ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তাপহীন শেষ বিতর্কে জলবায়ু, করোনা ও বর্ণবাদ ইস্যুর প্রাধান্য

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২৪ অক্টোবর ২০২০

উত্তাপহীন শেষ বিতর্কে জলবায়ু, করোনা ও বর্ণবাদ ইস্যুর প্রাধান্য

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ১২ দিন আগে মুখোমুখি শেষ বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা, বর্ণবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানান বিষয়ে একে অপরকে ঘায়েল করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার টেনেসির ন্যাশভিলে অনুষ্ঠিত এ বিতর্কে দুই প্রার্থী নিজেদের কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির পাল্টাপাল্টি অভিযোগও এনেছেন। খবর বিবিসি, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের। এবারের বিতর্কে বিতণ্ডা হলেও প্রথম বিতর্কের মতো বিশৃঙ্খল ছিল না। দুজনেই অনেকটা শান্ত আর ঠা-া মেজাজে একে অপরকে আক্রমণ করেছেন। সময় নিয়ে কথা শুনেছেন একে অপরের। বাধাহীনভাবে কথা বলতে ‘সুইচ অফ’ করে অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ রাখা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন আয়োজকরা। বিতর্কে ট্রাম্প কথা বলেন ৪১ মিনিট। করোনা মহামারী নিয়ে আলোচনায় নির্বাচিত হলে আসন্ন দিনগুলোতে আরও লকডাউন দেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি বাইডেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, অর্থনীতি সচলে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বাইডেন লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিদ্বন্দ্বীর কর রিটার্ন সংক্রান্ত অস্বচ্ছতার প্রসঙ্গ সামনে আনেন। বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ককে দুই প্রার্থীর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর হওয়া প্রথম বিতর্কের তুলনায় বেশ সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। সেদিন দুজন একে অপরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ ও অপমান করেছিলেন। ন্যাশভিলের শেষ বিতর্কেও ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের ছড়াছড়ি। দুই প্রার্থী যে একে অপরকে ভয়াবহ অপছন্দ করেন, এদিনের আলোচনায় ফুটে উঠেছিল তাও। বিতর্কে করোনা মহামারী মোকাবেলা নিয়ে দুই প্রার্থী বিপরীতধর্মী অবস্থান নেন। বিজ্ঞানীরা যদি পরামর্শ দেয় তাহলে আরও লকডাউন দেয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন জানান তিনি সেরকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আর ট্রাম্প বলেছেন, ভাইরাস সংক্রমণে অধিকাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠায় এখন আরও শাটডাউন দেয়ার কথা বিবেচনা করাই ভুল হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এটা বিশাল দেশ, বিশাল অর্থনীতি। মানুষজন তাদের চাকরি হারাচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করছে। তাদের হতাশা, এ্যালকোহল ও মাদক গ্রহণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এর আগে কেউই এমনটা দেখেনি। বাইডেন তার আলোচনায় মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর দায় ট্রাম্পকে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর জন্য যিনি দায়ী, তার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা উচিত নয়। বর্ণবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেছেন, এ কক্ষে যারা আছেন, আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বর্ণবাদী। তিনি ১৯৯৪ সালের অপরাধ বিলের কথাও তোলেন, যার খসড়ায় বাইডেন সহায়তা করেছিলেন। ওই আইনের কারণে বিপুলসংখ্যক আফ্রিকান-আমেরিকানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে আসছেন। বাইডেন তার আলোচনায় ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অন্যতম বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট’ অ্যাখ্যা দেন। তিনি প্রতিটি বর্ণবাদী আগুনেই হাওয়া দেন। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের তাদের সন্তানের কাছ থেকে আলাদা করার নীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প জানান, ওবামা প্রশাসনের আমলেও অভিবাসী শিশুদের আটক করা হয়েছিল। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, খাঁচাগুলো কে বানিয়েছিল, জো? বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনই অভিবাসী পরিবারগুলোর সদস্যদের নির্দয়ভাবে আলাদা করেছে। তাদের এ চর্চাকে ‘অপরাধ’ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে চমকে দেয়া ট্রাম্প তার আলোচনায় বাইডেনের ছেলে হান্টারের ‘ফাঁস হওয়া’ ইমেইলের প্রসঙ্গ তুলে চীনের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আনেন। ট্রাম্প বলন, আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আপনার একটি ব্যাখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রাপ্য। জবাবে বাইডেন বলেন, আমি কোন দেশের কাছ থেকে কখনই একটি পয়সাও নেইনি। চীনে ট্রাম্পের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে- নিউইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে ও চীনের ট্রাম্পের দেয়া কর নিয়ে তুলনা করেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, চীনে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৬১ ডলার কর দেয়া হয়েছিল। একই পত্রিকা আগের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্প ২০১৬-১৭ সালে মাত্র ৭৫০ ডলার কর দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আমার অনেকগুলো ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে, সারাবিশ্বেই আছে এবং সেগুলোর সবই তালিকাভুক্ত। আমি একজন ব্যবসায়ী, যিনি ব্যবসা করেন। জ্বালানি নীতি নিয়ে আলোচনায় ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে তেল শিল্প নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চান। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি কি তেল শিল্প বন্ধ করে দেবেন? বড় বড় তেল কোম্পানিগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন এবং ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানান বাইডেন। তিনি বলেন, আমি তেল শিল্পকে রূপান্তর করব। কেননা এটি ভয়াবহ দূষণ ঘটাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, সত্যিকার অর্থে তিনি যা বলতে চাচ্ছেন, তা হলো তিনি তেল শিল্পকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। টেক্সাস, আপনাদের কি এটা মনে থাকবে? পেনসিলভানিয়া, ওকলাহোমা, ওহাইও মনে থাকবে? প্যারিস এ্যাকর্ড নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা প্যারিস এ্যাকর্ড থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ আমাকে ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হতো। আর আমাদের সঙ্গে সেখানে খুব বাজেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
×