ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুতে বসল ৩৪তম স্প্যান ॥ দৃশ্যমান ৫.১ কিমি

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২৬ অক্টোবর ২০২০

পদ্মা সেতুতে বসল ৩৪তম স্প্যান ॥ দৃশ্যমান ৫.১ কিমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর/ সংবাদদাতা, মুন্সীগঞ্জ, ২৫ অক্টোবর ॥ পদ্মা সেতুতে ৩৩তম স্প্যান বসানোর মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধানে রবিবার সকাল ১০টায় বসল ৩৪তম স্প্যান। এই স্প্যানটি এ যাবতকালের সবচেয়ে কম সময়ের ব্যবধানে বসানো হলো। ৩৪তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হলো পাঁচ হাজার ১০০ মিটার অর্থাৎ ৫.১ কিলোমিটার। মাওয়া প্রান্তের ৭ ও ৮ নম্বর পিলারের ওপর ৩৪তম স্প্যান সফলভাবে স্থাপন করেন প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। এর আগে ১১ অক্টোবর ৩২তম স্প্যান বসানোর মাত্র আটদিনের ব্যবধানে ১৯ অক্টোবর (সোমবার) দুপুর ১২টার দিকে বসানো হয় ৩৩তম স্প্যান ‘১সি’। এই স্প্যানটি বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৩ ও ৪ নম্বর পিলারের ওপর। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি সাতটি স্প্যান বসে যাবে বলে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা। এই সাতটি স্প্যান বসে গেল স্বপ্নের পদ্মা সেতু পুরোটা দৃশ্যমান হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩৩তম স্প্যান বসানোর পাঁচদিন পর শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ায় অবস্থিত কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে ৩৪তম স্প্যান নিয়ে রওনা দেয় তিন হাজার ৬০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ২-এ আইডির স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তে ৭ ও ৮ নম্বরের পিলারের কাছে পৌঁছে। এরপর নোঙর করে শনিবার সারারাত সেখানে অবস্থান করে। রবিবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয় পিলারের ওপর স্প্যান তোলার প্রক্রিয়া। সকাল ১০টায় সফলভাবে ৭ ও ৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় স্প্যানটি। ৩৪তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর পাঁচ হাজার ১০০ মিটার অর্থাৎ ৫.১ কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর ৩৩তম স্প্যান বসানো হয়। রবিবার ৩৪তম স্প্যান বসানোর পর ৩৫তম স্প্যান বসানো হবে ৩০ অক্টোবর। অর্থাৎ পাঁচদিন পরপর স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যাতে ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়। ৩৪তম স্প্যান বসানোর পর বাকি থাকল মাত্র সাতটি স্প্যান। পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসবে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ অক্টোবর পিয়ার ৮ ও ৯ নম্বরের ওপর ৩৫তম স্প্যান (স্প্যান ২-বি), ৪ নবেম্বর পিয়ার ২ ও ৩ নম্বরে ৩৬তম স্প্যান (স্প্যান ১-বি), ১১ নবেম্বর পিয়ার ৯ ও ১০ নম্বরে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নবেম্বর পিয়ার ১ ও ২ নম্বরে ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান ১-এ), ২৩ নবেম্বর পিয়ার ১০ ও ১১ নম্বরে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর পিয়ার ১১ ও ১২ নম্বরে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) এবং ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান (স্প্যান ২-এফ) বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। এদিকে ৪১টি স্প্যানের ওপর দুই হাজার ৯১৭টি রোড স্ল্যাব বসানো হবে। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার রোড স্ল্যাব। এছাড়া, রেললাইনের জন্য লাগবে দুই হাজার ৯৫৯টি রেল সøাব। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ৬০০ রেলওয়ে সø্যাব। সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে। চলতি বছর ১০ জুন পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ ৩১তম স্প্যান বসানো হয়। এরপর করোনার মহামারী ও দুই দফা দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে সেতুর অন্যান্য কাজ চললেও কোন স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। বন্যা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ায় পদ্মায় পানির উচ্চতা কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে কিছুটা কমেছে স্রোতের তীব্রতা। এখনও নদীতে স্রোত থাকলেও আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে আসায় কাজের গতি বেড়েছে। গত ১০ অক্টোবর সেতুর ৩২তম স্প্যান বসানোর জন্য সকাল থেকেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে স্রোতের কারণে সারাদিন চেষ্টা করেও স্প্যান বহনকারী ক্রেন নোঙর করতে না পেরে বিকেল পাঁচটায় কার্যক্রম স্থগিত করেন প্রকৌশলীরা। পরদিন ১১ অক্টোবর সফলভাবে ৩২ নম্বর স্প্যান বসে যায়। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছর আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ৫টি স্প্যান পিলারের ওপর বসানোর লক্ষ্য ছিল। কিন্তু মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। ১০ জুন জাজিরা প্রান্তে ৩১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় ৪ হাজার ৬৫০ মিটার পদ্মা সেতু। এরপর নদীতে পানি বাড়তে শুরু করলে ২৪ জুন ৩২ নম্বর স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পদ্মার পানি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ৪ দশমিক ৮ মিটারের বেশি পানি হলে কাজ করা সম্ভব হয় না, সেখানে এ বছর এখনও নদীতে পানির উচ্চতা ৫ দশমিক ৫ মিটারের বেশি। একই সঙ্গে স্রোতের গতি এখন প্রতি সেকেন্ডে ২ দশমিক ৫ মিটার। স্বাভাবিক স্রোতের গতি থাকে ১ দশমিক ৫ মিটার। আগামী কয়েক মাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে দ্বিগুণ গতি আসবে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু- এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা ও বন্যার কারণে প্রায় চার মাস স্প্যান বসানোর কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বর্তমানে নদীর স্রোত ও পানির গভীরতা অনুকূলে আসায় একের পর এক স্প্যান বসানোর কাজ চলছে। শনিবার স্প্যান বহনকারী ক্রেন নির্দিষ্ট পিলারের কাছে পৌঁছে যায়। সময়ের স্বল্পতা এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে বসানো সম্ভব হয়নি। রবিবার সকাল ৬টা থেকে কার্যক্রম শুরু হয় এবং সকাল ১০টায় সফলভাবে স্প্যানটি বসানো হয়। অক্টোবরে দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে। রবিবার একটি বসানোয় তিনটি হলো। এ মাসেই আরও একটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে।’
×