ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ির আঙ্গিনায় দুর্লভ ননি চাষ

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, ভিটামিনে ভরপুর-জটিল রোগের মহৌষধ

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৮ অক্টোবর ২০২০

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, ভিটামিনে ভরপুর-জটিল রোগের মহৌষধ

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ যুগ যুগ ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের আদিবাসীদের মধ্যে মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসা ফলটিকে বাংলাদেশে ননি নামে চিহ্নিত করা হলেও মূলত এর ইংরেজী নাম সাইট্রিফেলিয়া আর বৈজ্ঞানিক নাম ‘গ্রেভিওলা’। ভিটামিন এ, সি, ই, বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, প্যান্টোথেনিক এসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, কপার ও মিনারেলসহ প্রায় ১৫০টির মতো পুষ্টিগুণেসমৃদ্ধ ননি ফলের রস নিয়মিত সেবন করলে ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এছাড়া ননি ফলের রস সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ব্যথা উপশমসহ নানান জটিল রোগে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ বিদেশী ফল সাইট্রিফেলিয়া (ননি) ফলের চারা ও গাছ থেকে ফল উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের বাসিন্দা হাবিব সরদার। ইতোমধ্যে তার বাগানে রোপিত ১১টি গাছের মধ্যে সাতটি গাছে চলতি বছর ননি ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন তিনি দুর্লভ এ ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। উদ্যোক্তা হাবিব সরদার জনকণ্ঠকে জানান, চার বছর পূর্বে একটি দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙ্গে যায়। বিভিন্ন চিকিৎসার পর পা ভাল হলেও তিনি পায়ে প্রচ- ব্যথা অনুভব করেন। পরবর্তীতে এক কবিরাজের স্মরণাপন্ন হওয়ার পর তিনি (কবিরাজ) ব্যথা নিরাময়ের জন্য পেইন কিলারখ্যাত ননি ফলের জুস পান করার পরামর্শ দেন। কিন্তু দুর্লভ ওই ফল বরিশাল কিংবা ঢাকার কোথাও খুঁজে না পেয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর পূর্বে তিনি মালয়েশিয়া থেকে একটি পাকা ননি ফল সংগ্রহ করিয়েছেন। সেই ফলের বীজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করে তিনি ৪৭টি চারা উৎপাদন করেন। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে তার ২৪টি চারা নষ্ট হয়ে যায়। বাকি ২৩টি চারার মধ্যে তার বাগানে এখন ১১টি চারা রয়েছে। তিন বছরের ব্যবধানে সাতটি গাছে চলতি বছর ননি ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাবিব সরদার আরও জানান, একটি হারবাল কোম্পানির সঙ্গে তার কথা হয়েছে। সব ফল তারা এখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে নেবেন। এ বছরই ফলের বিচি রেখে তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করারও আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য তিনি ৫০০ চারা রোপণ করা যায় এমন প্লটও তৈরি করেছেন। কৃষি বিষয়ে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা পেলে এবং দেশের আবহাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে ননি ফল চাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলেও তিনি (হাবিব সরদার) উল্লেখ করেন। পুষ্টিবিদ ইলিয়াস বিন শওকত জানান, বিশ্বের ৩০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ননি ফল নিয়ে গবেষণা চলছে। দুই হাজার বছরের বেশি সময় ধরে প্রাচীণ পলিনেশিয়া, চীন, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের আদিবাসীদের মধ্যে অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ হিসেবে ননি ফল ব্যবহার হয়ে আসছে। আধুনিক যুগেও এ ফলের রস মানব শরীরে বিভিন্ন ধরনের উন্নতির প্রাণ জুগিয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে এলাকায় ননি ফলের বাগান থাকে সেখানে কোন রোগ সংক্রমণ ছড়ায় না।
×