ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সক্ষমতা বাড়বে বিজিবির

সীমান্তে তদারকি জোরদারে ৭৩ আধুনিক বিওপি হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২০ অক্টোবর ২০২০

সীমান্তে তদারকি জোরদারে ৭৩ আধুনিক বিওপি হচ্ছে

ওয়াজেদ হীরা ॥ সীমান্তে অপরাধ, মানবপাচার, মাদকসহ অবৈধ বাণিজ্য ঠেকাতে তদারকি জোরদার করবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এজন্য সীমান্ত এলাকায় আরও ৭৩টি কম্পোজিট আধুনিক বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) নির্মাণ করবে সরকার। এর মাধ্যমে সীমান্তে অপারেশন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিজিবি সদস্যদের সুরক্ষিত অবস্থান নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় অপারেশনে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের জন্য উন্নত বাসস্থানও নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ২৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সীমান্তে অপারেশন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সীমান্ত নিশ্চিত করা এবং সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের সুরক্ষিত অবস্থান নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানানো হয় একনেকের বৈঠকে। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০টি জেলার ৪০টি উপজেলার সীমান্তে এসব বিওপি নির্মাণ করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে এসব বিওপি নির্মাণ শেষ করার কথা রয়েছে। এদিকে, বিওপি নির্মাণের নতুন এই প্রকল্প অনুমোদনের পর বিজিবি সদর দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল, নদী সীমান্তসহ দেশের পুরো সীমান্তের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বিজিবি। প্রধানমন্ত্রী এই বাহিনীর ধারাবাহিক উন্নয়নে বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আরও ৭৩টি নতুন কম্পোজিট বিওপি নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এ জন্য বিজিবি পরিবারের পক্ষ থেকে বিজিবির মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এর আগে সীমান্তে ১৩৪টি বিওপি নির্মিত হয়েছে। নতুন ৭৩টি আধুনিক বিওপি নির্মাণের ফলে সীমান্তে জনবল বৃদ্ধি, বিওপিতে কর্মরত সদস্যদের বাসস্থান সেবা উন্নতকরণ, ভৌত সুবিধা এবং কাঠামোগত নিরাপত্তা জোরদার করা সম্ভব হবে। এতে বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধিসহ সৈনিকদের মনোবলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশের সীমান্ত রক্ষায় যে কতগুলো বিওপি রয়েছে; যা আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, মানবপাচার, অবৈধ বাণিজ্য ইত্যাদি প্রতিরোধে অপ্রতুল। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে বিজিবির অপারেশনাল ও আভিযানিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক কাঠামো জোরদার করা হবে। প্যারামিলিটারি ফোর্স হিসেবে বিজিবির প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা দেয়া। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার পাশাপাশি মানবপাচার, মাদক ও অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই বাহিনীর মূল অভিযানগুলো সাধারণত বিওপি থেকে পরিচালনা করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে বিওপির চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নতুন এই প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় বিজিবির অপারেশনে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের জন্য উন্নত বাসস্থান নির্মাণের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য ও ব্যয় সাধ্য জ্বালানির ব্যবহার, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সীমান্ত এলাকায় নতুন বিওপি নির্মাণ এবং পুরনো বিওপি পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানোই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষা, বর্ডার অবজারভেশন পোস্টের (বিওপি) মাধ্যমে চোরাচালানবিরোধী অপারেশন পরিচালনা, মানবপাচার এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়। এছাড়াও ৭৩টি বিওপি’তে দুই হাজার ২৭৬ জন সৈনিকের সুরক্ষিত বাসস্থান নিশ্চিত হবে এবং অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়বে। সীমান্তের যেসব স্থানে বিওপি নির্মাণ করা হবে ॥ খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা সদর, যশোর জেলার শার্শা, কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর ও ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্তে বিওপি নির্মাণ করা হবে। রাজশাহী বিভাগের চারঘাট, বাঘা, নওগাঁ জেলার ধামইরহাট, পোরশা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ সীমান্তে বিওপি নির্মাণ করা হবে। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, বোদা, দিনাজপুর জেলার দিনাজপুর সদর ও বিরল, ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল, লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি, ভুরুঙ্গামারী ও রৌমারী সীমান্তে বিওপি নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ও মিরেরশ্বরাই, কক্সবাজারের টেকনাফ এবং খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড় সীমান্তে বিওপি নির্মাণ করা হবে। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট, সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও বড়লেখা সীমান্তেও এসব আধুনিক বিওপি নির্মাণ করা হবে।
×