ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার বাংলাদেশী ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের দিনক্ষণ অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২২ অক্টোবর ২০২০

করোনার বাংলাদেশী ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের দিনক্ষণ অনিশ্চিত

রশিদ মামুন ॥ বিশ^জুড়েই প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড় শুরু হয়েছে। এই দৌড়ে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে বছরের মাঝামাঝি সময়ে। বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও একটি করোনার ভ্যাকসিন রয়েছে এমন খবরে আত্মবিশ^াস সৃষ্টি হয়েছে দেশবাসীর মধ্যে। তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে, কবে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে। গ্লোব বায়োটেক এরই মধ্যে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করার জন্য তৃতীয়পক্ষ হিসেবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এখন ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগের বিষয়টি নির্ভর করছে আইসিডিডিআর,বি-এর ওপর। প্রতিষ্ঠানটি ট্রায়ালের প্রটোকল তৈরি করবে এর পর বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্স কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অনুমোদন চাওয়া হবে। এর পর ট্রায়াল হবে। ট্রায়ালের প্রত্যেকটি ধাপ শেষ করতে ২৮ দিন সময় প্রয়োজন হয়। তবে চাইলে অনুমোদন এবং অন্যান্য বিষয় দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। তবে দেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। এর আগে চীনের সিনোভ্যাক বাংলাদেশে ট্রায়াল দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে সেই সুযোগ হেলায় হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একগুঁয়েমিতে চীনা ভ্যাকসিনের কালক্ষেপণ করায় পিছিয়ে গেছে সিনোভ্যাক। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলেও সিনোভ্যাক অর্থ দাবি করলে পিছিয়ে গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে দোটানায় থাকা স্বাস্থ্য মনন্ত্রণালয় গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে কতটা এগিয়ে আসবে সেটিই এখন দেখার বিষয়। জানতে চাইলে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড রিসার্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে আইসিডিডিআর,বির ওপর। তারাই তৃতীয়পক্ষ হিসেবে ভ্যাকসিনটির মানবদেহে ট্রায়াল করবে। তিনি বলেন, আইসিডিডিআর,বির বিশ^মানের ল্যাব রয়েছে। বিশে^র ছয়টি টেস্টিং ল্যাবের মধ্যে আইসিডিডিআর,বির ল্যাবটিও একটি। এখন তারা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করার জন্য একটি প্রটোকল তৈরি করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা যখনই গণমাধ্যমে নিজেদের ভ্যাকসিনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়েছে তখনই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তাই তাদের আশ^াস দিয়েছেন অনুমোদনের বিষয়গুলো তারা দেখবে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে তাদেরকে কোন কিছু জানায়নি। আবার তারাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কোন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে ভ্যাকসিনের বিষয়ে কিছু জানায়নি। ড. আসিফ মাহমুদ বলেন, ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বিভিন্নভাবে করা যায়। অনেকে প্রথম ট্রায়ালের পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল আলাদা আলাদাভাবে করেন। আবার এই দুটি এক সঙ্গেও করা যায়। কিন্তু যাই করা হোক না কেন, বিষয়গুলো নির্ভর করছে আইসিডিডিআর,বির ওপর আইসিডিডিআর,বি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়ে যে প্রটোকল তৈরি করবে তার কাজ এখনও শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। আইসিডিডিআর,বির একটি সূত্র বলছে, ভ্যাকসিনটির সমস্ত তথ্য নিয়ে গ্লোবের একটি উপস্থাপনা করার কথা রয়েছে। এর পরই আইসিডিডিআর,বি কাজ শুরু করবে। গ্লোবের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের বিষয়ে প্রটোকল এবং স্বেচ্ছাসেবক খুঁজবে আইসিডিডিআর,বি। তবে প্রতিষ্ঠানটির কোন কর্মকর্তা এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চায়নি। তারা বলছে এখনও সংবাদ মাধ্যমকে জানানোর মতো কোন কিছু ঘটেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারত ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে দ্বিতীয়ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। একই সঙ্গে দেশটিতে অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের ট্রায়াল হচ্ছে। পাকিস্তানেও চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অবশ্য বলছেন, যেখানেই দ্রুত ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সরকার কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন কিনবে। এজন্য সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান সম্প্রতি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে করোনার তিন কোটি ভ্যাকসিন আসবে। অক্সফোর্ডের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনই দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব। যদিও এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাই শেষ হয়নি। দেশে মাত্র দুটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন উৎপাদন করে। সেক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয়ধাপের ট্রায়াল শেষ হলেও গ্লোব বায়োটেক এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে ড. আসিফ মাহমুদ বলেন, দেশে যারা ভ্যাকসিন উৎপাদন করেন তার সবই অন্যদের আবিষ্কৃত। এখন ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান তিনি। যে কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রথম পর্যায়ে গবেষণাগারে এটি প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করা হয়। এর পর প্রথম ধাপে এক থেকে তিন জনের ওপর সংখ্যক মানুষকে প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে এর চেয়ে কিছু বেশি ২০ থেকে ৪০ জনের ওপর ট্রায়াল দেয়া হয়। কিন্তু তৃতীয়ধাপের ট্রায়ালে তিন থেকে পাঁচ হাজার কিংবা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ৫ অক্টোবর দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড এক সংবাদ সম্মেলনে বলছে, সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে গ্লোবের ভ্যাকসিন আসতে পারে। গত ২ জুলাইয়ে সংবাদ সম্মেলন করে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয় গ্লোব। আর ১৫ অক্টোবর কোম্পানিটির তিনটি ভ্যাকসিন বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা তালিকাভুক্ত করেছে।
×