ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এ পর্যন্ত ৭ জন গ্রেফতার ৩ জন রিমান্ডে বিক্ষোভ, সমাবেশ

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

এ পর্যন্ত ৭ জন গ্রেফতার ৩ জন রিমান্ডে বিক্ষোভ, সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলামকে সোমবার ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে সোমবারও নগরীতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্ষণ ঘটনার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে নানান অপকর্মের সংবাদ বেরিয়ে আসছে। বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সোমবার বেলা ১১টা থেকে আদালত এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশী পাহারার প্রিজনভ্যানে করে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে সাইফুর রহমান ও অর্জুনকে আদালতে নেয়া হয়। আদালতে গ্রেফতারকৃত সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্করকে হাজির করে ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ওসি ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ৪নং আসামি রবিউল ইসলামকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ধর্ষণের ঘটনায় রাজন মিয়া ও মোঃ আইনুদ্দিনকে রবিবার মধ্যরাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সোমবার দুপুরে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে প্রেরিত এক বার্তায় রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিনকে গ্রেফতারের তথ্য জানানো হয়েছে। শুক্রবার এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় শনিবার নির্যাতিতার স্বামী নগরের শাহপরাণ থানায় যে মামলা করেন তাতে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। যাদের নাম উল্লেখ করা হয় তাদের মধ্যে রাজন ও আইনুদ্দিনের নাম ছিল না। তবে ধর্ষণের পর থেকেই আলোচিত হতে থাকে এ দুজনের নাম। সোমবার মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান আদালতেও এই দুজনের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল রবিবার মধ্যরাতে ফেঞ্চুগঞ্জের কচুয়া নয়াটিলা এলাকা তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রাজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকা থেকে আরেক আসামী মাহফুজুর রহমান মাসুমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হলো। ছাত্রলীগ নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে ৪ জনকে গ্রেফতার ॥ সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে নববধূ ধর্ষণের বর্বর ঘটনার পর দুই রাত ও একদিন পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিলেন মামলার এজাহারনামীয় ছয় আসামি। এর ঠিক পরবর্তী মাত্র ১৬ ঘণ্টায় ধরা পড়েন এজাহারনামীয় পাঁচ আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে চার আসামির অবস্থান শনাক্ত হয়। এরপর কয়েকটি ঝটিকা অভিযানে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গত শুক্রবার ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাতেই জানাজানি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার সকালে এ ঘটনায় মামলা হয়। শনিবার সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত- এই তিন ঘণ্টায় এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোন নম্বরে অসংখ্যবার কল আসে। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ তার মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে। অতপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত হয়। পরে একে একে ধরা পড়েন এজাহারভুক্ত চার আসামি। রবিবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় আসামি রবিউল হাসানকে (২৮)। রাতেই তাকে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনা, গোয়েন্দা ও পুলিশ বিভাগের সমন্বিত অভিযানে রবিউলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রাত নয়টা থেকে ১০টার মধ্যে শনাক্ত করা স্থান থেকে রবিউল গ্রেফতার হয়। রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের জগদল গ্রামে। গ্রেফতার এড়াতে সে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কাজীগঞ্জ বাজারের নিজআগনা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল। হবিগঞ্জে রবিউলকে ধরার প্রায় আধা ঘণ্টা আগে র‌্যাব-৯ আরেক অভিযানে জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনিকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়া গ্রামে। এর আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল পলাতক আরেক আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করে। অর্জুনকে গ্রেফতার করার আগে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেফতার হয় প্রধান আসামি সাইফুর রহমান। খেয়াঘাট থেকে দোয়ারাবাজার যাওয়ার পথে গ্রেফতার হয়। এদিকে যে ছাত্রলীগ নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে চার আসামিকে ধরা হয় সে ছাত্রলীগ নেতাই টিলাগড় ও এমসি কলেজ এলাকায় অভিযুক্তদের শেল্টার দিতেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। ওই ছাত্রলীগ নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই রবিউল-সাইফুররা অত্র এলাকায় নৈরাজ্য আর অরাজকতা চালাত বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ‘জানোয়ার, জানোয়ার’ বলে স্লোগান ॥ সোমবার বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটে কড়া পুলিশ প্রহরায় প্রিজনভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসা হয় সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে। এর মধ্যে সাইফুর প্রধান আসামি। আদালতে হাজির করার আগেই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সাইফুর ও অর্জুনকে আদালত চত্বরে হাজির করার পর পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষোভ করেন উপস্থিত জনতা। এই দুই আসামিকে নিয়ে আসার পর আদালতে চত্বরে বেশ কিছু লোক জড়ো হন। তারা দুই আসামিকে দেখা মাত্রই ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান শুরু করেন। ‘জানোয়ার, জানোয়ার’ বলেও স্লোগান দিতে দেখা যায় অনেককে। কেউ কেউ ‘মার, মার’ বলেও হাঁক দেন। আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি কোন আইনজীবী ॥ কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি কোন আইনজীবী। সোমবার সকালে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান এবং আরেক আসামি অর্জুন লস্কর এবং দুপুরে রবিউল ইসলামকে সিলেট মহানগর হাকিম-২ আদালতে হাজির করা হলে আসামিপক্ষে কোন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি। আদালত সূত্রে জানা যায়, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বক্তব্য প্রদান করে এবং আসামিরা নিজেরাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। তিন আসামিই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলে জানা গেছে। সিলেট আদালতের আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন বলেন, ‘এটি একটি জঘন্যতম কর্মকা- যা সমাজের মানুষকে নাড়া দিয়েছে এবং সমাজের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আর তাই ব্যক্তিগত নৈতিক অবস্থান থেকেই কোন আইনজীবী আসামি পক্ষে দাঁড়াননি এবং তাদের জামিনে কেউ আবেদন করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এটিএম ফয়েজ বলেন, ‘আইনজীবীদের এ সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত। ঘৃণা প্রকাশের জন্যেই স্বপ্রণোদিত হয়েই কোন আইনজীবী আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে যাননি।’ রিমান্ড শুনানিকালে আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করের পক্ষে কোন আইনজীবী উকালত নামা আদালতে দাখিল করেননি। শুনানিকালে আদালতের বিচারক সাইফুর ও অর্জুনের পক্ষে কোন আইনজীবী না পেয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা দুজন আদালতকে জানায়, ছাত্রাবাসের ঘটনার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। আমরা কোন অপরাধ করিনি। এই ঘটনা ঘটিয়েছে রাজন, তারেক ও আইনুদ্দিন। তাদের বক্তব্য শুনার পর পরই আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাদী পক্ষের হয়ে শুনানিতে অংশ নেয়া এ্যাডভোকেট ইফতেখার আলম শোয়েব বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ২ আসামির বিরুদ্ধে। এ সময় আদালতের এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী কয়েক পুলিশের রিমান্ড আবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করে আদালতে যুক্তি দেখান। পরে আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রবিউলের অপকর্ম ॥ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি রবিউল হাসান ও তার সঙ্গীরা সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াত। আদাব সালাম না দিলে শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহত করত রবিউল। শুধু তাই নয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা পেলেই নারী শিক্ষার্থীদের ওড়না ধরে টান মারা, মদ-জোয়া, ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, বিনা কারণে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, হোস্টেলে জোরপূর্বক বসবাস, মিল না দিয়ে বন্ধুবান্ধবসহ খাওয়া, হোস্টেলের সিট বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল রবিউল। জানা যায় রবিউল ও তার সহযোগীরা টিলাগড়সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা আদায়, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই ধরে নিয়ে মারধর করা হতো এবং এমনকি হত্যার হুমকিও দেয়া হতো। সাইফুর রহমান ও রণি ক্যাম্পাসে মূর্তিমান আতঙ্ক ॥ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমান ও শেখ মাহবুবুর রহমান রণি ক্যাম্পাসে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজ দলের কর্মী ও কলেজের পাশর্^বর্তী টিলাগড় এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে ত্রাস ছিল তারা। সাইফুর ও রণির ইভটিজিং ও নির্যাতনের শিকার হয়ে কলেজ ছেড়েছেন অনেক ছাত্রী। ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কলেজে বেড়াতে আসা তরুণীদের ধর্ষণ ছিল তাদের নৈমিত্তিক কাজ। ক্যাম্পাসে আধিপত্য থাকায় দলের ‘বড় ভাই’দের কাছেও বিশেষ কদর ছিল তাদের। আর নির্যাতনের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পেতেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণধর্ষণের ঘটনার পর ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে সাইফুর-রণি ও তাদের সহযোগীদের নানা অপকর্মের কাহিনী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যরে কারণে প্রতিদিন বিকেলে শত শত তরুণ-তরুণী বেড়াতে আসেন ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে। অনেকে অনেকে ঘুরতে ঘুরতে ক্যাম্পাসের নির্জন এলাকায় চলে যান। এ রকম জায়গায় কোন দম্পতি বা প্রেমিকজুটিকে পেলে সাইফুর ও রণি তাদের সহযোগীদের নিয়ে চড়াও হতো। আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করত তারা। ছিনতাই করতে গিয়ে ছুরি কাঘাতেরও ঘটনা ঘটেছে বহুবার। সন্ধ্যার পর বা রাতে ক্যাম্পাসে প্রেমিকজুগল পেলে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাইফুর-রণি চক্র তাদের তুলে নিত পাশর্^বর্তী ছাত্রাবাসে। সেখানে নিয়ে ধর্ষণ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়া হতো। আত্মসম্মানের ভয়ে কেউই মুখ খুলতেন না। রাতে টিলাগড়-বালুচর সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজনকে ছাত্রাবাসে ধরে এনে নির্যাতন ও ছিনতাই করত তারা। এসব অপকর্মে সাইফুর ও রণির সহযোগী ছিল গণধর্ষণ মামলার আসামি অপর চার ছাত্রলীগ ক্যাডার তারেক, রবিউল, মাহফুজ ও অর্জুনসহ আর কয়েকজন। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসকে কেন্দ্র করে সাইফুর ও রণি তাদের টর্চার সেল গড়ে তুলে। হোস্টেল সুপারের বাংলো দখল করে থাকত সাইফুর। ভয়ে অন্যত্র থাকতেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। হোস্টেলের নতুন ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষ ও বাংলোতে সাইফুরের নেতৃত্বে বসানো হয় ‘শিলং তীর জুয়া’র আসর। এছাড়া প্রতিদিন রাতে বসত মাদকের আসর। করোনা পরিস্থিতির কারণে হোস্টেল বন্ধ থাকায় নিজের দখলে থাকা হোস্টেলের রুমকে মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার আখড়ায় পরিণত করে সাইফুর। গণধর্ষণের ঘটনার পর শুক্রবার রাতে সাইফুরের দখলে থাকা হোস্টেলের ২০৫ নম্বর রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাও হয়েছে। ২০১৩ সালে কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় চাঁদাবাজি শুরু করে সাইফুর ও তার সহযোগীরা। এতে বাধা দেয়ায় নিজ দলের কর্মী ছদরুল ইসলামের বুকে ছুরিকাঘাত করে সাইফুর। গুরুতর আহত ছদরুলকে সিলেট থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। পরে নেতাদের চাপে ছদরুল বাধ্য হয় মামলা আপোস করে। সূত্র জানায়, কলেজে মেয়েদের প্রেমের প্রস্তাব দিত রণি। জোর করে সে ছাত্রীদের মোবাইল নাম্বার নিত। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে সে প্রকাশ্যে তাদের লাঞ্ছিত করত। রণির নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক ছাত্রী কলেজ ছেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রায় আড়াই বছর আগে ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে রণি। কিন্তু দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় সে। শাহ রণি ও তার সহযোগী ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি তারেক নিজেদের র‌্যাব-পুলিশ পরিচয় দিত বলেও অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাস্তা থেকে লোকজন অপহরণ করে ছাত্রাবাসে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া সাইফুর ও রণি চক্রের হাতে ক্যাম্পাসে একাধিকবার সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে।
×