেলাপের দায়ে অবিলম্বের তাদের গ্রেফতার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুঙ্কার দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যার হুমকি দিচ্ছে, তারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে ধামা চাপা দিতে চাচ্ছে একথা উল্লেখ করে ইনু বলেন, তারা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে চায়। তাদেরকে এ বিজয়ের মাসে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। তিনি বলেন, পাকিস্তানের দালাল এ রাজনৈতিক মোল্লারা দেশের সংবিধান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অস্বীকার করে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। এটা দেশোদ্রোহীতার সামিল, প্রচলিত আইনের লংঘন। এদের ক্ষমা করা যায় না, এদের কোন ছাড়া নেই। অবিলম্বে এ সকল রাজনৈতিক মোল্লাদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে যাতে বাংলাদেশের আর কোন দিন কেউ এ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে না পারে। বাংলার মাটিতে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে ইনু বলেন, চক্রান্তকারীদের বিষদাত ভেঙে দিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে এবং লড়াই জারি রাখতে হবে। তাই মুক্তিযোদ্ধা দিবসে আমাদের ঘোষনা: চক্রান্ত যতই হোক ২০০৯ সালের পর যে ভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ফাঁসি হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ভাস্কর্য বিরোধী রাজনৈতিক মোল্লাদের চক্রান্ত রুখে দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে, সুশাসনের পথে, সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানানো, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন-চেতনা-সাহস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মন্তরে সঞ্চারিত করা, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে মুক্তিযুক্ত-দেশ-রাষ্ট্র-সংবিধান বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার প্রত্যয় নিয়ে জাসদ এবং এর সহযোগী সংগঠন সমূহ দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করছে। সকাল ৮ টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান ও সকাল সাড়ে নয় টায় শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাসদের মুক্তিযোদ্ধা দিবসের কর্মসুচী শুরু হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান ও শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি সফি উদ্দিন মোল্লা, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, সাইফুজ্জামান বাদশা, মোঃ নুরুন্নবী, সাজ্জাদ হোসেন, শরিফুল কবির স্বপন, মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে সমবেত দলীয় নেতা-কর্মী এবং জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন হাসানুল হক ইনু। বলেন, স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার কথা এবং বিজয় দিবসে বিজয় দিবসের কথা হয়। তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের যে বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা বলার জন্য বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথমদিন এক ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা দিবসে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ বীরউত্তম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের আহ্বায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য শাহজাহান খান এমপি, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, জাতীয় যুব জোট, জাতীয় কৃষক জোট, জাতীয় নারী জোট সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
×