ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়িমারীর ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠন

মৌলবাদীরা গুজব রটিয়ে নিরীহ মুসল্লিকে হত্যা করেছে

প্রকাশিত: ২২:৪১, ১ নভেম্বর ২০২০

মৌলবাদীরা গুজব রটিয়ে নিরীহ মুসল্লিকে হত্যা করেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ও রংপুর ॥ জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে গুজব ছড়িয়ে মসজিদে আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহিদুন্নবী জুয়েল হত্যার ঘটনার তদন্তে জেলা পর্যায়ে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত টিম ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। থানায় তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর পুলিশের ডিআইজির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা পাটগ্রাম উপজেলার সকল মসজিদের ইমামদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে এই ঘটনায় বইছে প্রতিবাদের ঝড়। গত বৃহস্পতিবার বুড়িমারী ইউপি জামে মসজিদে পবিত্র কোরান শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে উগ্র মৌলবাদী চক্র পিটিয়ে হত্যা করেছে জুয়েলকে। জুয়েলের সঙ্গে থাকা যোবাইর আবদারকেও মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় রাতভর বুড়িমারীতে পুলিশ, বিজিবি ও জনতার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উগ্র মৌলবাদী চক্র বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটিতে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। তারা প্রয়োজনীয় নথিপত্র জ্বালিয়ে দেয়। নিহত শহিদুন্নবী জুয়েলের বাড়ি রংপুর শহরে শালবন এলাকায়। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার সংঘটিত এই ঘটনায় জুয়েলকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার নিথর দেহ ইউপি ভবনের বাইরে রাস্তায় এনে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেয়া হয়েছে। নিহতের সঙ্গী জোবাইরকে পুলিশ উগ্র মৌলবাদীদের হাত থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। থানা পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় বাজার মসজিদে আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) ও সুলতান জোবাইর আবদার (৫১) নামের এই দুই ব্যক্তি বৃহস্পতিবার বিকেলে বুড়িমারী বাজার জামে মসজিদে আছরের নামাজের আজান শুনে মসজিদ চত্বরে মোটরসাইকেল রেখে ওজু করে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে মসজিদে প্রবেশ করেন। মসজিদে প্রবেশ করে আদব-ভদ্রতার সঙ্গে নিহত আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) মসজিদের মুয়াজ্জিন জোবেদ আলী (৫৮) ও মসজিদের ওয়াক্তি নামাজের ইমাম শহীদ আলী (৫৩) সঙ্গে হাত মোছাফা করেন। সেই সঙ্গে তাদের সঙ্গে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। পরে মসজিদে নামাজ পড়তে আসা উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে একই কাতারে জামাতে আছরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মোনাজাতের পর এই সীমান্ত গ্রামের বাজারে উগ্র মৌলবাদী বা জঙ্গীদের কার্যক্রম আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। এক পর্যায়ে মসজিদে অস্ত্র আছে কিনা জানতে চান বলে মুয়াজ্জিন জানান। পরে তিনি দাঁড়িয়ে মসজিদের বুক সেলফের তাকে রাখা কোরান ও হাদিসের বইয়ে হাত রাখতে যান। তখন অনবধানতাবশত একটি বই পড়ে যায়। সেটা কোরান ছিল না হাদিসের বই ছিল নিশ্চিত হয়ে কেউ বলতে পারেননি। মাটিতে পড়ে যাওয়া বইটি আদবের সঙ্গে তুলে নিয়ে চুম্বন করে তাকে রাখতে যান। এই সময় উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে থাকা একজন তাকে ধমক দেন। তার সঙ্গে ধর্মীয় কোরান অবমাননার অপবাদ দিয়ে চড় থাপ্পড় দিতে থাকে। মসজিদের ভেতরে হৈচৈ শুনে স্থানীয় বাজারে থাকা ইউপি সদস্য হাফিজ রহমান বাগবিত-া থামাতে মসজিদে এসে নিহত জুয়েল ও আহত আবদারকে মসজিদ হতে বের করে ইউনিয়ন পরিষদের চত্বরে নিয়ে গিয়ে ইউপি ভবনের একটি অফিস কক্ষে নিরাপদে রাখেন। সেই সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান নিয়াজ আহম্মেদ নিশাদ এবং পুলিশকে খবর দেয়। এরমধ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয় ‘কোরান শরিফের ওপর পা রেখে দুই ব্যক্তি মসজিদে জঙ্গীদের অবৈধ অস্ত্র আছে বলে খুঁজছে’। মুহূর্তে বাজারের লোকজনের মধ্যে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি হয়। এমন কী মসজিদের মাইকে সকলকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয়। এরপরই শুরু হয় তা-ব। মসজিদের মুয়াজ্জিন জানান, আগুন্তক ব্যক্তি কোন ধরনের কোরান অবমাননা করেননি। বরং কোরান কি হাদিসের বই নিচে পড়ে যাওয়ায় তিনি বইটি বুকে তুলে নিয়ে সালাম করে চুম্বন করেছেন। তাকে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে ও জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান নিয়াজ আহম্মেদ নিশাদ জানান, তার নির্বাচনী এলাকায় প্রতিপক্ষ সবসময় তাকে হেয় করতে চায়। সামনে যেহেতু ইউপি নির্বাচন। তাই তাকে হেয় করতে ও ধর্মীয় উম্মাদনা ছড়িয়ে উগ্র মৌলবাদী চক্র এখানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে সব সময় ষড়যন্ত্র করে। তারা এখানে সরকারকে ও দেশের ভাবমূর্তি সঙ্কটে ফেলতে এই জঘন্য ও ঘৃণীত অপরাধ করেছে। