ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় পাঠক নেই বরিশাল বিভাগীয় সরকারী গণগ্রন্থাগারে

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনায় পাঠক নেই বরিশাল বিভাগীয় সরকারী গণগ্রন্থাগারে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ “চলো গ্রন্থাগারে চলো-দেখি সম্ভনার আলো” এ আদর্শ শিক্ষার আলোর বাণী নিয়ে পথচলা বরিশাল বিভাগীয় সরকারী গণগ্রন্থাগার ভবনটি করোনায় পাঠকশূন্য হয়ে পরেছে। করোনার শুরু থেকে অদ্যবর্ধি বুক সেলেই সাজানো রয়েছে নামকরা লেখকদের শিক্ষা অর্জনের আলোকিত বই। পাশাপাশি গণগ্রন্থাগারের চেয়ারগুলো সাজানো রয়েছে টেবিলের ওপর, ব্যবহার না করায় কম্পিউটারগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসবাবপত্র পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতার মধ্যদিয়ে একজন কর্মকর্তা, কয়েকজন কর্মচারী প্রতিদিন কর্মস্থলে হাজিরা দিয়ে সরকারী চাকরি নিয়ম বিধান মেনে গণগ্রন্থাগারে অলস সময় পার করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, এক কক্ষের সু-বিশাল বুক সেলগুলোতে সাজানো রয়েছে নাম করা লেখকের গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশ-বিদেশের বই। অপরকক্ষে রয়েছে শিশুদের জন্য গল্প, কবিতা ও জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান ভিত্তিক মেধা বিকাশের কোডিং ট্রয় ব্রিজ খেলার সরঞ্জাম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার ফাইল, রবি কোম্পানীর সহযোগিতায় ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার ক্লাস রুম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থাপিত হওয়ার পর থেকে গত ১৪ বছরের এ সরকারী গণগ্রন্থাগার লাইব্রেরীতে বিভিন্ন সময়ে জমা হয়েছে ৮০ হাজার ১৩টি বই। তবে যেভাবে বই লাইব্রেরীতে জমা হয়েছে, সেহারে বই পড়ার পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। সূত্রমতে, বর্তমানে এ গণগ্রন্থাগারে যেসব পাঠক আসছেন তারা সবাই বিভিন্ন পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁজেই চলে যাচ্ছেন। করোনার আগে শুধুমাত্র এই লাইব্রেরী ভবনটি আনন্দ ফুর্তিতে খেলাধুলার মাধ্যমে মাতিয়ে রাখতো শিশু সদস্যরা। সচেতন বরিশালবাসীর মতে, এখানে পর্যাপ্ত বই থাকা সত্বেও শুধুমাত্র প্রচার-প্রচারনার অভাবে এখনও বই প্রেমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নগরীর বিএম কলেজের বিপরিতে তিনতলা বিশিষ্ট সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে পাঠকদের জন্য বই আনা হলেও কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়া তেমন কোন পাঠক বৃদ্ধি পায়নি। গণগ্রন্থগারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, করোনার আগে এখানে ৮০ হাজার ১৩টি বইসহ শিশুদের খেলার সরঞ্জামের কারনে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্নস্তরের পাঁচশ’ পাঠকের উপস্থিতি ছিলো। করোনার পর তার ক্রমেই কমে আসছে। বর্তমানে বই প্রেমিক পাঠক নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় সরকারী গণগ্রন্থাগারের সহকারি পরিচালক খালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ভিতরের সবকিছুই ঠিকঠাক থাকলেও আমাদের ভবনের বাহিরটা দেখতে জরাজীর্ণতার মতো। ফলে অনেক পাঠকরাই ঝুঁকির কথা ভেবে ভবনের মধ্যে প্রবেশ করতে চাননা। তাই ভবনের বাহিরে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে গণপূর্ত দফতরের সাথে আলোচনা হয়েছে। খুবশীঘ্রই তারা কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এখানে বই পড়ার জন্য অত্যন্ত নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ রয়েছে। আমরা তিন সিফর্টে কেরিয়ার গাইড সেশন, বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেয়াসহ সকল পাঠকের সাথে মতবিনিময় করে থাকি। অন্যদিকে আমরা এখানে শিশুদের জন্য সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান রেফারেন্স পাঠক তৈরী করার কাজ করে যাচ্ছি। গড়ে প্রতিদিন ৮০ জন শিশুর উপস্থিতি রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বরিশাল গণগ্রন্থাগারের প্রচার-প্রচারনা একটু কম থাকার কথা স্বীকার করে সহকারী পরিচালক বলেন, সরকারীভাবে গণগ্রন্থাগার খোলার পর প্রচার-প্রচারনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। গণগ্রন্থাগারে সহকারী পরিচালক, হিসাব রক্ষক ও বুক সাটারের পদগুলো শুন্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ১৫ জন জনবল নিয়ে বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারটি পরিচালিত হচ্ছে।
×