ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ দলে চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট

এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভাতিজির প্রতারণার মামলা

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভাতিজির প্রতারণার মামলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নির্বাচনী জরিপে অনেকটা পিছিয়ে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নানামুখী চাপ সামাল দিতে হচ্ছে। সর্বশেষ নিজ ভাতিজির প্রতারণার মামলার শিকার হয়েছেন তিনি। উত্তরাধিকার সূত্রে কয়েক কোটি ডলার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার ভাতিজি ম্যারি ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক রাজ্য আদালতে এ মামলা করা হয়। মামলায় ট্রাম্প ছাড়াও তার বোন ম্যারিয়েন ট্রাম্প বেরি ও ভাই রবার্ট ট্রাম্পকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। খবর বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমসম ও সিএনএন অনলাইনের। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, দাদা ফ্রেড ট্রাম্পের সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছেন ট্রাম্প ও অন্যান্য আসামিরা। এর জন্য ম্যারিকে সম্পত্তি থেকে দখলচ্যুত করতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন তারা। ম্যারি বলেন, প্রতারণা শুধু পারিবারিক ব্যবসাই নয়, এটা তাদের জীবনের অবলম্বন’। ম্যারি ট্রাম্প অবশ্য কিছু অভিযোগ সম্প্রতি প্রকাশিত ‘টু মাচ এ্যান্ড নেভার ইনাফ : হাউ মাই ফ্যামিলি ক্রিয়েটেড দ্য ওয়ার্ল্ডদস মোস্ট ডেঞ্জারাস ম্যান’ বইতে উল্লেখ করেছেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জরিপে পিছিয়ে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা মন্তব্য করে নিজ দলে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পরেছেন। পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ইঙ্গিত দিয়ে নিজ দলের সিনেটরদের কাছেই সমালোচনা শিকার হয়েছেন। কারণ রিপাবলিকান নেতৃত্ব ট্রাম্পের কথার উল্টো পথে হেঁটেছে। পরাজিত হলে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ইঙ্গিতের প্রেক্ষিতে মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককোনেল মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা ম্যাককোনেলের এ বক্তব্য এমন সময় প্রকাশ হল যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গেলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।আগামী নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা; বুধবার সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনে হারলে সহজে ক্ষমতা না ছাড়ারই আভাস দিলেন তিনি। তবে বিষয়টি ভালভাবে নেননি তাদের দলের সিনেটর। তেমনটিই আভাস পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা ম্যাককোনেলের কথায়। তিনি বলেন, আগামী ৩ নবেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে বিজয়ী হয় সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পরবর্তী প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার টুইটারে ম্যাককোনেল বলেন, ৩ নবেম্বরের নির্বাচনে জয়ী প্রার্থী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। নির্বাচনে হারলে বা ড্র করলে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেবেন কিনা এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন আমাদের দেখতে হবে কী ঘটে। সেটা আপনারা জানেন। ডাকযোগে ভোটের ব্যাপারে আবার সন্দেহের কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনী ফল সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে বলেই তিনি মনে করেন। করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যই এবার ডাকযোগে ভোট অনুষ্ঠানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ট্রাম্প শুরু থেকেই এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করে আসছেন। একে ‘ব্যালট’ নামে অভিহিত করে ট্রাম্প বলেন ‘ব্যালট নিয়ে আমি জোরগলায় অভিযোগ জানিয়ে আসছি, এগুলো বিপর্যয়কর’। ডাকযোগের ব্যালট বাদ দিলে সবই শান্তিপূর্ণ হতে পারে উল্লেখ করেন ট্রাম্প বলেন, সেক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনই পড়বে না। পরাজিত হলে আগে দেখতে হবে আসলে কী ঘটেছে। ১৭৯২ সাল থেকে যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হচ্ছে এবারও সেভাবেই হবে। রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্যে ট্রাম্প ঘনিষ্ট সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও একইভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গ্রাহাম বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি ক্ষমতা হস্তান্তর শান্তিপূর্ণ হবে’। তবে তিনিও বলেছেন, সিদ্ধান্ত হয়ত সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। গ্রাহাম বলেন, রিপাবলিকানরা হেরে গেলে আমরা ফল মেনে নেব। যদি সুপ্রীম কোর্ট জো বাইডেনের পক্ষে রায় দেন আমি তা মেনে নেব। সিনেটর মিট রমনি ট্রাম্পের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান মেনে চলবেন না এমনটি মনে করা অচিন্তনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি ভোট ডাকযোগে দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আপনারা জানেন আমি শক্তভাবেই ডাকযোগেই ভোট নিয়ে অভিযোগ করেছি। এই প্রক্রিয়া দুর্যোগপূর্ণ। তার ভাষ্য, মহামারীর সময় ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে তিনি বিশ্বাস করেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের কোন দরকার হতো না। ডাকযোগের ব্যালট না থাকলে সবই শান্তিপূর্ণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজন হবে না। এদিকে নির্বাচনের সামনে সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, জাতীয়ভাবে জো বাইডেন এখনও সুবিধাজনক অবস্থায় এগিয়ে আছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতেও দুই প্রার্থীর অবস্থান খুব কাছাকাছি। এর ফলে এবারের নির্বাচনের ফলাফল হাড্ডাহাড্ডি হবে এবং ডাকযোগে ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্পের মন্তব্যের ব্যাপারে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন প্রশ্ন তুলে বলেন,‘আমরা কোন দেশে আছি?’ ‘দেখুন, তিনি অত্যন্ত অযৌক্তিক বিষয় বলেছেন। আমি জানিনা তিনি কি বলতে চেয়েছেন। তেমনটা হলে সামরিক বাহিনী ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে সরিয়ে দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জো বাইডেন। তবে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেইলি ম্যাকএনানি বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ফল ট্রাম্প মেনে নেবেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। ট্রাম্প তা না করলে, বা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ফল মেনে না নিলে দেশটি সাংবিধানিকভাবে বিপদে পড়ে যেতে পারে।
×