ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীজুড়ে সবার উৎসব

বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই উদ্যাপন, ভাটা পড়েনি হাসি আনন্দে

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৫ অক্টোবর ২০২০

বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই উদ্যাপন, ভাটা পড়েনি হাসি আনন্দে

মোরসালিন মিজান ॥ পূজাতে বৃষ্টি হয় না, এমন নয়। তাই বলে এত? জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। করোনা সংক্রমণের ভয় আগে থেকেই ছিল। তদুপরি টানা বর্ষণে সব ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই বলে পূজাও? শারদ উৎসবের জন্য দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষা করে থাকতে হয়। কত ধরনের প্রস্তুতি চলে মনে মনে! এমন হাসি আনন্দের উপলক্ষ করোনার ভয় বা সামান্য বৃষ্টিতে ভেসে যেতে পারে? উৎসবপ্রিয় বাঙালী তাই ঠিক বের হয়ে এসেছে ঘর থেকে। রাজধানীর মন্দির ও ম-পগুলোতে বিভিন্ন বয়সী মানুষের সমাবেশ ঘটছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই চলছে উৎসব। শনিবার মহাষ্টমীর দিন বৃষ্টি দু’ দশ মিনিট ক্ষ্যান্ত দিয়েছিল। তাতেই বদলে যায় দিনের ছবিটা। সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে দল বেঁধে বেড়িয়ে আসে মানুষ। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নতুন পোশাকে সেজে ম-পে ম-পে ঘুরে বেড়ান। যোগ দেন অন্যরাও। ফলে দুর্গোৎসবের আনন্দটা এদিন বেশ চোখে পড়ে। দুপুরের দিকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে উৎসবের রংটা পরিষ্কার দেখা গেল। সামনের রাস্তা ধরে কেউ আসছেন। কেউ ফিরে যাচ্ছেন। আসা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসিরাশি আনন্দটা অনুভব করা যায়। দর্শনার্থীদের পোশাকে লাল এবং সাদা রঙের প্রাধান্য, অনেকটা পহেলা বৈশাখের সাজ। নারীরা রঙিন শাড়ি পরে এসেছিলেন। পুরুষের গায়ে পাঞ্জাবি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দিরে প্রবেশ করছিলেন তারা। অঞ্জলি দিচ্ছিলেন। ছবি তুলছিলেন। উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়ও। ফুটপাথে দোকান বসেছে। বিক্রি হচ্ছে নাড়ু-বাতাসা। ফুচকা মুড়ি চানাচুর থেকে শুরু করে পাওয়া যাচ্ছে হাওয়াই মিঠাইও। শিশুদের জন্য আরও আছে রঙিন বেলুন। বিভিন্ন ধরনের খেলনা। সব মিলিয়ে গ্রামীণ মেলার আবহ। সদ্য বিয়ে সেরেছেন জয় ও সুচিত্রা ভৌমিক। দু’জনের এটি প্রথম পূজা। কিন্তু করোনা আর বৃষ্টির মধ্যে মনের আনন্দ ধরে সম্ভব হচ্ছে কি? জানতে চাইলে জয় বলেন, সাধারণ সময় হলে আরও অনেক আনন্দ করতাম। নতুন বিয়ে করেছি। কত প্ল্যান ছিল। সবই বলতে পারেন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পূজার আনন্দটা আলাদা। এই যে বৃষ্টির মধ্যে বের হয়েছি, দেবী দর্শন করলাম, মন ফুরফুরে হয়ে গেছে। সুচিত্রার কণ্ঠে অবশ্য আক্ষেপ ঝরছিল। বললেন, এমন পূজা যেন আর না আসে। মা যেন করোনাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান এবার। ঢাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আয়োজন খামারবাড়ির পূজা। প্রতিবারের মতোই কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ। ২৯তম উৎসবে এসে করোনার বাধায় পড়েছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি। এর পরও থেমে নেই কোন কিছু। শনিবার দুপুরের দিকে মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, পরিসর আগের তুলনায় ছোট করা হয়েছে। পুরো মাঠের পরিবর্তে একাংশ নিয়ে দৃষ্টিনন্দন ম-প। ভারতের একটি প্রাচীন মন্দিরের আদলে এর নক্সা করা হয়েছে। প্রতিমার ফর্মটাও স্বতন্ত্র। সুন্দর। কাজটি ধামরাইয়ের প্রতিমা শিল্পী উত্তম কুমার করেছেন বলে জানা গেল। সংঘের সভাপতি সমীর চন্দ্র বলছিলেন, এখন সব কিছুই সীমিত। এর মধ্যেই যেটুকু সম্ভব ভাল করার চেষ্টা করেছি আমরা। আশার কথা যে, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় আজ মহাষ্টমীর দিনে ৮ দফায় অঞ্জলি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিবার অংশ নেন দেড় শ’ পূজারি। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এই নিয়মে চলে অঞ্জলি প্রদান। আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য নুপুর কর্মকার জানান, প্রতিদিন আধাঘণ্টা চ-ীপাঠ হচ্ছে। বাকি আধা ঘণ্টা হচ্ছে ভক্তিমূলক সঙ্গীত। অভিজাত এলাকা বনানীতে এবারও দৃষ্টিনন্দন ম-প। নান্দনিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ শৈলী দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। ম-পের দেয়ালে কত কত রকমের কাজ! সন্ধ্যা হতেই জ্বলে ওঠছে রঙিন বাতি। ম-পেরে সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে পাশের রাস্তা থেকে। অনেকে আসা যাওয়ার পথে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন। তবে ভেতরে প্রবেশে কড়াকড়ি আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রবেশ করতে হচ্ছে। এখানে উৎসব উদ্যাপনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে ছবি তোলা। ম-পের বিভিন্ন অংশে দাঁড়িয়ে প্রচুর ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা। অন্য ধর্ম বিশ্বাসের মানুষেরাও যোগ দিয়েছে উৎসবে। তাদেরই একজন সায়েম। বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। বললেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বাঙালী এ মন্ত্রে বিশ্বাসী। অভিন্ন চেতনা থেকে এখানে আসা। প্রতি বছরই আসি। না এলে বরং মন খারাপ হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে উর্ধে তুলে ধরা উৎসব চলবে আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত।
×