ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশের স্বার্থে সরকার ব্যবসায়ীদের পক্ষে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

দেশের স্বার্থে সরকার ব্যবসায়ীদের পক্ষে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর এ কারণেই করোনার জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি না দিলেও খেলাপি হওয়া থেকে তাদের (ব্যবসায়ীদের) মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বিষয়টি শুধু ব্যাংকগুলোর আয় নয়, অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি খাতের জন্য সারের মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন উৎস থেকে মোট ৮০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের সার আমদানির তিনটি ক্রয় প্রস্তাবসহ মোট ৪টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ৩৩৯ কোটি ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বুধবার সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বছর জুড়েই ঋণ খেলাপি হওয়া ঠেকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি না দিলেও চলবে। কিস্তি না দিলে কেউ ঋণ খেলাপি হবে না। একইভাবে কয়েক দফা এ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তবে এর ফলে দেশের ব্যাংকগুলো ক্ষতিতে পড়ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা করোনার জন্যই বাড়ানো হয়েছে। এখন আমরা মোটামুটিভাবে-সুযোগ দিয়েছি তবে টাকাতো মাফ কওে দেয়নি, টাকা আমরা পাব। কিন্তু সময় বাড়িয়ে দিয়েছি। সময় না বাড়িয়ে এ সময় যদি আমরা বাধা সৃষ্টি করি তাহলে এক্সপোর্ট অর্ডারগুলো (রফতানি আদেশ) বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমরা আমদানি করছি, এখনও এলসিগুলোর নিষ্পত্তি করতে পারবো না। বিভিন্ন জায়গায় বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, যেই মুহূর্তে ঋণটি ক্লাসিফাইড হয়ে যাবে, সেই মুহূর্তে স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। এই মুহূর্তে আমার মনে হয়-এটা করা ঠিক হবে না। করোনাকালে তাদেরকে (ব্যবসায়ীদের) সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকারী ও বেসরকারি উভয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষই বলছে- এ সিদ্ধান্তের ফলে তাদের আয়ের ওপওে প্রভাব ফেলছে। এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি শুধু আয় নয়, অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে করা হয়েছে। এখন কোনো না কোনোভাবে কিছু হলে কেউতো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আমরা এখন বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবসায়ীদের পক্ষে আছি। আমি মনে করি-ব্যবসায়ীরা যদি ভালো থাকে ব্যাংকগুলোও ভালো থাকবে। তিনি আরও বলেন, গুবছর প্রত্যেকটি ব্যাংকই ভালো করেছে, তাদেরকে ধন্যবাদ। প্রত্যেকের ব্যালেন্স সিট অনেক ভালো। খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমের দিকে। আমি মনে করি যে, এটাই সময় তাদের ক্লায়েন্টদের সাহায্য করার জন্য। ক্লায়েন্টগুলো তাদের (ব্যাংকের), সরকারের না। ক্লায়েন্ট কোনোভাবে উপকৃত হলে দিনের শেষে লাভবান হবে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকতো তাদেও কোনো কাস্টমারকে খেলাপি ঘোষণা করে কষ্ট দিচ্ছে না। সুতরাং তাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। প্রসঙ্গত, গত সোমবার ২৮ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি না দিলেও কোনো ব্যবসায়ীকে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করা যাবে না। আবার এই সময়ে ঋণের ওপর কোনো ধরনের দন্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি আরোপও করা যাবে না। তবে যদি কেউ ঋণ শোধ করে নিয়মিত গ্রাহক হন, তাকে খেলাপি গ্রাহকের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার এই সুযোগ বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সময়ে কেউ কিস্তি শোধ দিলে ওই গ্রাহককে সুদ ছাড় দিতে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চার ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন ॥ দেশের কৃষি খাতের জন্য সারের মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন উৎস থেকে মোট ৮০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের সার আমদানির তিনটি ক্রয় প্রস্তাবসহ মোট ৪টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ৩৩৯ কোটি ২৮ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা। বুধবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য,মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আজিমপুরে বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবনের একটি ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এতে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি ২৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরানী কন্সট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে চুক্তিবদ্ধ ৫.৫০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মধ্যে ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ৭৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন,২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে সৌদি বেসিক ইন্ডাষ্ট্রিজ করপোরেশন (সাবিক) থেকে ১ম লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এছাড়াও সভায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব থেকে ১ম লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৭ কোটি ২৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তিনি বলেন,‘ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুরিয়া জাতীয় মহাসড়ক কুষ্টিয়া শহরাংশ ৪-লেনে উন্নীতকরনসহ অবশিষ্টংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’শীর্ষক প্রকল্পের টেন্ডার কাজের ক্রয় প্রস্তাব পুন:প্রক্রিয়াকরণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরআগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়কের দুইপাশে সার্ভিস লাইনসহ ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়কটি এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন,পাবলিক প্রাইভেট পার্টনাশীপ (পিপিপি) এর আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জি-টু-জি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে মোট ৩ হাজার ৩৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
×