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান। সেই সঙ্গে যারা ধর্মীয় উম্মাদনা ও মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে এই তা-ব চালিয়েছে তার বিচার চান। সেই সঙ্গে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি তোলেন। এই পৈশাচিক ও জ্বালিয়ে মারার ঘটনায় জেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাত হতেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জেলা প্রশাসক এডিসি জেনারেলের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছেন। নেতৃত্বে আছেন এডিসি ( জেনারেল), এডিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পাটগ্রামের ইউএনও। তদন্ত কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। এই পৈশাচিক ও নির্মম ঘটনায় পাটগ্রাম থানা পুলিশ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। থানা পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। বিষয়টি পাটগ্রাম থানার ওসি অপারেশন সুমন মোহন্ত ম-ল নিশ্চিত করেছেন। বুড়িমারী ইউনিয়নের নিরীহ জনগণ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে এসপি আবিদা সুলতানার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দক্ষ হাতে রাত জেগে নিজেই মাঠ পর্যায়ে সহকর্মীদের সঙ্গে থেকে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। এখনও মাঠে রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় কিছুটা আতঙ্ক রয়েছে। শুক্রবার মসজিদে মসজিদে নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ও ধর্মীয় উম্মাদনা না ছড়াতে মুসল্লিদের আহ্বান করা হয়েছে। এখানে কোরান অবমাননা হয়নি বলে মুসল্লিদের জানানো হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে ও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। সেখানে আর কোন বিতর্কিত ঘটনা ঘটতে দেয়া হবে না। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ কোন কিছু করার চেষ্টা করা হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, সেখানে গুজব ছড়িয়ে নিরীহ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিটিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তকালে কোরান পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান শরিফ অবমাননার কোন ধরনের ঘটনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। কি কারণে কিভাবে ঘটনাটি ঘটল তদন্ত করে খোঁজা হচ্ছে। এ তদন্ত কাজে মিডিয়া কর্মীদের সহায়তা চান তিনি। পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রুহল আমীন বাবুল জানান, বুড়িমারী ইউনিয়নটি উগ্র মৌলবাদী অধ্যুষিত। এখানে ২০১৪ সালে ধর্মীয় উম্মাদনা ছড়িয়ে পুলিশের ওপর হামলা, মুক্তিযোদ্ধার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। এমন কি জনৈক আওয়ামী লীগের কর্মীও সেই সময় মাগরিবের নামাজ আদায় করা অবস্থায় উগ্র মৌলবাদীরা তাকে মসজিদের বারান্দায় পিটিয়ে হত্যা করে। তার লাশটিও পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি এই ঘটনাকে সুপরিকল্পিত হত্যাকা- বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তিনি ও ইউএনও খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান, সেখানে তাদেরও অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। তাদের ওপরও হামলার চেষ্টা করা হয়। তারা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। সারারাত ধরে উগ্রবাদীরা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে। পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এতে প্রায় রাত দুইটায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তিনি ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের মামলাগুলোর দ্রুত বিচার করা গেলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না বলে জানান। এখানে উগ্র মৌলবাদী চক্র দেশের ও সরকারের ভাবমূর্তি সঙ্কটে ফেলতে এটা করা হয়েছে বলে জানান। মানুষ পুড়িয়ে মেরে তারা উম্মাদনা ও পৈশাচিক উল্লাস প্রকাশ করেছে। এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চত্বরে পাটগ্রাম উপজেলার সকল মসজিদের ইমামদের নিয়ে ধর্মীয় উগ্রতা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর পুলিশের ডিআইজির নেতৃত্বে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ইমামগণ বলেন, ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। ইসলাম ধর্মে জীব হত্যা মহাপাপ বলে তারা দাবি তোলেন। ইসলাম ধর্মে কোথাও নেই ধর্মের নামে এবং পবিত্র কোরান অবমাননার নামে কাউকে হত্যা করা যাবে। ঈমামগণ বলেন, পাপী তাপী যে মানুষ হোক না কেন। তাকে অন্যায়ভাবে যে কোন পদ্ধতিতে খুন করা হোক আল্লাহপাক বিনা বিচারে তাকে জান্নাত নসিব করবেন। