ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্মুক্ত স্থানে কয়লা ব্যবসা

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১ ডিসেম্বর ২০২০

উন্মুক্ত স্থানে কয়লা ব্যবসা

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩০ নবেম্বর ॥ বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী নৌবন্দরে উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি করায় স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই কয়লা বহন করায় নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শ্রমিকরা। উন্মুক্ত কয়লা বিক্রিতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সতর্ক করলে তা কেউ মানছেন না। এক সময়ের উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত নগরবাড়ী নৌবন্দরে যাত্রী পারাপার বন্ধ হলেও এখন এখান থেকে সার, সিমেন্ট, কয়লা, পাথর, সারসহ বিভিন্ন পণ্য নদী পথে আমদানি করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, সোহেল ট্রেডার্স, আমান ট্রেডার্স, নওয়াপাড়া ট্রেডার্সসহ সাত কয়লা ব্যবসায়ী ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে কার্গো জাহাজে করে নগরবাড়ী নৌবন্দরে এনে বিক্রি করছেন। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ইটভাঁটির এই কয়লা ব্যবহার করা হয়। বন্দর এলাকা ঘুরে জানা যায়, যশোরের নওয়াপাড়া গ্রুপ ইন্দোনেশিয়ার এ জাহাজে আমদানি করে প্রথমে নিয়ে আসেন চট্রগ্রাম বন্দরে। সেখান থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে নগরবাড়ীতে উন্মুক্তভাবে বিক্রি করছেন। এলাকাবাসী জানান, লোড-আনলোডের সময় ছাড়াও স্তূপকৃত কয়লার গুঁড়ো বাতাসে মিশে পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতে পড়ছে, এতে ঐসব জমি ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তাছাড়াও রোদে কয়লার স্তূপে আগুন ধরতেও দেখা গেছে। এদিকে, জাহাজ থেকে মাথায় বহন করে কয়লা নামানোর জন্য প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন শত শত শ্রমিক। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করায়, কয়লার গুঁড়ো শ্বাস-প্রশ্বাসে মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে তাদের ফুসফুসে। ফলে তারা শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ক্যান্সারসহ যক্ষ্মা রোগের ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরাও। কয়লা আনলোডের কাজ করা একাধিক শ্রমিক জানান, দিন শেষে গোসলের সময় দেখা যায় নাকে মুখের ভেতর কয়লার গুঁড়ো। আগের চেয়ে খাওয়া দাওয়ার রুচি কমে গেছে। কয়লা শ্রমিক আব্দুর রহিম জানান, কয়লার ঝুড়ি মাথায় নিলে প্রচুর গরম লাগে। ভিজে মাস্ক নষ্ট হয়ে যায়। নানা রকম অসুখ হয় জেনেও এ পেশায় আছেন বলে তিনি জানান। বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই কয়লা বহনের কাজ করলে শ^াসকষ্ট, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। পাশাপাশি ধুলা ও কয়লা গুঁড়োর কারণে ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও দীর্ঘমেয়াদী কাশি হয়ে থাকে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেটা যক্ষ্মার রূপ ধারণ করে। এদিকে, কয়লা গুঁড়োর কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষীরাও। নগরবাড়ী ঘাট এলাকার কৃষক ইয়াসিন আলী জানান, কয়লার গুঁড়ো ফসলি জমিতে পড়ে মাটি কালো হয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে আর কোন ফসলই ভাল হচ্ছে না। বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মশকর আলী বলেন, জমিতে কয়লার স্তর পড়লে ফসল উৎপাদনে প্রভাব পড়ে। কারণ মাটি ঠিকমতো প্রাকৃতিক খাদ্য ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। তবে কয়লা জাহাজ থেকে আনলোড হওয়ার পর নিদিষ্ট স্থানে আবদ্ধ করে রেখে বিক্রি করলে সবার জন্যই উপকার। পরিবেশ অধিদফতরের সনদ নিয়ে নিয়ম অনুয়ায়ী সংরক্ষিত এলাকায় এ ব্যবসা করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে অন্তত পাঁচ কয়লা ব্যবসায়ী পরিবেশ অধিদফতরের সনদ নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে দাবি করলেও, তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শ্রমিকদের সবসময় মাস্ক নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নগরবাড়ী ঘাট এলাকার কয়লা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। তারা উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি না করে ঢেকে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান চালিয়ে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
×