ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৩০ অক্টোবর ২০২০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের মুক্ত রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি আগামী ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। তবে আগামী বছর যারা এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবে, তাদের কথা মাথায় রেখে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে নবেম্বরের মাঝামাঝি ‘সীমিত পরিসরে’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে নতুন বছরে পাঠ্যবই উৎসব হবে না। করোনার মধ্যে অতিরিক্ত টিউশন ফি নেয়া যাবে না। শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ছুটি বৃদ্ধি ছাড়াও শিক্ষার নানা বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন সংবাদ সম্মেলনে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু ছুটি বাড়ানো ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সবার স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে গত মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আমরা বাধ্য হয়েছি। আগামী ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে নানা জিনিস আরও পর্যালোচনা করে দেখছি খুবই সীমিত পরিসরে কিছু খোলা যায় কিনা। করোনার প্রকোপে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েক দফায় এই ছুটি বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য আগামী ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের সরকারী, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ থাকবে। এ সময়ে নিজেদের ও অন্যদের করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে জারি করা নির্দেশনা ও অনুশাসন শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাসস্থানে অবস্থানের বিষয়টি অভিভাবকবৃন্দ নিশ্চিত করবেন এবং স্থানীয় প্রশাসন তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষার্থীরা যাতে বাসস্থানে অবস্থান করে ঠিকমতো পড়াশোনা করে, সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন। পরিস্থিতি ভাল হলে সীমিত পরিসরে খোলার চিন্তা ॥ সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য কিছু তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চেষ্টা করে দেখব পরিস্থিতি যদি অনুকূলে হয়, আমরা সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার চেষ্টা করতে পারি। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতি কেমন হয় তার ওপর। আমরা দেখছি যে, বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এখানেও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী বছর যারা এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা দেবে, তাদের কথা বিবেচনায় রেখে আমরা খুবই সীমিত পরিসরে, স্বাস্থ্যঝুঁকি একেবারেই যাতে না থাকে এ রকম একটা ব্যবস্থা করে কী করা যায়, সেগুলো আমরা চিন্তাভাবনা করে দেখছি। যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয় তাহলে আমরা সে ধরনের সিদ্ধান্তে যাব। প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। তবে করোনার কারণে এবার এইচসএসসি পরীক্ষা নেবে না সরকার। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী ও এসএসসি এবং সমমানের ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। বলেন, এবার যাদের এইচএসসি দেয়ার কথা ছিল তারা কিন্তু পুরো সিলেবাস শেষ করে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু আগামী বছর যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেবে, তাদের পড়াশোনায় কিছুটা হলেও ব্যাঘাত হয়েছে। আট-নয় মাস ক্লাস করতে পারনি। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য সীমিত পরিসরে হলেও এখন থেকেই নির্ধারিত পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যদি সময় দেয়া যায়, নির্ধারিত যে সিলেবাস, তা তারা হয়ত সম্পন্ন করতে পারবে। যদিও নানাভাবে ক্লাস করাচ্ছি। এরপরেও সীমিত পরিসরে হলেও তাদের ক্লাসরুমে নিয়ে এসে যেখানে যেখানে সমস্যাগুলো আছে তা দূর করতে চাই। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আশা করি এসএসসি পরীক্ষা পেছাতে হবে না। যদি প্রয়োজন হয় পরিস্থিতির কারণে, তবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব। তবে চেষ্টা করব সময়মতো পরীক্ষা নেয়ার। মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার আগে শিক্ষার্থীদের স্কুলভিত্তিক নির্বাচনী পরীক্ষা দিকে হবে কিনা জানতে চাইলে দীপু মনি, সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসতে পারি কিনা, এটাই এখনকার ভাবনা। কোন না কোন ধরনের এ্যাসেসমেন্ট হয়েই তারা পরীক্ষায় বসবেন। সেটা কী হবে, কী ধরনের হবে, সেটা পরিস্থিতি বুঝে আমরা জানিয়ে দেব। এ্যাসেসমেন্ট হয়েই তারা পাবলিক পরীক্ষা দিতে যাবে। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ও কারিগরিতে পরীক্ষা ॥ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি পরীক্ষা বাকি থাকায় তাদের স্নাতকের ফল আটকে রয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের পাঁচটি পরীক্ষা হয়েছে, আর কয়েকটি বাকি। কেউ কেউ এই পাঁচটি পরীক্ষার ভিত্তিতে অন্যগুলোতে নম্বর দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে বা কারিগরিতে যারা আছেন তাদের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ তাদের এটি চূড়ান্ত পরীক্ষা, এরপর তারা কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন। কাজেই সে পরীক্ষাগুলোর যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হয়, তাহলে তাদের চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাই পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন করা সঠিক হবে না। এ বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনও যা আমরা মনে করছি, তাদের পরীক্ষা নেয়া যাবে। এদের সংখ্যাও অত বড় নয়। আশা করছি পরীক্ষা নিয়ে নিতে পারব। আমি আহ্বান জানাব- এখন থেকেই যেন পরীক্ষার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এক বা দুই মাস পর পরীক্ষা হলে যেন বলতে না হয় যে, ‘প্রস্তুতি নিতে পারিনি’। এবার বই উৎসব হচ্ছে না ॥ করোনা পরিস্থিতির কারণে নতুন বছরে পাঠ্যবই উৎসব হবে না। তবে বিকল্প উপায়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বই তৈরি থাকবে। তবে যেভাবে বই উৎসব করি, যেখানে সব শিক্ষার্থী হাজির থাকে, এবার স্বাভাবিক কারণে, স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে নিশ্চয় আমরা সমাবেশ করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারব না। বিকল্প চিন্তা করে কিভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেয়া যায় সেই বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব। ইউজিসিকে গণশুনানির নির্দেশ দেয়নি মন্ত্রণালয় ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যসহ অন্যান্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) গণশুনানির নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, গণশুনানি ইউজিসির তদন্ত প্রক্রিয়ায় আছে কিনা, নির্ধারিত আইনে এখতিয়ার আছে কিনা সেটা তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমরা দেখব। যদি প্রক্রিয়া না মেনে তদন্তটি হয় তাহলে তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা দেখব গণশুনানির মতো করে তদন্ত করা সমীচীন কিনা। আমরা কিন্তু গণশুনানি করার কোন নির্দেশনা দেয়নি। উপমন্ত্রী বলেন, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে সেটি ইউজিসিতে পাঠিয়েছিলাম। তারা তদন্ত করেছেন। একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সেটি এখনও আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি। রাবি উপাচার্যের বিষয়ে পর্যালোচনা করব। আমরা এ বিষয়টা নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত জানাব’। টিউশন ফি’র সঙ্গে অযৌক্তিক ফি আদায় করা যাবে না ॥ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, টিউশন ফি নিয়ে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছা মতো নানা ধরনের ফি আদায় করছে। এ কারণে এই বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা জারি করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন ক্রীড়া, মিলাদ-মাহফিল, ল্যাব ফিসহ নানা ধরনের ফি বাতিল করে বাকি টাকা আদায় করতে বলা হবে। দ্রুত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে। অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসির বৈঠক ॥ গত ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উদ্বোধন করা একটি সফটওয়্যারের কার্যকারিতা উপাচার্যদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর তাদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহার পদ্ধতি ও তার সুবিধা তুলে ধরলে সকলেই তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের উদ্ভাবিত ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সাম সিস্টেম’র মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় থেকেও একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি ডিজিটাল ডিভাইজ ব্যবহার করেই অনলাইনে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলেও জানানো হয়।
×