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে কখনও বেহেস্তে যাওয়া যাবেনা। ধর্মীয় আচার, রীতিনীতি ও মানুষের কল্যাণে সৎভাবে জীবন পরিচালনা করলে তবেই বেহেস্তে যাওয়া যাবে। ইসলাম ধর্মে শর্টকাট বেহেস্তে যাওয়ার কোন উপায় নেই। সব কিছুুর মালিক সেই দয়ালু মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে এই মৌলবাদী চক্র হত্যাকা-ে অংশ নিয়েছিল। তাদের এই আচরণই হত্যাকা-ে মূল অনুঘটকের কাজ করেছে। ভিডিও ক্লিপে তাদের প্রশিক্ষিত বলে মনে হয়েছে। এরা বয়সে তরুণ। অনেকের গায়ে আধুনিক ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরা ছিল। পৈশাচিক ঘটনার ভিডিওটি করা হয়েছে দক্ষ হাতে। নিপুণ হাতে করা ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে মুহূর্তে। এই ভিডিওটি ভাইরালে বুস্টিং করা হয়েছে কিনা সেটা তথ্যপ্রযুক্তি সিকিউরিটি সংস্থা খুঁজে দেখতে পারে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত এটা উগ্র মৌলবাদীদের কাজ। কারণ পৈশাচিক হত্যার সময় মুহুর্মুহু ইসলামিক উগ্র আর্দশের সেøাগান দেয়া হয়েছিল। তারা ইসলামী আইন বাস্তবায়নের সেøাগান দেয় বলে জানা গেছে। ঘটনার দুইদিন পর শনিবার বুড়িমারীতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে পুলিশ পাহাড়ায় ঘটনাস্থলসহ সকল মসজিদে শুক্রবারের জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য এলাকাটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের গ্রাম বা এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার তিন বছর যেতে না যেতে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসে। এখানে ১৯৮৯ সালে বুড়িমারী স্থলবন্দর চালু হয়। এই বন্দরকে ঘিরে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রতে পরিণত হয়। এরশাদ সরকারের আমলে এই অঞ্চলের অনেক গরুর রাখাল হতে, কুলিমজুর হতে কোটি কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিক বনে যায়। পরবর্তীতে এদের একজন নব্যধনী জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন। সেই নব্যধনিক শ্রেণীর ব্যক্তিটির মাধ্যমে এখানে উগ্র মৌলবাদী রাজনীতির গোড়াপত্তন ঘটে। পরবর্তীতে ইসলামী অর্থনীতির নামে। এই উগ্র মৌলবাদী চক্রটি এককভাবে বুড়িমারী স্থলবন্দরে বৈধ ও অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেছিল। তারা বুড়িমারী স্থলবন্দরের আধিপত্য ধরে রাখত। আত্মীয় স্বজনদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভিড়িয়ে দেয়। ক্ষমতার পালাবদলের সময় শুধু নেতৃত্ব বদলায়। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈধ ও অবৈধ কর্মকা- জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। এমন শোনা যায়। ওই নেতা কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় তার লাইন্সেস বাতিল হয়েছে। সেই অন্য নামে লাইন্সেস করে নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। ইসলামিক দলগুলো তাদের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এখানে ঘাঁটি করেছে শক্তভাবে। তারা সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে শত্তিমত্তার পরিচয় দেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে ভূলুণ্ঠিত করতে। এই ধর্মীয় উম্মাদনা ও অপকর্ম করা হয়েছে। যেখানে বলির পাঁঠা হয়েছে নিরীহ জুয়েল। এই পৈশাচিক ও নির্মম ঘটনায় পাটগ্রাম থানা পুলিশ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ নির্মম হত্যাকা-ের ঘটনা সম্পর্কে জানতে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে বুড়িমারী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম (২৪), আরিফুল হক (২৭), শলিফ হোসেন (২৯) নাম শোনা গেছে। থানা পুলিশ এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্টভাবে কোন তথ্য দেয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে অনেককে থানায় নিয়ে আসা হবে বলে জানায়। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে এদের ধরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে পুরো পরিস্থিতি থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন তদন্ত করছে। সেই সঙ্গে র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট ছায়া তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছিল। পুলিশের একজন ইন্সপেক্টরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। বিষয়টি পাটগ্রাম থানার ওসি অপারেশন সুমন কুমার মোহন্ত ম-ল নিশ্চিত করেছেন। এসপি আবিদা সুলতানা জানান, ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে মিথ্যা গুজব রটিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা সত্যিই ধর্মবিরোধী কাজ। তিনি এই নির্মম ঘটনায় খুবেই মর্মাহত। টিভি চ্যানেলে তাকে খুব বিমর্ষ হয়ে ঘটনার বিবরণ দিতে দেখা গেছে। তবে এলাকাবাসী এই এসপির ভূমিকায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। দক্ষ হাতে রাত জেগে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তার এই উগ্যোগে গ্রামে নিরীহ মানুষের জানমালের সুরক্ষা হয়েছে বলে জানান। পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহল আমীন বাবুল জানান, বুড়িমারী ইউনিয়নটি উগ্র মৌলবাদী অধ্যুষিত। ২০১৪ সালে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে পুলিশের ওপর হামলা, মুক্তিযোদ্ধার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখে দেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। তখনও আওয়ামী লীগের সমর্থনের হুজুগ তুলে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছিল। পুনরায় জুয়েল আমার পরিবারের আত্মীয় এই বলে, ওই উগ্র মৌলবাদী চক্র কি বুঝাতে চাইছে। তার প্রশ্ন?। জুয়েল আমার আত্মীয় সেই জন্য আমি গর্বিত। এখন তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। রংপুরসহ সবখানে এই দুঃখজনক বর্বর ঘটনায় যেভাবে মানুষ রিএ্যাক্ট করেছে। উগ্র মৌলবাদীদের সম্পকে ঘৃণা জন্মাচ্ছে। তাতে তো জুয়েল সম্পর্কে সাধারণ মানুষ খুব ভাল বলছে। জুয়েলকে নিয়ে আমরা গর্বিত। সে একজন নামাজী ব্যক্তি ছিল। তিনি তো গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। এদিকে সাধারণ মানুষ বলছে, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটির সূত্রপাতের পর প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা সময় ছিল। সঠিক সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিলে এমন পৈশাচিক ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সাধারণ মানুষ এই ঘটনায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রশাসনের ব্যর্থতা কোথায়। প্রশাসন সাধারণ মানুষকে নিয়ে কতটুকু ভাবে। সীমান্ত গ্রাম। এখানে তো সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা থাকার কথা। সীমান্ত গ্রামগুলো তো গোয়েন্দা নজরে থাকার কথা। কিন্তু কেন? গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে সময় লাগল। বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। রংপুর সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাটের বুড়িমারী থেকে পবিত্র কোরান শরিফ অবমাননার অভিযোগে হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা জুয়েলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। খবর পেয়ে এলাকাবাসীসহ আত্মীয় স্বজনরা ছুটে এসেছেন। তার এমন করুণ মৃত্যুর খবরে স্ত্রী, সন্তান, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় বন্ধুদের আহাজারিতে রংপুর নগরীর শালবন এলাকার আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে। শুনশান নীরবতা এলাকাজুড়ে। শুক্রবার সকালে রংপুর নগরীর শালবনে তার বাসভবনে সরেজমিনে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে। নিহত শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তার নামেই তাদের বাড়ির নাম ছিল নবী ভিলা। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের গ্রন্থাগারিক পদ থেকে চাকরিচ্যুত হন। রংপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, রংপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রী নেন। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এসএসসি পাস করেছে ও ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। জুয়েল ধর্মভীরু ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ নিয়মিত কোরান পাঠ করতেন তিনি। কোন কারণে সময় মতো নামাজ পড়তে না পারলে কাজা নামাজ পড়তেন। স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে চাকরি চলে যাওয়ায় মানসিক কষ্টে এবং একমাত্র উপার্জনপথ বন্ধ হওয়ায় মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি। রাতে তার ঘুম আসতো না। ডাক্তারের পরামর্শে সেবন করতেন ওষুধ। তার বাড়িতে ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি ঘরে পবিত্র কোরান, হাদিসসহ ইসলামিক বিভিন্ন বই। ঘরের আলমারি ও দেয়ালে ঝুলছে ইসলামিক বিভিন্ন নিদর্শন ও দোয়ার ছবি। তার স্ত্রী হাতে তসবিহ নিয়েই আহাজারি করছেন। স্বজনরা তাকে সান্ত¦না দিচ্ছেন। নিহত জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা আহাজারি করতে করতে বলেন, আমি বিশ্বাস করি না সে কোনভাবেই কোরান অবমাননা করতে পারে। যারা গুজব ছড়িয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। তিনি বলেন, আমার স্বামী অনেক সহজ সরল ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, কোরান-হাদিস পড়তেন। প্রত্যেক বছরই তিন-চারবার করে কোরান খতম দিতেন, করোনার সময় কয়েকবার কোরান খতম দিয়েছেন। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা। তার বোন হাছনা আক্তার নিতি অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ রংপুরের গ্রন্থাগারিক পদে ষড়যন্ত্র করে জুয়েলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয়। এতে প্রচ- রকমের মানসিক ধাক্কা পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে সে। এতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোযোগ দেয়। সে নিয়মিত কোরান হাদিসসহ ইসলামিক বই পড়তো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করতো। অনেক সময় আছরের নামাজ পড়ে মসজিদেই কোরান-হাদিস পড়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরত। সে কোনভাবেই কোরান অবমাননা করতে পারেনা। যারা গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করেছে তাদের আমি শাস্তি চাই। তিনি জানান, তার ভাই জুয়েল বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর মোটরসাইকেল নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়। তিনি দুপুরে ফোন করে সে কোথায় জানতে চাইলে তাকে জানায় যে সে ডিসির মোড়ে আছে। সে মাদক চোরাকারবারিদের তথ্য পেয়েছে। পুলিশ র‌্যাব তার সঙ্গে আছে। চোরাকারবারিদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য সে চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, আমি শুনেছি তার বন্ধুসহ ওষুধ আনতে গিয়ে বুড়িমারীতে মসজিদে আছরের নামাজ পড়ে মসজিদের ওয়ালের তাকে রাখা কোরান নিতে যায়। এ সময় অনবধানবশত কোরান ও হাদিসের বই পায়ের কাছে পড়ে গেলে এটা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বজনরা এভাবে গুজব ছড়িয়ে নৃশংসভাবে জুয়েলকে হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন। এছাড়াও বিকেলে এ নির্মম হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ‘সচেতন নাগরিক’ এর ব্যানারে এলাকাবাসী রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন। সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-লসহ দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নে আবু ইউসুফ শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। শনিবার বিকেল ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম.এ মতিন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাবি শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান রাজু, রিয়াজুল আবীর, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হাসানসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন বলেন, লালমনিরহাটের মানুষ পুড়িয়ে হত্যা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী ও মানবতাবিরোধী। এহেন ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একজন মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপরও ন্যক্কারজনক হামলা করা হয়েছে। এই হত্যাকা-ের পেছনে নিশ্চয়ই কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে বলে আমরা মনে করি। ধর্মের নাম ব্যবহার করে একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আল মামুন বলেন, সম্প্রতি লালমনিরহাটের ঘটনাই প্রমাণ করে হামলাকারীরাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। এরা মানবতার চরম শত্রু। সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে লোকটিকে পিটিয়ে পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সমগ্র দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সভায় ওয়াজের নামে গুজব ছড়ানো ও উস্কানিমূলক অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় না, জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় না, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয়না যা দেশের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধানবিরোধী এসব কর্মকা-ই ধর্মীয় উগ্রবাদকে আরও উসকে দিচ্ছে। মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি দেশের ইতিহাসচর্চা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ পাঁচ দফা দাবি রাখেন। সেগুলো হলো: লালমনিরহাটের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে; মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
×